গাজায় ‘সত্যিকারের দুর্ভিক্ষ’ চলছে, স্বীকার করলেন ট্রাম্প; ইসরায়েলকে 'প্রতি আউন্স খাবার' ঢুকতে দিতে বললেন

গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চলছে—প্রথমবারের মতো এমন বাস্তবতা স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল যেন গাজায় 'প্রতি আউন্স খাবার' ঢুকতে দেয়।
ব্রিটেন সফরকালে এক বক্তব্যে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বক্তব্যের বিরোধিতা করে এসব কথা বলেন। এর আগে নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, 'গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে'—এমন অভিযোগ 'সম্পূর্ণ মিথ্যা'। তবে ট্রাম্প বলেছেন, এ সংকটে ইসরায়েলের 'অনেকখানি দায়' রয়েছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজায় অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন বহু ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে সেখানে প্রায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে তৈরি হয়েছে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। এই প্রেক্ষাপটে মানবিক হস্তক্ষেপের জন্য ট্রাম্পের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।
ব্রিটেনে অবস্থানকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প এবং পরে একসঙ্গে ৭০ মিনিটব্যাপী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, গাজার পরিস্থিতির জন্য 'অনেকখানি দায়' ইসরায়েলের। নেতানিয়াহু আগে বলেছিলেন, 'গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই'। এ বিষয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'জানি না। তবে টেলিভিশনে যা দেখি, তা তো একেবারেই তা বলে না। ওখানকার শিশুদের খুব ক্ষুধার্ত দেখায়।'
তিনি আরও বলেন, 'অনেক মানুষকে আমরা বাঁচাতে পারি। ওই শিশুগুলোর কথা ভাবুন। ওটা তো সত্যিকারের দুর্ভিক্ষ। আমি নিজেই দেখেছি। এটা মিথ্যা হতে পারে না। তাই আমরা এখন আরও বেশি সক্রিয় হব।'
নেতানিয়াহুর সঙ্গে পরবর্তী ফোনালাপে কী বলবেন—জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, 'আমরা টাকা দিচ্ছি, খাবার দিচ্ছি, কিন্তু আমরা এখানে... আমি চাই, সে (নেতানিয়াহু) নিশ্চিত করুক ওরা যেন খাবার পায়। আমি চাই, ওরা যেন প্রতিটি আউন্স খাবার পায়।'
হামাসের সমালোচনায়ও সরব হন ট্রাম্প। জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়ার জন্য গোষ্ঠীটিকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, 'হামাস খুবই কঠিন একটি গোষ্ঠী, যাদের সঙ্গে আলোচনা করা দুরূহ।' তিনি জানান, ইসরায়েল সরকারকে কৌশল বদলানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, 'আমি ইসরায়েলকে বলেছি, বিবিকে (নেতানিয়াহু) বলেছি, এখন হয়তো তোমাদের আরেকভাবে করতে হবে।'
এই বক্তব্যগুলো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে দেন ট্রাম্প। সোমবার স্কটল্যান্ডের আয়ারশায়ারে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্টারমার।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে স্টারমার বলেন, গাজায় 'পুরোপুরি বিপর্যয়' চলছে এবং এই দৃশ্য দেখে ব্রিটিশ জনগণ 'ঘৃণাভরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে'। তিনি বলেন, 'এখনই যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।'

এদিকে, ইসরায়েল সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, গাজার তিনটি এলাকায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে যুদ্ধবিরতি থাকবে এবং সেখানে ত্রাণ পৌঁছাতে নিরাপদ পথ খুলে দেওয়া হবে। যুক্তরাজ্য জানায়, তারা জর্ডানের সঙ্গে একযোগে আকাশপথে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
তবে সোমবার দক্ষিণ গাজায় একটি ত্রাণবাহী ট্রাকের পাশে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। নিহতদের মধ্যে চারজন শিশু রয়েছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি
সাহায্যকারী সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলের নতুন ঘোষণাগুলো গাজায় বেড়ে চলা দুর্ভিক্ষের মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মুখপাত্র মার্টিন পেননার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, সোমবার তাদের ৫৫টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও ক্ষুধার্ত মানুষ সেগুলো লুট করে নেয়। কোনো ট্রাকই বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির গুদামে পৌঁছায়নি।
আরেকজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা জানান, গাজায় পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, নতুন কোনো বিকল্প রুটও অনুমোদন পায়নি।
এই মানবিক সংকটের মধ্যেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার মঙ্গলবার বিকেলে জরুরি মন্ত্রিসভা বৈঠক আহ্বান করেছেন। সেখানে তিনি ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে যৌথভাবে প্রস্তুতকৃত একটি শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন।
এদিকে, ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সদস্য ও ২২০-এর বেশি এমপির চাপের মুখে স্টারমারকে দ্রুত ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে তার দেশ।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও বলেছেন, যুক্তরাজ্য বা অন্য মিত্র দেশ চাইলে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ট্রাম্প আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা গাজায় 'ওয়াক-ইন' খাদ্যকেন্দ্র স্থাপন করবে, যেখানে কোনো বাধাবাধকতা থাকবে না। তবে এসব কেন্দ্র কীভাবে চালু হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।