মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন গ্রামে সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আজ ঈদুল আজহা উদযাপন

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ শুক্রবার (৬ জুন) বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর ও সিরাজদিখান উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামে ঈদ উদযাপন করা হয়েছে।
সকাল ৯টায় সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের উত্তরকান্দি মাঝিবাড়ি জাহাগিরিয়া ঈদগাহ মাঠে প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্থানীয় ইমাম বাচ্চু মুনশি নামাজ পরিচালনা করেন।
সকাল থেকেই সব বয়সের মানুষ ঈদগাহে সমবেত হন এবং নামাজ শেষে একে অপরকে আলিঙ্গন করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
স্থানীয়রা জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনের এই রীতি মুন্সিগঞ্জে শত বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে। এই প্রথা অনুসরণকারীরা নিজেদের কাদিয়ান ও জাহাগিরিয়া তরিকার অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন।
শিলই ছাড়াও; সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের আনন্দপুর, আধারা ইউনিয়নের মিজিকান্দি এবং সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর এলাকায়ও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, ভাঙ্গা ও সদর উপজেলার ১২টি গ্রামে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে।

বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রূপাপাত ইউনিয়নে সকাল ৯টা, সাড়ে ৯টা ও ১০টায় চারটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, আলফাডাঙ্গা, ভাঙ্গা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মির্জাখিল শরীফের অনুসারীরা সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে ঈদ উদযাপন করে থাকেন। ফরিদপুরের কিছু গ্রামবাসী এই রীতি অনুসরণ করে ঈদ উদযাপন করেছেন।
মাঠ পর্যায়ে দেখা গেছে, বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের রাখালতলী ঈদগাহে সকাল ৯টায়, মৈতকুমরা জামে মসজিদে সাড়ে ৮টায়, মৈতকুমরা লস্করবাড়ি জামে মসজিদে সাড়ে ৯টায় এবং সাহাসরাইল দায়রা শরীফে সকাল ১০টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে অনেকেই কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালী ইউনিয়নের বাউখোলা পূর্বপাড়া জামে মসজিদে সকালে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মাওলানা মোহাব্বত আলী নামাজ পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, 'আমরা বহু বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছি।'
মুসুল্লিরা আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, 'আমরা ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি। আশা করি, একদিন সারা বিশ্বের মানুষ একই দিনে ঈদ উদযাপন করতে পারবে।'
নামাজ শেষে কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। একই উপজেলার ভরুখালী এলাকায়ও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

যদিও বাংলাদেশে আগামীকাল (৭ জুন) ঈদুল আজহা উদযাপিত হওয়ার কথা, তবে চট্টগ্রামের প্রায় ৬০টি গ্রামের মানুষ আজ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন।
সাতকানিয়ার মির্জাখিল দরবার শরীফ এবং চন্দনাইশের জাহাগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারীরা আজ ঈদ উদযাপন করছেন। এই ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলি সৌদি আরবে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রমজান, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে থাকেন।
এই রীতি প্রায় ২০০ বছর আগে সুফি সাধক মাওলানা মোখলেছুর রহমান (রহ.) এই অঞ্চলে প্রবর্তন করেন। তার অনুসারীরা এখনও তার শিক্ষার অনুসরণ করে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন।
দরবার শরীফের স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানান, আজকের ঈদ উদযাপনের অংশ হিসেবে ঈদের নামাজ ও কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি, বান্দরবানের আলীকদম, কক্সবাজারের টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া, এবং নোয়াখালী, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, খুলনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার অনুসারীরাও আজ ঈদ উদযাপন করছেন।