দ্বিতীয় দিনে বেক্সিমকোর ৭ কারখানার ১৬ হাজার শ্রমিক পেল বকেয়া ৫৫ কোটি টাকা

গাজীপুরের কাশিমপুরের সারাবো এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ ১৪ শিল্পকারখানার মধ্যে মোট ৯ কারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার (১০ মার্চ) দ্বিতীয় দিনে বন্ধ সাত কারখানার প্রায় ১৬ হাজার ১৪২ জন শ্রমিকের মধ্যে তাদের পাওনা বাবদ ৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'বেক্সিমকো ইন্ডস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ ঘোষণা করা ১৪ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাবদ তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ রোববার থেকে শুরু হয়। রোববার প্রথম দিনে ক্রেসিন্ট এক্সেসরিজ ও ইয়েলো অ্যাপারেলসের ২৪৫ জন শ্রমিকের বকেয়া পাওনা বাবদ প্রায় ৮০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।'
বেক্সিমকো ইন্ডস্ট্রিয়াল পার্কের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আরিফ আহাম্মেদ বলেন, 'রোববার বেলা ২টা থেকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতনসহ সব পাওনা পরিশোধ করা শুরু হয়েছে। সোমবার দ্বিতীয় দিনে সাতটি পোশাক কারখানার ১৬ হাজার ১৪২ জন শ্রমিকের পাওনা বাবদ ৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এসব পাওনা টাকা কারো হাতে দেওয়া হয়নি। সব টাকা শ্রমিক-কর্মচারীদের মোবাইলে অ্যাপস অ্যাকাউন্ট অথবা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে।'
এদিকে, সোমবার বিকালে ইন্ডস্ট্রিয়াল পার্কের হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড কমপ্লাইনস বিভাগের প্রধান খালিদ শাহরিয়ার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, 'বেক্সিমকো তার শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ অব্যাহত রেখেছে। সোমবার বেক্সিমকোর সাতটি পোশাক কারখানার মোট ১৬ হাজার ১৪২ জন শ্রমিকের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি পরিশোধ করেছে। এ পর্যন্ত কোম্পানিটি ৯টি পোশাক কারখানার সব পাওনা পরিশোধ করেছে। অবশিষ্ট কারখানার শ্রমিকদের সব বকেয়া পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে।'
এ বিষয়ে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, 'বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ রোববার অল্পসংখ্যক শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করে। সোমবার আরও ১৬ হাজারের বেশি শ্রমিকের বকেয়া পরিশোধের কথা জানিয়েছে তারা।'
তিনি আরও বলেন, 'শ্রমিকরা সকালে কারখানায় গিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ সেসব কাগজপত্র যাচাই -বাছাই করে বকেয়া পরিশোধ করেছে। কারখানা এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। তবু নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।'
কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেক্সিমকো ইন্ডস্ট্রিয়াল পার্কের মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
৫ আগস্টের পর তিনি গ্রেপ্তার হলে তার মালিকানাধীন ১৪টি কারখানা বিভিন্ন সমস্যার কারণে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বন্ধ ঘোষিত ১৪টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক রয়েছেন ৩১ হাজার ৬৭৯ জন। আর কর্মচারী ১ হাজার ৫৬৫ জন।
গত ৬ মার্চ বেক্সিমকো শিল্পপার্কের ১৪টি বন্ধ ঘোষিত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের জন্য ঋণ হিসেবে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেছে সরকার।
শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের কাছ থেকে বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওসমান কায়সার চৌধুরী চেক গ্রহণ করেন। তারপর গত ৯ মার্চ থেকে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ পর্যায়ক্রমে শুরু হয়েছে।