‘মার্চ ফর গাজা’: পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ শর্ত পুনর্বহালসহ যেসব দাবি জানানো হলো

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত 'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচির মঞ্চ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টে 'এক্সেপ্ট ইসরায়েল' শর্ত পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ইসরায়েলের সঙ্গে সরকারের 'সব ধরনের চুক্তি বাতিলের' আহ্বান জানানো হয়েছে।
আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির আয়োজক ছিল 'প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ' নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যার স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তিতেই নিহিত রয়েছে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনের প্রশ্নে বাংলাদেশ কেবল মানবতার নয়—ঈমানের পক্ষেও এক ঐতিহাসিক অবস্থানে আছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সরকারের দায়িত্ব, জনগণের ঈমানি ও নৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা। বাংলাদেশের জনগণ গাজার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে।'

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশি পাসপোর্টে 'এক্সেপ্ট ইসরায়েল' শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে। একইসঙ্গে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের পাসপোর্টে আগে 'দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সেপ্ট ইসরায়েল' লেখাটি মুদ্রিত ছিল। যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়: 'এ পাসপোর্টটি ইসরায়েল ছাড়া বিশ্বের সকল দেশের জন্য বৈধ।'

২০২১ সালের মে মাসে 'আন্তর্জাতিক মান রক্ষার্থে' বাংলাদেশের ই-পাসপোর্ট থেকে এ লেখাটি অপসারণ করা হয়। তবে বাংলাদেশিরা এখনো পাসপোর্ট ব্যবহার করে ইসরায়েল ভ্রমণ করতে পারেন না।
ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি গণহত্যার বিচার, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ, পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

ঘোষণাপত্রে সরকারের সঙ্গে ইসরায়েলি যেসব প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়েছে, সেগুলো বাতিল করার দাবি জানানো হয়। গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের মুখে রাষ্ট্রীয়ভাবে ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে এবং আমদানি নীতিতে 'জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দেওয়ার' দাবি জানানো হয় কর্মসূচিতে।

এছাড়া ঘোষণাপত্রে ভারতের 'হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধেও' রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, 'হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয়—বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর।'
পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা মসজিদ, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও জানানো হয়।

মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে অংশ নিতে দুপুরের আগেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট-বড় মিছিল নিয়ে লোকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেন। উদ্যানের প্রতিটি গেটে মানুষের দীর্ঘ ভিড় দেখা যায়।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা 'ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন', 'ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করো', 'ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করো'—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদের হাতে বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা যায়।