অর্থনৈতিক মন্দায় নভেম্বরে আমদানি এলসি নিষ্পত্তি ১০ শতাংশ কমেছে
অর্থনীতির স্থবিরতার কারণে চলতি বছর নভেম্বরে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় এলসি নিষ্পত্তি ১০ শতাংশ কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি নভেম্বরে এলসি সেটেলমেন্ট (নিষ্পত্তি) হয়েছে ৪ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ২০২৪ সালের নভেম্বরে হয়েছিল ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছরের আগের মাস অক্টোবরে এলসি সেটেলমেন্ট কমেছিল ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ—অক্টোবরে নিষ্পত্তি হয় ৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, গেল নভেম্বর মাসে নতুন করে এলসি খোলা হয়েছে ৫ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ৫ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার—অর্থাৎ কমেছে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর আগের মাস অক্টোবরে এলসি খোলা কমেছিল ১২ শতাংশ পর্যন্ত।
বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ায় কমেছে আমদানি
ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ায় আমদানি কমেছে, ফলে এলসি নিষ্পত্তি ও খোলা দুইটাই হ্রাস পেয়েছে। বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার মধ্যেও অর্থনৈতিক মন্থরতার প্রতিফলন রয়েছে।
এক বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সাধারণভাবে প্রতি মাসে সাড়ে ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার আমদানির এলসি সেটেলমেন্ট হয়। এবার ৪ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে—যা তুলনামূলকভাবে কম। জুলাই–আগস্টে এলসি কম খোলা হয়েছিল, তার প্রভাবই এখন পড়ছে। রমজানের জন্য সেপ্টেম্বরে এলসি খোলা বেড়েছিল, সামনে সেটেলমেন্ট বাড়ার সম্ভাবনা আছে।"
তিনি জানান, সাইট এলসির ক্ষেত্রে খোলার দেড় মাস পর, আর ডেফার্ড এলসির ক্ষেত্রে ছয় মাস পর সেটেলমেন্ট করা হয়।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "অর্থনীতি এখন স্থবির। ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমেছে, বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণও কমেছে। এটা ইঙ্গিত দেয়—ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী নন। অর্থনীতি স্লো মুডে আছে। নির্বাচন পর্যন্ত এমন অবস্থা থাকতে পারে, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা আছে।"
মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি ও সিইও আহসান-উজ-জামান বলেন, "অর্থনীতি স্লো হওয়ায় ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমে গেছে। ব্যবসার পরিবেশ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।"
ব্যাংকারদের মতে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া মানেই অর্থনৈতিক গতিশীলতা কম। নতুন বিনিয়োগ না হলে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমে যায়, ফলে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি দুটোই কমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাও ব্যবসা সম্প্রসারণে বাধা হয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "এখন নতুন বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। কেউ নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। নির্বাচন হলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। ব্যবসা কম হওয়ায় ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমেছে, এজন্য এলসি খোলা কমছে—আর খোলা কমলে সেটেলমেন্টও কমে।"
নভেম্বরের শেষ দিকে বড় পেমেন্টের চাপ কম থাকায় ডলারের চাহিদাও কমে গিয়ে বাজারে দর নেমে আসে। এতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় দুই মাস পর গত রোববার নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৫৩ মিলিয়ন ডলার কেনে। এরপর থেকেই ডলার মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান বেসরকারি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
