বিচার ও সংস্কারের পরেই নির্বাচন: নাহিদ ইসলাম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দমন-পীড়নে দায়ীদের বিচারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, 'আগে বিচার করতে হবে, এরপর সংস্কার এবং তারপর নির্বাচন।'
তিনি বলেন, 'যারা গণহত্যা করেছে, আমরা তাদের বিচার করবো। এই বাংলার মাটিতেই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও যেসব পুলিশরা গুলি চালিয়ে আমাদের ভাইদের মেরেছে, আমরা তার বিচার নিশ্চিত করবো। বিচার ও সংস্কারের পরেই নির্বাচন।'
আজ (৫ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে বগুড়ার পর্যটন মোটেলে জুলাই অভ্যুত্থানে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, 'ন্যায়বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। এখনই এটা শুরু করতে হবে। যারা মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, যারা গণহত্যা করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। বাংলার মাটিতে শেখ হাসিনা এবং যেসব পুলিশ সদস্য গুলি চালিয়েছিল, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।"
শহিদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমরা জানি, আপনাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে, পৃথিবীর যা কিছুই দেওয়া হোক, সেই ক্ষতি পূরণ হবে না। আপনাদের পরিবারের সদস্যরা দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন। মানুষের মুক্তির জন্য শহিদ হয়েছেন, স্বাধীনতার জন্য শহিদ হয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'আমরা আপনাদের পাশে থাকতে চাই। গত এক বছর দেশ অনেক কিছু হয়েছে। আমরা হয়তো আপনাদের প্রতি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। আরও আগেই আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ছিল। আমরা সেটা পারিনি এ জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।'
জুলাই ঘোষণাপত্র ও সংস্কারের বিষয়ে এনসিপি'র আহ্বায়ক বলেন, 'শহিদ পরিবারের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। শুধু এই সরকার নয়, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, এটা করতে হবে। এটার জন্য আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলছি।'
এর আগে বগুড়ায় এক পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, 'জুলাই আমাদের রাজনৈতিক ইশতেহার, রাজনৈতিক গন্তব্য। জুলাইয়ের পথে আগামীর বাংলাদেশ বিরচিত হবে।'
তিনি বলেন, 'এই বগুড়া একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। এই পুণ্ড্রনগরে সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বগুড়া এলাকা সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করা হলেও নাগরিকরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা বলতে চাই, নাগরিকদের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।'
২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর প্রশাসন, পুলিশ ও আদালতের নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, "যদি কেউ সেই পুরনো কায়দায় দলবাজ প্রশাসকের মত আচরণ করে, তাদের পরিণতিও হবে ফ্যাসিস্ট মুজিবাদদের মতো।"
'এই যে যারা ১৮ সালের [২০১৮ সাল] ডিসি ছিল, যারা ভোট ডাকাতি করেছিল, ১৮ সালের ভোটে নির্বাচন কমিশনার ছিল, তাদের কী পরিণতি হয়েছে? এই দিন দিন নয়, দিন কিন্তু সকলেরই আছে। এই গণঅভ্যুত্থানের এক বছরের মধ্যে যদি আপনারা ভুলে যান, ছাত্র জনতার ক্ষমতা কতটুকু- তাহলে আপনারা ভুল করছেন,' যোগ করেন নাহিদ ইসলাম।
কোনো দলবাজ প্রশাসক কিংবা দলবাজ পুলিশকে ছাড় দেওয়া হবে না উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, বগুড়ার প্রশাসক, বগুড়ার পুলিশ, আইন-আদালতকে নিরপেক্ষ আচরণ করতে হবে। কোনো দলের পক্ষে থাকা যাবে না।
পথসভায় নাহিদ আরও বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা বলেছি, নতুন বাংলাদেশ লাগবে, নতুন সিস্টেম লাগবে, নতুন আইন-কানুন লাগবে। আপনাদের পুরনো খেলায় আমরা অংশগ্রহণ করব না। আপনাদের চাঁদাবাজির রাজনীতিতে, আপনাদের সন্ত্রাসীর রাজনীতিতে, আমরা অংশগ্রহণ করব না।'
নাহিদ বলেন, 'আমরা পুরনো কোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি। আমরা খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি। খেলার নিয়ম বদলাতে হবে, রাজনীতির নিয়ম বদলাতে হবে। ভালো মানুষদের, যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে- বাংলাদেশের হাল ধরার জন্য, বগুড়ার হাল ধরার জন্য।'
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা চলছে বলে অভিযোগ করে নাহিদ বলেন, 'এই বগুড়ায় এসে বলতে চাই, জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই জাতীয় সংবিধানে যুক্ত হবে।' আগামী ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হবে বলেও জানান নাহিদ।
জুলাই-আগস্ট আর আহতদের যারা সংবিধানে রাখতে চায় না, তারা মুজিববাদের পাহারাদার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় পদযাত্রায় জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসাইন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সার্জিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, দুপর পৌনে ১২টার দিকে শহরের কলোনী এলাকা থেকে পদযাত্রা শুরু করে এনসিপি।