আমিরাতে আটক ২৬ প্রবাসীর মুক্তির দাবি এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সের

সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) আটক ২৬ জন বাংলাদেশি প্রবাসীর মুক্তির দাবিতে সরকারের মানবিক ও কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স।
সোমবার (৪ আগস্ট) সংগঠনটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির গ্লোবাল কো-অর্ডিনেটর তারিক আদনান মুন লিখিত বক্তব্য এ দাবি করেন।
তিনি জানান, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের গণআন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আমিরাতে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন ওই ২৬ জন প্রবাসী। তাদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা বৈধ বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াই গত ৮-৯ মাস ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।
তারিক আদনান দাবি করেন, এই আটকাদেশের পেছনে বাংলাদেশের দূতাবাসের ভূমিকা রয়েছে। তাদের সরবরাহ করা তথ্যে ভিত্তি করেই আমিরাত কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, 'এটি একদিকে মতপ্রকাশের অধিকারের লঙ্ঘন, অন্যদিকে মানবাধিকার ও কূটনৈতিক দায়িত্বের পরিপন্থী।'
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি দুটি দাবি উত্থাপন করে:
১. আটক প্রবাসীদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং কনস্যুলার যোগাযোগের একটি কার্যকর ব্যবস্থা গঠন।
২. দ্রুত কূটনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রবাসীদের মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা।
তারিক আদনান বলেন, 'এই ২৬ জন মানুষ কেবল নাম নয়, তারা প্রতিটি পরিবারের শেষ আশ্রয়। দীর্ঘদিন ধরে তারা বন্দি থাকায় তাদের পরিবার চরম আর্থিক ও মানসিক সংকটে পড়েছে। সন্তানদের পড়াশোনা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। পরিবারগুলো দিনে দিনে ভেঙে পড়ছে।'
সংগঠনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়—এই সংকট কেবল কূটনৈতিক নয়, এটি একটি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়।
সাংবাদিকদের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা চাই গণমাধ্যম এই সংকটকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবে, যাতে রাষ্ট্র দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।'
আটক বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছেন—শহিদুল আমিন, শাহাদাত হোসেন, মোহাম্মদ শামিম আহমেদ, শাহ মোঃ সাফায়েত উল্লাহ, মোঃ নাহিদ হাসান, মোঃ শাহাদত হোসেন, মোঃ জাকের হোসেন রনি, মিজানুর রহমান, মাকসুদ আলম সরকার, তৈবুর রহমান সজিব, মোঃ রিফাত, মোহাম্মদ ফরহাদ আহমেদ, মোঃ শাওন হাওলাদার, মোঃ আমান উল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, মোঃ মন্টু মিয়া, মোঃ জাহেদুল ইসলাম, মনসুর আহমেদ, রহমত উল্লাহ, নুর হাসান, মোঃ হাসান, মোঃ সোহেল, আবদুল হামিদ, মোঃ সাকিল মিয়াসহ আরও কয়েকজন।
আটকদের একজন শহিদুলের স্ত্রী জানান, '২ মাস ধরে তার কোনো খোঁজ পাই না। আমার সন্তান বলে, আম্মু, আমার বাবা কোথায়? কিন্তু আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। টাকার অভাবে বাচ্চাকে ভর্তি করাতে পারিনি। আমরা সব জায়গায় গেছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।'
একজন মুক্তিপ্রাপ্ত প্রবাসী বলেন, 'জুলাই আন্দোলনে কি প্রবাসীদের কোনো অবদান নেই? তাহলে কেন আমাদের ভাইদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে না?'
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, 'আমাদের যে কূটনৈতিক চ্যানেল রয়েছে, তাতে গাফিলতি লক্ষ্য করছি। পররাষ্ট্র, প্রবাসী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে আমিরাতে যে কনস্যুলার অফিস রয়েছে, সেখানে কোনো ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখে দ্রুত আমাদের ভাইদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। আমাদের ভাইদের ব্যতীত আগামীকাল ৫ আগস্টের যে অনুষ্ঠান, তার কোনো সফলতা আমরা কামনা করি না।'