চট্টগ্রামে আজহারুলের মুক্তির প্রতিবাদ সমাবেশে বাম ছাত্র সংগঠন ও ‘শাহবাগ বিরোধী’দের সংঘর্ষে আহত ১৫

চট্টগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের যুদ্ধাপরাধ মামলায় খালাস এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাম ছাত্র সংগঠনের ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ (২৮ মে) বিকেল ৩টার দিকে জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশ চলাকালীনই প্রতিপক্ষ দল 'শাহবাগ বিরোধী ঐক্য'র কর্মীরা পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন কর্মী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশ চলাকালীন শাহবাগ বিরোধী ঐক্যের কর্মীরা পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হলে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করলেও একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি, ধাওয়া ও হাতাহাতিতে রূপ নেয়। ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ফলে বেশ কয়েকজন আহত হন।
গুরুতর আহত তিনজন হলেন- সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (চট্টগ্রাম নগর) সভাপতি ঋপা মজুমদার, ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত বিশ্বাস শিকু এবং অর্থ সম্পাদক সুদীপ্ত গুহ। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঋপা ও শ্রীকান্তের মাথায় আঘাত লেগেছে।
প্রাথমিক সংঘর্ষের পর গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট চেরাগি মোড়ের দিকে অগ্রসর হলে শাহবাগ বিরোধী ঐক্যের সদস্যরা আবারও তাদের ধাওয়া দেয়, ফলে পুনরায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ঘটনাস্থল ছাড়লেও শাহবাগ বিরোধী ঐক্যের কর্মীরা প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয় এবং স্লোগান দিতে থাকে। তারা পণ্ড হওয়া সমাবেশের একটি ব্যানার পুড়িয়ে দেয়।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সহসভাপতি (চট্টগ্রাম নগর) পুষ্পিতা নাথ বলেন, 'একজন যুদ্ধাপরাধীর খালাস এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হামলার প্রতিবাদে আমরা সমাবেশ ডেকেছিলাম। সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই অনলাইনে হুমকি আসছিল। আজ হঠাৎ করে আমাদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী নেত্রীও রয়েছেন।'
অন্যদিকে, শাহবাগ বিরোধী ঐক্যের মিত্র সংগঠন জুলাই ঐক্য মঞ্চের চট্টগ্রাম সমন্বয়ক আব্রার হাসান রিয়াদ বলেন, 'শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে এরা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রেখেছিল। এর ফলে তিনি [শেখ হাসিনা] গুম, খুন ও ভোট কারচুপির মাধ্যমে টানা ১৬ বছর শাসন করতে পেরেছেন। এখন ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে—এ অবস্থায় তারা আবার ষড়যন্ত্র করছে। 'জুলাইয়ের চেতনা' ধারণ না করলে, আজকের মতোই তাদের প্রতিরোধ করা হবে।'
চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম জানান, 'দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। হালকা ধাক্কাধাক্কি হয় এবং দুজন আহত হয়। তবে পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।'
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করছে বলে জানা যায়।