ইশরাকের মেয়র পদ নিয়ে হাইকোর্টের রিট শুনানিতে আইনজীবীরা যা বললেন

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেট বিজ্ঞপ্তি স্থগিত চেয়ে ও মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর আদেশের জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার (২১ মে) বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটের শুনানি শেষে এ দিন নির্ধারণ করা হয়।
আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন লিপু। ইশরাক হোসেনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন ও খান জিয়াউর রহমান।
শুনানিতে রিটকারীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, 'ট্রাইব্যুনালে মামলার সময় ইশরাককে জয়ী ঘোষণা করতে হবে সেই মর্মে কোনো প্রতিকার চাওয়া হয়নি। একই সঙ্গে ইশরাক বেশি ভোট পেয়েছেন, সেরকম কিছুই আবেদনে ছিল না। বরং আবেদনে ভোটের ফলাফলে ইশরাক কম ভোট পেয়েছেন মর্মে উল্লেখ আছে।'
তিনি বলেন, 'পরবর্তী সময়ে ইশরাকের আবেদনে দুবার সংশোধন করা হয়েছে। যা আইনসম্মত নয়। কারণ, নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের মামলায় কোনো আবেদন ৩০দিন পর সংশোধন করা যায় না। এটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অনেক রায় রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'যেকোনো আবেদন মামলার পক্ষ বা তার এজেন্ট (পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে) অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে সংশোধন করতে পারে। কিন্তু ইশরাকের মামলায় সংশোধন আবেদন করেছেন রাজিব বেপারী নামে বরিশালের এক ব্যক্তি। আরেকটি সংশোধনী আবেদন করেন এক আইনজীবীর ক্লার্ক মনজুরুল ইসলাম। অথচ কোনো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নেই। সুতরাং এই অ্যাফিডেভিট গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। তবুও আদালত তা গ্রহণ করে আদেশ দিয়েছেন। এই সংশোধনী অবৈধ, রায়ও অবৈধ।'
আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, 'মামলার আবেদনে যেসব সাক্ষীর নাম উল্লেখ ছিল, তাদের কাউকেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে মামলায় ৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে কমিশনের মাধ্যমে। ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনে বসে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। কমিশন নিয়োগের দরখাস্তে বলা হয়েছিল ইশরাক অসুস্থ। অথচ অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য কমিশনে কেন নেওয়া হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। আর সাক্ষীরা ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে যেতে পেরেছেন, কিন্তু আদালতে যেতে পারেননি। ইশরাক বেশি ভোট পেয়েছেন বা জয়ী হয়েছে মর্মে আদালত তার রায়ের কোথাও উল্লেখ না করেই মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছেন। যা আইনসম্মত নয়।'
প্রশাসক নিয়োগের কথা উল্লেখ করে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী বলেন, 'গত ১৯ আগস্ট সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটিসহ সব সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। তাই নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলাটি তখনই অকার্যকর হয়ে যায়। তারপরও ট্রাইব্যুনালের রায় প্রদান এখতিয়ার বহির্ভূত। আদালত ভোট পুনর্গণনা ব্যতীত কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারেন না। অথচ এখানে পুনর্গণনার আদেশ না দিয়ে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেছেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে জবাবের জন্য অপেক্ষা করেনি। আমরা একটা নোটিশ দিয়েছি বিকেলে, রাতেই গেজেট করে দিয়েছে।'
এদিকে ইশরাকের পক্ষে ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, 'আদালতের রায়ের পর গেজেট হয়ে গেছে। তারা শপথ পড়াতে বাধ্য। এই রিটকারীর রিট করার আইনগত এখতিয়ার নেই। রিট খরচসহ খারিজ চাই। আর ওই রিটকাল কে, তার পরিচয় কী, তার কিছুই নেই।'
ইশারেকর আরেক আইনজীবী বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, 'নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিধান রয়েছে। সেখানে না গিয়ে রিট করে আদালতের সময় নষ্ট করা হচ্ছে। এটি একটি হাইলি পলিটিক্যাল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।'
এর আগে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় ও ইসির গেজেট প্রকাশ নিয়ে মো. মামুনুর রশিদ নামের সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী লিগ্যাল নোটিশ দেন। তবে তাতে সাড়া না মেলায় ১৩ মে রিট করা হয়। রিটটি মঙ্গলবার শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ১২ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। বেলা ১টা থেকে প্রায় ২টা পর্যন্ত শুনানি চলে। পরে বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা শুনানি হয়।
পরদিন বুধবার আদেশের জন্য দিণ দার্য করা হয়। কিন্তু বুধবার দপুর সাড়ে ১২ টায় আবার উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার পৌনে ১১ টায় এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।