ঢাকার রাস্তায় ‘মার্চ ফর গাজা’, থমকে গেছে নগরীর যান চলাচল

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের প্রতিবাদে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত 'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচিতে মানুষের ঢল নামায় শহরের যান চলাচল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
দুপুর ৩টার পর থেকে শহরের বিভিন্ন মোড়ে যানজট শুরু হয়। এতে করে রাস্তায় এবং ফ্লাইওভারে বাস, অ্যাম্বুলেন্সসহ নানা যানবাহন আটকে পড়ে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে কেন্দ্র করে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে, ফলে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ অচল হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, 'সকালে আমরা জনগণকে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই রাস্তাগুলিও বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমাদের চিন্তা হচ্ছে, কর্মসূচি শেষে এত মানুষ কীভাবে বের হবে।'
রাস্তায় যানজটের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার সারওয়ার হোসেন বলেন, 'সমাবেশের কারণে রমনা, মতিঝিল এবং তেজগাঁও এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিকের তুলনায় ধীরগতির ছিল। তবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এসব এলাকায় তীব্র যানজট লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও যান চলাচল ছিল ধীরগতির।'
তিনি আরও বলেন, 'যদিও সমাবেশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, তবে যানবাহন চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।'
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ধর্মীয় ও ছাত্র সংগঠন এবং সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ফলে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাগম ঘটে।
উদ্যান সংলগ্ন এলাকা—রমনা পার্ক, মৎস্য ভবন, হাইকোর্টের সামনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, শাহবাগ, কাটাবন ও বাংলামোটর—এ মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। এসব এলাকায় রিকশাসহ কোনো যানবাহনের চলাচল চোখে পড়েনি।
দুপুরের মধ্যেই উদ্যানে মানুষের ভিড় বেড়ে গেলে সমাবেশের প্রধান মঞ্চ থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়—'সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পূর্ণ, যেখানে আছেন সেখানেই বসে পড়ুন।' এরপর উদ্যানের দিকে যাওয়া মিছিলগুলো থেমে যায়।
বিকেল ২টা ৩০ মিনিট নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট মোড়, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড, বুয়েট এলাকা, চাঁনখারপুল, গুলিস্তান, পল্টন মোড়, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকা, জিরো পয়েন্ট, ফকিরাপুল, নয়া পল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার মোড় এবং সায়েন্স ল্যাব এলাকাতেও প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়।
এসব এলাকায়ও যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
জনভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে মালিবাগ থেকে বাংলামোটরে যাওয়ার পথে নিলিমা ফারিস বলেন, 'আমি পুরো পথ হেঁটেই এসেছি। রাস্তায় এত মানুষ ছিল যে চলাচলের কোনো সুযোগই ছিল না।'