এনসিপি গঠনের পর এখনও নতুন নেতৃত্ব পায়নি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, দায় সাবেক নেতাদের ঘাড়ে

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা যোগ দিয়েছেন নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি)। এর মধ্যে এক মাস পার হলেও প্ল্যাটফর্মটির নেতৃত্বে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছি, তা পূরণ করা যায়নি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপি প্রতিষ্ঠার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা—হাসনাত আবদুল্লাহ, আরিফ সোহেল ও হান্নান মাসুদ—দলটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, নতুন নেতা নির্বাচনে বিলম্ব হওয়ার মূল কারণ নেতৃত্ব বাছাইয়ে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ এবং প্ল্যাটফর্মটির সাবেক নেতাদের অসহযোগিতা।
ফলে নেতৃত্বশূন্যতায় প্ল্যাটফর্মটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে যাওয়ায় হতাশ নেতাকর্মীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, নতুন নেতৃত্ব কীভাবে বাছাই হবে সেটির কোনো নির্দিষ্ট ফরম্যাট ঠিক হয়নি। 'এ নিয়ে নির্বাহী কমিটির অবশিষ্ট সদস্যরা দুবার বৈঠক করলেও সিদ্ধান্ত হয়নি।'
অন্যদিকে বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন সদস্য বলেন, মিটিংয়ে নেতৃত্ব বাছাইয়ের চেষ্টা করা হলেও 'উমামা ফাতেমাসহ কয়েকজনের বাকবিতণ্ডার কারণে' সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিটিং শেষ হয়ে যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র মালিহা নামলাহ বলেন, 'মিটিংগুলো সফল হয়নি উমামা ফাতেমার অসহযোগিতায়। অনেকেই [নতুন নেতৃত্বের জন্য] নিজেদেরকে ক্যান্ডিডেট হিসেবে উপস্থাপন করলে তিনি বাকবিতণ্ডা করেন।'
এ বিষয়ে উমামা বলেন, বাকবিতণ্ডার মতো কোনো ঘটনার কথা তার জানা নেই, মনে নেই।
মালিহা আরও বলেন, এনসিপি ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ গঠনের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।
উমামা ফাতেমা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যত রূপরেখা তৈরির জন্য সব ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে কাজ করার কথা ছিল। 'কিন্তু অতি উৎসাহী ও স্বজনপ্রীতির কারণে এখানকার সাবেকরা চূড়ান্ত স্বার্থপরতা দেখিয়েছেন।'
তিনি অভিযোগ করেন, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও এনসিপি গঠিত হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটিকে ছোট করে রাখার চেষ্টা হয়েছে।
'সাবেকদের মধ্যে এই প্ল্যাটফর্মকে নিজের মতো করে ব্যবহার করার প্রবণতা ছিল।'
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নির্বাহী সদস্য বলেছেন, সম্প্রতি নির্বাহী সদস্য ও সেল সম্পাদকদের নিয়ে হওয়া বৈঠকে পরবর্তী আহ্বায়ক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসান এনাম ও সদস্য সচিব হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিহা নামলাহর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
তারা বলেন, যেহেতু আগামীতে প্ল্যাটফর্মটি শুধু জুলাই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কাজ করবে, তাই সেভাবেই নেতৃত্ব বাছাই করা হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটিও স্থবির
এনসিপি দল গঠনের আগে বলা হয়েছিল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে বহাল থাকবে। সেজন্য যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে প্ল্যাটফর্ম দুটি পুনর্গঠন করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে প্রথমে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি দুটি প্ল্যাটফর্মের নেতৃবৃন্দ যৌথভাবে গঠন করে এনসিপি। কিন্তু নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও পুনর্গঠন করা হয়নি।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সেই সময় [২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে] নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্রদের ১৫ দিনের অনানুষ্ঠানিক দায়িত্ব ছিল। নাগরিক কমিটির নতুন সাংগঠনিক নির্বাচনের জন্য একটি ফোরামের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল তাদের। সেটিও এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
সামান্তা বলেন, কমিটিতে থেকে যাওয়া সদস্যদের নিয়ে তারা এখনও কোনো বৈঠক করতে পারেননি। কবে নাগাদ বৈঠকে বসবেন, তা-ও অনিশ্চিত।
তিনি আরও বলেন, নাগরিক কমিটির সদস্যরা কীভাবে এনসিপিতে স্থানান্তরিত হবেন, সে বিষয়েও এখনও কোনো পলিসি নেওয়া হয়নি। 'আপাতত সবার মনোযোগ নতুন পার্টিতে থাকায় নাগরিক কমিটির কাজ থেমে আছে।'
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নাগরিক কমিটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র এবং মুখ্য সংগঠক ছাড়া নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেলসমূহ ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সদস্যের নাগরিক কমিটির সদস্যপদ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়া উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ডসহ সব স্তরের নাগরিক কমিটি থেকে সদস্যদের এনসিপিতে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়াও বাস্তবায়িত হয়নি।