উদ্বোধনের ৮ বছর পরও অব্যবহৃত চট্টগ্রামের প্রথম মাল্টিলেভেল স্বয়ংক্রিয় পার্কিং

যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় শহরের প্রথম মাল্টিলেভেল স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল কার পার্কিং চালু করেছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। উদ্বোধনের পর থেকে তা অব্যবহৃত অবস্থায়ই রয়ে গেছে।
জাপান, জার্মানি ও চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় নির্মিত এই সাত তলা বিশিষ্ট ভবনটির নির্মাণে খরচ হয়েছে ৪ কোটি টাকা। ট্রে-ভিত্তিক পদ্ধতিতে এখানে ২৯টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
চালকরা পার্কিংটিকে 'ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ' মনে করে কেউ সেখানে গাড়ি রাখতে আগ্রহী নন। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে প্রযুক্তিগত কোনো ত্রুটি হলে তাদের গাড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ফলস্বরূপ, যাত্রীরা পার্কিং সুবিধাটি ব্যবহার না করায় নিউ মার্কেটের সামনের সড়কে বেআইনি পার্কিং অব্যাহত রয়েছে, যা এলাকায় স্থায়ী যানজট বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
স্বয়ংক্রিয় পার্কিং ব্যবস্থায় গাড়িগুলো ট্রেতে রাখা হতো, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তলায় ঘুরে চলত। প্রতি ঘণ্টা পার্কিংয়ের জন্য চার্জ ছিল ২০ টাকা। এটি কার্ড-ভিত্তিক সিস্টেম হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ সিস্টেমটি বাস্তবায়ন করতে না পারায় নগদ অর্থ নেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রথম ছয় তলায় প্রতিটি তলায় পাঁচটি ট্রে রয়েছে, যার মধ্যে একটি ট্রে গাড়ি চলাচলের জন্য খালি রাখা হয়। সপ্তম তলায় পাঁচটি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে, ফলে মোট ধারণক্ষমতা ২৯টি গাড়ি।
তবে, পরিকল্পনা অনুযায়ী সিস্টেমটি কখনোই কার্যকর হয়নি, কারণ মানুষ এটি ব্যবহার এড়িয়ে চলেছে। সময়ের সাথে দক্ষ অপারেটর এবং যন্ত্রপাতির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই পার্কিং ভবন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
ফোরাম ফর প্ল্যানড চিটাগাংয়ের সহ-সভাপতি সুবাশ বড়ুয়া এই প্রকল্পের সমালোচনা করে বলেন, 'এই কোটি কোটি টাকার প্রকল্পগুলোর কোনো ফিজিবিল্যাটি স্টাডি নেই। এগুলো জনগণের করের টাকা। তারা ইচ্ছেমতো অর্থ অপচয় করবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের এমনভাবে অর্থ অপচয় করার অধিকার নেই। সবার উচিত এসব বিষয়ে কথা বলা, আওয়াজ তোলা।'
তিনি আরও অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সব প্রকল্পই ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, 'তাদের নিজেদের ঠিকাদার থাকে। টাকা তাদের লোকজনের পকেটে চলে যায়। রেট নিয়ে নয় ছয় করে। শুধু এখানে না দেশের প্রায় সব প্রকল্পে সেক্রেটারি থেকে নিচের লেভেল পর্যন্ত একটি দুষ্টুচক্র কাজ করে এদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।'
যোগাযোগ করলে, সিডিএ'র চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'নিউ মার্কেট এলাকায় অনেক সমস্যা রয়েছে, যার মধ্যে গাড়ি পার্কিং, এসকেলেটর এবং দোকানের বিষয়ও আছে। গাড়ি পার্কিং ঠিক করা সম্ভব। এটি ধীরে ধীরে করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'সিডিএ'র তহবিলের অবস্থা খুব খারাপ। পূর্ববর্তী সরকার কর্তৃপক্ষকে দেউলিয়া করে গেছে। আমরা মার্কেট কমিটির সঙ্গে বসেছি। প্রথমে এসকেলেটরগুলো ঠিক করব। তারপর ধীরে ধীরে বাকি কাজ শুরু করব।'