চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড উদযাপনকারী কর্মীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বললেন জেডি ভ্যান্স

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড উদযাপনকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। খবর বিবিসির।
সোমবার 'দ্য চার্লি কার্ক শো'-তে অতিথি সঞ্চালক হিসেবে তিনি বলেন, 'তাদের জবাবদিহির মধ্যে আনো, আর তাদের কর্তৃপক্ষকেও জানাও।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা রাজনৈতিক সহিংসতায় বিশ্বাস করি না, তবে শিষ্টাচারে বিশ্বাস করি।'
চার্লি কার্কের মৃত্যুকে ঘিরে অনুপযুক্ত মন্তব্যের কারণে শিক্ষক, সাংবাদিক, পাইলট, চিকিৎসক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীসহ অনেকেই চাকরি হারাচ্ছেন। কেউ কেউ ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস ও হয়রানির শিকারও হচ্ছেন।
তবে সমালোচকদের মতে, এসব বরখাস্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও কর্মীদের অধিকারের জন্য হুমকি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে কোম্পানিগুলো কর্মী ছাঁটাইয়ে ব্যাপক ক্ষমতা ভোগ করে।
কার্ক ছিলেন দৈনিক পডকাস্ট 'দ্য চার্লি কার্ক শো'-এর সঞ্চালক। গত বুধবার উটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে বিতর্ক সঞ্চালনার সময় তিনি গলায় গুলি খেয়ে নিহত হন। সোমবার ভ্যান্স নিজেই পডকাস্টটি সঞ্চালনা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থীরা 'রাজনৈতিক সহিংসতাকে বেশি সমর্থন ও উদযাপন করে'। তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড উদযাপনে কোনো শিষ্টাচার নেই।'
আরও পড়ুন: গুলিতে নিহত ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী মিত্র চার্লি কার্ক
ইউগভের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মৃত্যুতে প্রগতিশীলরা রক্ষণশীলদের তুলনায় বেশি আনন্দ প্রকাশ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে রিপাবলিকান সিনেটর জেডি ভ্যান্সসহ কয়েকজন আইনপ্রণেতা দাবি করেছেন, কার্কের মৃত্যু নিয়ে প্রকাশ্যে আনন্দ প্রকাশকারীদের শাস্তি দেওয়া উচিত।
ফ্লোরিডার কংগ্রেসম্যান র্যান্ডি ফাইন এক্স-এ লিখেছেন, এসব মানুষের চাকরিচ্যুতি, তহবিল বন্ধ ও লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানাবেন। তিনি বলেন, 'এদের সমাজ থেকে বের করে দেওয়া উচিত।' সাউথ ক্যারোলাইনার কংগ্রেসওম্যান ন্যান্সি মেস শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়েছেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কুল এ ধরনের কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না, 'তাদের অর্থায়ন বন্ধ করে দিতে।'
কার্ক ছিলেন ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান। লিঙ্গ, বর্ণ ও গর্ভপাত নিয়ে তার মতামত বিশেষত বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
এদিকে তার মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণাত্মক পোস্ট দেওয়ায় কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কেউ সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তা অ্যান্থনি পাগ আছেন। ফেসবুকে মন্তব্য করার পর তার নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে।
সিক্রেট সার্ভিসের পরিচালক শন কুরান কর্মীদের উদ্দেশে এক স্মারকে লিখেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ বাড়ছে। তাই সদস্যদের উচিত সমস্যার সমাধান করা, আরও বাড়ানো নয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও নজরদারিতে আছেন। মিশিগানে অফিস ডিপোর এক শাখার কয়েকজন কর্মী কার্কের স্মরণসভার পোস্টার ছাপতে অস্বীকার করলে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের বরখাস্ত করে। অফিস ডিপোর এক মুখপাত্র বলেন, কর্মীদের আচরণ ছিল 'সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য ও অসংবেদনশীল', যা প্রতিষ্ঠানের নীতির বিরোধী।
মার্কিন শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্যের কারণে শাস্তির মুখে পড়ছেন। এতে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে তথাকথিত 'ক্যানসেল কালচার' নিয়ে। কলামিস্ট ক্যারেন আত্তিয়া জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্লুস্কাইয়ে কার্কের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পোস্ট দেওয়ার পর ওয়াশিংটন পোস্ট তাকে চাকরিচ্যুত করেছে।
দক্ষিণ ক্যারোলাইনার ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, কার্ক হত্যাকাণ্ড নিয়ে 'অশোভন' মন্তব্য করায় এক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং দুই অধ্যাপককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুথ মার্শালও একই কারণে বরখাস্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে অধিকাংশ কর্মী 'অ্যাট-উইল' চুক্তির আওতায় নিয়োগ পান। ফলে মালিকপক্ষ যেকোনো কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারে। টেক্সাস অস্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক স্টিভেন কলিস বলেন, সংবিধান যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে, তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়; এটি কেবল সরকারের পদক্ষেপকে সীমিত করে।
অন্যদিকে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ওয়ার্কার ইনস্টিটিউট'-এর প্রধান রিসা লিবারভিৎস মনে করেন, কারও পোস্টের কারণে জনসম্মুখে জবাবদিহি দাবি করলে তা মতপ্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপ হতে পারে। তার মতে, বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে এমন বরখাস্ত অস্বাভাবিক নয়।
তিনি বলেন, 'এটি সেই ভয়ের প্রতিফলন, যা এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিরাজ করছে—ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে না মিললে প্রতিশোধ নেওয়া হতে পারে।'
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রফেসরস এ পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। সোমবার এক বিবৃতিতে তারা জানায়, 'অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষা করা উচিত, রাজনৈতিক চাপে সেটি সীমিত করা নয়।'