৮ মাসের মন্দা কাটিয়ে সেপ্টেম্বরে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়ে ৬.৩ বিলিয়ন ডলার

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬.৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের মাস আগস্টের তুলনায় ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক অর্থনৈতিক সূচক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে আমদানিকারকেরা ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছিলেন। সেপ্টেম্বরে এলসি খোলার এই বৃদ্ধি আট মাস পর আমদানি কার্যক্রমে উত্থান ঘটালেও, তা এখনো ২০২৫ সালের জানুয়ারির ৬ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় কম।
এ তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, দীর্ঘদিনের মন্দার পর এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কার্যক্রমে পুনরুদ্ধারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মাসে গড় হিসাবে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের এলসি খোলা ঠিক আছে। তিনি জানান, চলতি বছরের আগস্ট ও ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এলসি খোলার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এবারের সেপ্টেম্বরে মূলত ভোগ্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, কাঁচামাল ও সরকারি সার আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি সচল রাখতে মাসিক আমদানিতে আরও ২ বিলিয়ন ডলার যোগ হওয়া প্রয়োজন। "বেশিরভাগ ব্যবসায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচনের অপেক্ষায় আছেন। নির্বাচন শেষে শিল্প খাতে নতুন বিনিয়োগ বাড়বে, তখন আমদানির পরিমাণও আরও বৃদ্ধি পাবে," মন্তব্য করেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা।
সম্প্রতি দেশের শীর্ষ ২০ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর রমজান মাসকে সামনে রেখে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে যথেষ্ট পরিমাণ এলসি খোলার নির্দেশ দেন। তিনি ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহের আশ্বাসও দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে রাখার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংক ঋণের নীতি সুদহার কমানো হয়নি।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত ডলার থাকলেও ব্যবসায়ীরা মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, "বর্তমানে অধিকাংশ আমদানি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নতুন বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে, পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও নতুন ঋণ প্রদানে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। ফলে আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, যা গত এক বছরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। জুলাইয়ে গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সেপ্টেম্বরে নতুন এলসি খোলার পরিমাণ হঠাৎ বেড়েছে। কারণ সামনে বড়দিন রয়েছে। তিনি বলেন, "চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে বেশি ডলার রয়েছে, যা তাদের আরও বেশি আমদানি এলসি খোলার সুযোগ করে দিয়েছে।"