কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় আটক ২, প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। তবে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে খানজাহান আলী থানা ছাত্রদল।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) দিবাগত রাতে খানজাহান আলী থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। পরে রোববার বিকেলে ফুলবাড়িগেটে মিছিল করে ছাত্রদল।
তবে এই ঘটনায় এখনও কোনো মামলা না দায়ের হওয়ায়, আটক দুজনের পরিচয় প্রকাশ করেননি পুলিশ।
কুয়েট শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে তারা চারজন ক্যাম্পাসের বাইরে ফুলবাড়িগেট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় খাবার খেতে গিয়েছিলেন। এ সময় ১০-১২ জনের একটি দল তাদের ওপর হামলা চালায়।
হামলাকারীরা তাদের উদ্দেশে 'তোরা কেন ভিসি নামাইলি' -বলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে এবং এরপর দ্রুত সেখান থেকে সরে যায়। এসময়ে ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ওবায়দুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম, গালিব রাহাত ও মোহন গুরুতর আহত হন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যুবদল নেতা মাসুম খান, ছাত্রদল নেতা সিয়াম হোসেন, খানজাহান আলী থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বিপ্লব, বিএনপি নেতা মুন্সী আজমল হোসেন ও ছাত্রদল নেতা তানভীর আহমেদসহ ১০-১২ জন তাদের মারধর করেছে।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, 'হামলার ঘটনার পর পরই বিষয়টি আমরা থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলাম। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালককেও অবহিত করেছিলাম।'
এই বিষয়ে খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবীর হোসেন বলেন, 'অভিযোগ জানার পরেই মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা অভিযান শুরু করি। রাতেই দুজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি, বাকিদের আটকের জন্য অভিযান চলমান রয়েছে।'
এই ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গভীর রাতে পুলিশী তল্লাশির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে খানজাহান আলী থানা ছাত্রদল।
প্রতিবাদ সভায় তারা বলেন, 'দলের পরীক্ষিত নেতা, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করে নির্যাতিত হয়েছেন, মিথ্যা মামলায় যারা জেল খেটেছেন, আপনারা তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে খুঁজেছেন। আমরা পথসভায় দাঁড়িয়ে আপনাদের কাছে জানতে চাই, তাদের অপরাধ কী? আপনারা কি সেই ফ্যাসিস্টের রেখে যাওয়া বাহিনীর জায়গা পূরণের দায়িত্ব নিয়েছেন?'
পুলিশ বাহিনীর প্রতি প্রশ্ন রেখে তারা বলেন, 'আপনারা এই অঞ্চলে যারা মাদক বিক্রেতা তাদেরকে গ্রেপ্তার করেন না! যারা অস্ত্রধারী, অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তাদেরকে গ্রেপ্তার করেন না।'

তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে তারা আরও বলেন, 'আজকের পর থেকে কখনও, কোনো সময় সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে অবহিত না করে আপনারা কখনও দলীয় নেতাকর্মীদের বাসায় হানা দিবেন না।'
খানজাহান আলী থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. মাসুম বিল্লার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান বিপ্লবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করেন খানজাহান আলী থানা বিএনপি'র সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস।
উল্লেখ্য, গত গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুয়েট ছাত্রদল ও বহিরাগত বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ঘটে। এতে কুয়েটের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
এই সংঘর্ষে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘ ৬৫ দিনের আন্দোলনে কুয়েটের উপাচার্য মোহাম্মদ মাসুদকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই থেকে কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরোধ চলে আসছে।