নতুন নোট ছাড়েনি বাংলাদেশ ব্যাংক, এবার ঈদ সালামির দাম চড়া

প্রিয়জনদের কাছ থেকে পাওয়া সালামি ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তবে এ বছর নতুন নোটের সংকটের কারণে 'সালামির দাম' বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়ের মতো এ বছর নতুন নোট বাজারে না ছাড়ায় দালালেরা এখন নোটের ওপর অতিরিক্ত মূল্য আদায় করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নোট না ছাড়ায় মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় বিক্রেতারা চড়া দামে নোট বিক্রি করছেন। সাধারণ জনগণের পাশাপাশি, তফসিলি ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও এই বাজার থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করছেন।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) মতিঝিল সেনা কল্যাণ ভবনের সামনে সরেজমিনে গিয়ে নতুন নোট বিক্রেতা তাহিরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন যুগ্ম পরিচালকের কাছে ১০০০ টাকা মূল্যমানের ১০ টাকার নতুন নোটের বান্ডিল ১৭০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সেলিনা বেগম ও গোলাম মোস্তফাসহ আরও অন্তত এক ডজন বিক্রেতাকে ২০ টাকার বান্ডিল (মূল্য ২০০০ টাকা) ২৭০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। ৫০ টাকার বান্ডিল (মূল্য ৫০০০ টাকা) ৫৮০০ টাকায় এবং ৫ টাকার বান্ডিল (মূল্য ৫০০ টাকা) ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুগদা থেকে আসা ক্রেতা আলিফ হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'আমি বাচ্চাদের ঈদের সালামি দেওয়ার জন্য ১০ টাকার দুটি বান্ডিল কিনেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নোট দিচ্ছে না, তাই বাধ্য হয়েই এখানে আসতে হয়েছে। তবে দাম অনেক বেশি, আগের ঈদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।'
নোট বিক্রেতা আলমগীর জানান, 'ঈদের এখনও প্রায় পাঁচ দিন বাকি, এই মুহূর্তে ১০০০ টাকার নতুন নোট ৭০০-৮০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে দাম আরও বাড়তে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রতি বছর ঈদের আগে সরকার বাজারে প্রায় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়ে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাংক থেকে এই নোট সংগ্রহ করি। কিন্তু এবার সরকার নতুন নোট না ছাড়ায় মজুদ থাকা নোটের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।'
তিনি বলেন, 'শুনেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরোনো নোট উঠিয়ে নিচ্ছে। তবে আমি মনে করি বাজার থেকে শেখ মুজিবের ছবিযুক্ত নোট পুরোপুরি তুলে নিতে অনেক বছর লাগবে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কাজ করি বলে প্রতি বছর ঈদের আগে আত্মীয়স্বজনরা আমার কাছে নতুন নোটের জন্য অনুরোধ করেন। আমরা প্রায় ১ লাখ টাকার নতুন নোট পেতাম। কিন্তু এ বছর নতুন নোট না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে আমাকে খোলা বাজার থেকে কয়েক হাজার টাকার নতুন নোট কিনতে হবে।'
সোনালী ব্যাংক পিএলসি-র শাখা ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, 'এ বছর গ্রাহকদের নতুন নোটের চাহিদা তুলনামূলক কম, কারণ তারা জানেন ব্যাংক নোট সরবরাহ করবে না। তাই আমরা তাদের পুরোনো নোট দিয়েই চাহিদা মেটাচ্ছি, এতে কোনো সমস্যা হয়নি।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের একটি সূত্র টিবিএসকে জানায়, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে খোলা বাজারের নোট ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা নতুন নোট বিক্রির মাধ্যমে কমিশন নিয়ে থাকেন।
সূত্রটি আরও জানায়, নতুন নোট তিনটি পর্যায়ে বিক্রি হয়— প্রথমত, ব্যাংক কর্মকর্তারা দালালদের কাছে কমিশনের শর্তে নতুন নোট সরবরাহ করেন, দ্বিতীয়ত, দালালরা সেগুলো সংগ্রহ করে রাস্তায় যান, এবং তৃতীয়ত, দোকানদার নিয়োগ দিয়ে সাধারণ জনগণের কাছে সেগুলো বিক্রি করেন।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, মে মাসের শেষ নাগাদ নতুন নকশার নোট বাজারে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, '২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের বিপ্লবের অনুপ্রেরণায় নতুন নোটের ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে। তবে বাজারে আসতে কিছুটা সময় লাগবে।'
তিনি আরও বলেন, 'যেসব নতুন নোট বাজারে প্রচলিত রয়েছে, সেগুলো হয়তো আগে থেকেই মজুত ছিল। এ ধরনের অবৈধ লেনদেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উচিত এই অনৈতিক ব্যবসা বন্ধ করা।'