শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে কুয়েট শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য শিক্ষকদের উদ্দেশে খোলা চিঠিতে ক্ষমা চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের 'কুয়েট ১৯' পেইজে প্রকাশিত চিঠিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ একাধিক শিক্ষক লাঞ্ছনার শিকার হন। এরপর থেকে একাধিকবার ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
চিঠিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন, 'আপনারা সকলেই অবগত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে কুয়েট ছাত্রদল ও বহিরাগত সন্ত্রাসী বিএনপি নেতাকর্মীরা পিস্তল, চাপাতি, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক ও বর্বরোচিত হামলা চালায়। এই হামলায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং একজন সম্মানিত শিক্ষক আহত হন, যা কুয়েটের ইতিহাসে গভীর বেদনার এক অধ্যায়।'
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এই হামলার প্রকৃত সত্য আড়াল করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের শিক্ষকগণ প্রজ্ঞাবান, বিচক্ষণ এবং ছাত্রবান্ধব। তথাপি, ষড়যন্ত্রের ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের কৃত্রিম দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।'
তারা আরও লেখেন, 'বর্তমান আন্দোলন শিক্ষকবিরোধী বা শিক্ষাবিরোধী নয়। এটি সন্ত্রাসবিরোধী, দুর্নীতিবিরোধী এবং শান্তিপূর্ণ একটি উদ্যোগ। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কুয়েটকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, নিরাপদ এবং জ্ঞানচর্চার উপযোগী শিক্ষাঙ্গন হিসেবে গড়ে তোলা।'
চিঠিতে শিক্ষার্থীরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে লেখেন, 'আন্দোলনের সময় কোনো শিক্ষার্থীর আচরণ বা বক্তব্যে যদি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের মনে আঘাত লেগে থাকে, তবে আমরা হৃদয়ের গভীর থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি। আপনারা আমাদের পিতৃতুল্য; আমাদের কোনো আচরণে যদি সামান্যতম অসম্মান প্রকাশ পেয়ে থাকে, আমরা আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত।'

তারা আরও বলেন, 'শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ, আপনাদের প্রতিটি কথা আমাদের জীবনের পথনির্দেশ। আমরা আশা করি, আপনারা আমাদের ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।'
চিঠির শেষাংশে শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, প্রাণের কুয়েট আবারও ঐক্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী একসঙ্গে কাজ করে এই শিক্ষাঙ্গনকে বিশ্বমানে উন্নীত করবে। আমরা পুনরায় আমাদের আচরণগত ভুলের জন্য গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং আপনাদের কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা আশাবাদী, কুয়েট পরিবারের প্রতিটি সদস্য মিলিতভাবে একটি সুস্থ, সুন্দর ও রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস নির্মাণে অবদান রাখবে।'
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুয়েট ছাত্রদল ও বহিরাগত বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কুয়েটের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
এই সংঘর্ষে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘ ৬৫ দিনের আন্দোলনে কুয়েটের সাবেক উপাচার্য মোহাম্মদ মাসুদকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার।