১৬ আগস্ট উদ্বোধন চট্টগ্রাম-ঢাকা ২৫০ কি.মি. জ্বালানি পাইপলাইন

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি পাইপলাইন আগামী ১৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে একাধিক সফল পরীক্ষামূলক চালান সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।
প্রকল্প পরিচালক আমিনুল হক টিবিএসকে বলেন, "চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত ডিজেল সরবরাহের একাধিক সফল ট্রায়াল হয়েছে। পাইপলাইন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আগামী ১৬ আগস্ট এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন জ্বালানি উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।"
গত জুনের শেষ দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জে ৩২ হাজার টন পরিশোধিত ডিজেল তিন দিনে সফলভাবে সরবরাহ করা হয়। প্রকল্প চালুর পর থেকে চাহিদা অনুযায়ী, সাড়ে ৪ কোটি লিটার তেল পরিবহন করেছে এই পাইপলাইন।
"এখন এটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত," বলেন আমিনুল হক।
প্রযুক্তিগত রুট ও কাঠামো
এই পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য মোট ২৫০ কিলোমিটার। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ হয়ে ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২৪১.২৮ কিলোমিটার এই পাইপলাইন নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়া গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ৮.২৯ কিমি দীর্ঘ ১০ ইঞ্চি ব্যাসের আরেকটি সংযোগ পাইপলাইন রয়েছে।
এই রুটে পাইপলাইন ২২টি নদী ও খাল পার হয়েছে, যার মধ্যে ১০টি বড় নদীও রয়েছে। এসব জায়গায় নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বের জন্য বেশিরভাগ অংশ নদীর তলদেশ দিয়ে স্থাপন করা হয়েছে।
বিপিসি কর্মকর্তারা জানান, পাইপলাইন চালু হলে জ্বালানি পরিবহন ব্যয়ে বছরে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
এখন ডিজেল সরাসরি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির সংরক্ষণ ট্যাঙ্ক থেকে গোদনাইলে পাম্প করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নভাবে চলছে।
পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন
২০১৫ সালে জ্বালানি পরিবহনের খরচ কমানো ও চুরি ঠেকানোর লক্ষ্যে এই পাইপলাইনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। সেবার বিপিসি একটি সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) সম্পন্ন করে এবং ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
পরে নীতিগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়া হয়।
২০১৮ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) "চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা জ্বালানি তেল পরিবহনের পাইপলাইন নির্মাণ" প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এ প্রকল্পের প্রাথমিক বাজেট ধরা হয়েছিল ২,৮৬১ কোটি টাকা।
প্রকল্পটির নকশায় বছরে ২৭-৩০ লাখ টন জ্বালানি পরিবহনের সক্ষমতা রাখা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ৫০ লাখ টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
বিলম্ব, ব্যয় বৃদ্ধি ও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধান
কয়েক দফা বিলম্ব ও ব্যয় পুনর্মূল্যায়নের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রথমে ৩,১৭১ কোটি টাকা, এবং তা বর্তমানে ৩,৬০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত করে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
এপর্যন্ত পতেঙ্গার গুপ্তাখাল থেকে গোদনাইল পর্যন্ত ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২৪১.২৮ কি.মি. পাইপলাইন বাড়তি নিরাপত্তার জন্য পাঁচ ফুট মাটির নিচে বসানো হয়েছে। গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ৮.২৯ কিমি ১০ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগ পাইপলাইনও প্রস্তত রয়েছে।
ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনা
বিপিসি আগামী দিনে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৮ ইঞ্চি ব্যাসের ৫৯.২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যার মাধ্যমে চাঁদপুর অঞ্চলে জ্বালানি বিতরণ সহজতর হবে।
সম্পূর্ণভাবে চালু হলে চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি পাইপলাইন দেশের জ্বালানি বিতরণ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি জ্বালানি সরবরাহের সময় কমাবে, সড়কপথে যানজট হ্রাস করবে, পরিবহন ব্যয় কমাবে এবং তেলবাহী ট্যাংকারে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিও অনেকাংশে কমিয়ে আনবে।