গোপালগঞ্জে এনসিপির পথসভায় হামলা: গুলিবিদ্ধ ৪ জন নিহত, এলাকা রণক্ষেত্র

গোপালগঞ্জে সভা শেষে ফেরার পথে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার জেরে হামলাকারী ও পুলিশের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এতে বাজার এলাকা থেকে পাচুড়িয়া পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে রণক্ষেত্র পরিণত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও সেনাবাহিনী হামলাকারীদের ওপর গুলি চালায়। এতে নিষিদ্ধ ঘোষিত যুবলীগ সদস্যসহ চারজন নিহত এবং সাংবাদিক-পুলিশসহ প্রায় ১০০ জন আহত হয়েছে।
নিহতরা হলেন- জেলা শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে যুবলীগ সদস্য দীপ্ত সাহা (২৫), শহরের থানাপাড়ার কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (২৪) সদর উপজেলার আড়পাড়া এলাকার আজাদ তালুকদারের ছেলে ইমন তালুকদার (১৮) এবং টুঙ্গিপাড়ার ইদ্রিস মোল্যা।
এরা সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বলে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শেখ মো. নাবিল সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস জানিয়েছেন, 'এখন পর্যন্ত চার জনের মৃতদেহ হাসপাতালে এসেছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে।'
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেছেন, 'গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য জেলাজুড়ে অনির্ষ্টিকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরবর্তীতে রাত ৮টা থেকে পরের দিন বৃহস্পতিবার ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়।'
তিনি বলেন, 'এসব ঘটনায় জেলা শহরসহ আশপাশ এলাকায় ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।'

জেলা প্রশাসক বলেন, বুধবার দুপুর আড়াইটার পরে এনসিপি তাদের কর্মসূচি শেষ করে যাওয়ার সময় শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্থানীয় জনতা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা এসময় হামলাকারীদের উদ্দেশ্যে রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল ছোঁড়ে। মুহুর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওই এলাকা এবং সংঘর্ষ সারা শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্থানীয় জনতা জেলা কারাগারে হামলা করে। তারা কারাগারের প্রধান ফটক ভাঙার চেষ্টা করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রতিহত করে। এ সময় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেয়।
পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এনসিপির নেতাকর্মীদের একত্র করে সেনা পাহাড়ায় বাগেরহাটের প্রবেশদ্বার মোল্লারহাট সেতু পার করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।