জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে আপিল বিভাগের নির্দেশ, প্রতীক নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে ইসি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। একইসাথে দলটির নিবন্ধন পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই রায়ের ফলে জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশ নিতে আর কোনো আইনি বাধা থাকছে না।
রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
তবে, আপিল বিভাগ আরও জানিয়েছেন যে জামায়াতে ইসলামী দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে, ১৪ মে চতুর্থ দিনের শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১ জুন দিন ধার্য করা হয়। আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। এরপর ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ ব্যক্তি দলটির নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও নির্বাচন কমিশনকে বিবাদী করা হয়।
২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। জামায়াত পরে একাধিকবার গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় এবং দলের নাম পরিবর্তন করে 'বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী' রাখে।
হাইকোর্টের রায় ও আপিল
২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ জামায়াতের নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়, নিবন্ধন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। আপিল করার অনুমোদন দেওয়া হলেও একই বছরের ৫ আগস্ট চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী জামায়াতের স্থগিতাদেশ আবেদন খারিজ করেন। ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর জামায়াত আপিল করে।
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেয়। সেদিন রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন তানিয়া আমীর ও আহসানুল করীম। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান, যিনি জানান, সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর অসুবিধা ও আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের অনুপস্থিতিতে ছয় সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছিল। আদালত আইনজীবীরা উপস্থিত না থাকায় মামলা খারিজ করে দেন।
আপিল পুনরুজ্জীবন
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার পুনর্নির্বাচিত হয়। জুলাই থেকে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, যা সরকার পতনের দাবিতে রূপ নেয়। এরপর ১ আগস্ট সরকার জামায়াতসহ তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর সেই আদেশ বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ২৮ আগস্ট নিষিদ্ধ আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
জামায়াত এরপর আপিল বিভাগে নিবন্ধন মামলাটি পুনরুজ্জীবনের আবেদন করে। ২২ অক্টোবর বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি পুনরুজ্জীবন করা হয়। শুনানি শুরু হয় ৩ ডিসেম্বর এবং শেষ হয় ১৪ মে।
শেষ পর্যন্ত ১ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জামায়াতের নিবন্ধন বৈধ ঘোষণা করে এবং নির্বাচন কমিশনকে নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়।