সাম্য হত্যার বিচার দাবি: ২ ঘণ্টা পর শাহবাগ ছাত্রদলের অবরোধমুক্ত হলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে 'গাফিলতির' প্রতিবাদ এবং হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে পৌনে দুই ঘণ্টা অবরোধের পর শাহবাগ থেকে সরে গেছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
আজ রোববার বিকেল পৌনে চারটার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন তারা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'সাড়ে পাঁচটার দিকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা শাহাবাগ ছেড়ে চলে গেছেন।'
আজ বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন। এরপর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা মিছিল করে শাহবাগ থেকে চলে যান।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা চলে যাওয়ার পর শাহবাগ মোড় দিয়ে আবারও যান চলাচল শুরু হয়।
কর্মসূচিতে শাহরিয়ার আলম হত্যার বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। সেখানে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বক্তব্য দেন। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। এছাড়া শাহরিয়ারের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ তাদের অন্য দাবিগুলো মেনে না নেওয়া হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
ফের শাহবাগ থানা ঘেরাও শিক্ষার্থীদের
এদিকে সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত 'প্রকৃত' অপরাধীদের গ্রেপ্তারে বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টা সময় শেষে আজ ফের শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা।
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও সংহতি জানান।
গত শুক্রবারেও (১৬ মে) 'প্রকৃত' আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা থানা ঘেরাও করে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সেখান থেকে চলে যান।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) মারুফা টিবিএসকে বলেন, 'ঢাবি শিক্ষার্থীরা থানার সামনে অবস্থান নিয়েছে। আমাদের ওসি স্যারসহ অন্যরা সেখানে আছেন।'

এর আগে শুক্রবার শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, সাম্য হত্যার পর ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশের গ্রেপ্তারকৃত তিনজন অভিযুক্ত থাকলেও তারা 'প্রধান ঘাতক' নন বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।
সাম্য যেভাবে নিহত হন
১৩ মে গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন রমনা কালীমন্দিরের সামনে একদল দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাম্য (২৫)।
পুলিশের তথ্যানুসারে, সোমবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে সাম্য তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও মো. আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদের সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার সময় রমনা কালীমন্দিরের উত্তর পাশে বটগাছের কাছে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন ব্যক্তি মোটরসাইকেল দিয়ে সাম্যর মোটরসাইকেল ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।

পুলিশ আরও জানায়, এ বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে ওই ব্যক্তিদের তর্কবির্তক শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তিরা তাদের কিল, ঘুষি ও ইট দিয়ে আঘাত করে আহত করে। পরে একজন অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের ডান রানের পেছনে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরে সাম্য মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
সহপাঠীরা সাম্যকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাম্যর হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন, মো. তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও মো. পলাশ সরদার (৩০)।