নগর ভবনে তালা: সচিবালয়ের পুড়ে যাওয়া ভবনে অফিস করছেন কর্মকর্তারা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সব ফটকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা তালা দেওয়ায় রোববার (১৮ মে) কার্যত অচল হয়ে পড়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের দাপ্তরিক কার্যক্রম। পরে বাধ্য হয়ে সচিবালয়ের পুড়ে যাওয়া ৭ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় গাদাগাদি করে অফিস করতে হয়েছে বিভাগের কর্মকর্তাদের।
এদিন দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের সিঁড়ির পাশে একটি কক্ষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে কর্মকর্তারা জানান, তিনি সেখানে বেশিক্ষণ ছিলেন না।
একই তলার ১০৪ নম্বর কক্ষে বসেন সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। তার একান্ত সচিব মো. আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার পাশের রুমে বসে ফাইল দেখে সচিবের কক্ষে পাঠাচ্ছিলেন। জরুরি ফাইলগুলোই কেবল সচিবের কাছে পৌঁছানো হচ্ছিল। সেখানে আরও তিনজন কর্মকর্তা একই কক্ষে কাজ করছিলেন।
সচিবের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তার দপ্তর থেকে জানানো হয়, তিনি ব্যস্ত আছেন। দেখা করার পরামর্শ দেওয়া হয় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে। জানানো হয়, প্রশাসকও সচিবালয়ে এসে পাশের কোনো কক্ষে অফিস করছেন। তবে পুরো ফ্লোর খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। একজন কর্মকর্তা বলেন, তার নির্দিষ্ট কোনো কক্ষ নেই, বসার জায়গা না পেয়ে ফিরে গেছেন।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সংস্কারের জন্য গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগ নগর ভবনের কয়েকটি তলায় অস্থায়ী অফিস চালু করে। তবে গত শনিবার (১৭ মে) বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর রোববার সেখানে কেউ অফিস করতে পারেননি। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সেবা—যেমন জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স ও কর প্রদান—বন্ধ হয়ে যায়। এই আন্দোলনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশও সংহতি জানিয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াও আন্দোলনের কারণে কয়েক দিন অফিসে যাননি।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফজলে নূর তাপস ৪ লাখ ২৪ হাজার ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক হোসেন পেয়েছিলেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম নির্বাচনের ফল বাতিল করে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তাপসকে মেয়র হিসেবে অবৈধ ঘোষণা করে সরকারের গেজেটও বাতিল করা হয়। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে।
তবে এখনও ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দেয়নি সরকার বা স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর প্রতিবাদে তার সমর্থকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। রোববারও তারা নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, আজ সোমবার (১৯ মে) তারা ওই এলাকা 'ব্লক' করবে।
সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পরিষ্কার করে কিছু জানানো হয়নি—ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না। স্থানীয় সরকার বিভাগ এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাইলেও রোববার পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী এ বিষয়ে মতামত দেওয়া যাবে কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি টিম কাজ করছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে, তাই হুট করে মতামত দেওয়া সম্ভব নয়।"
তিনি আরও বলেন, "আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বর্তমানে সরকারি সফরে বিদেশে আছেন। ২৬ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এ ধরনের মতামতে তার স্বাক্ষর প্রয়োজন, তাই মতামতের জন্য তার ফেরার অপেক্ষা করতে হবে।"