রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি বাড়ায় ডলারের দাম কমেছে ৫০–৭০ পয়সা

হাইলাইটস:
- দুই সপ্তাহে ডলারের দাম কমেছে ০.৫০ শতাংশের বেশি
- ব্যাংকগুলোর ওপর বকেয়া আমদানি বিল পরিশোধের চাপ কমেছে
- চাহিদা কম থাকায় বাজারে ডলারের সরবরাহ আরও বাড়তে পারে
- সামনের দিনে ডলারের দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে
গত কয়েক মাস ধরে রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি থাকা, ব্যাংকগুলোর ওপর বকেয়া আমদানি বিল পরিশোধের চাপ ও ডলারের চাহিদা কমাসহ নানা কারণে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম কমছে।
গত বৃহস্পতিবার রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে ব্যাংকগুলোকে ১২২.৫০ টাকা থেকে ১২২.৬০ টাকা রেট দিতে হয়েছে। অথচ চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেও রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহে ব্যাংকগুলোকে ১২৩ টাকা থেকে ১২৩.২০ টাকা পর্যন্ত রেট দিতে হতো। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম কমেছে ৫০ থেকে ৭০ পয়সা বা ০.৫০ শতাংশের বেশি।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তারা পূর্বাভাস দিয়েছেন, সামনের দিনগুলোতে ডলারের দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা বলছেন, আগামী কয়েক মাসে ডলারের চাহিদা বাড়ার বড় ধরনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আগামী নির্বাচনের অপেক্ষা করছেন। ফলে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত আমদানি বাড়বে না।
অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ভালো। এমন প্রবৃদ্ধি আগামী দিনগুলোতে বজায় থাকলে বাজারে ডলারের সরবরাহ আরও বাড়বে, যা দিনশেষে বিনিময় হার কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির কারণে ডলারের দাম কমছে মন্তব্য করে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সহজ হয়ে এসেছে।
'এর অন্যতম কারণ, ব্যাংকগুলোর ওভারডিউ পেমেন্টের পরিমাণ কমে এসেছে। ফলে এক্সচেঞ্জ রেটের ওপর আগে যে চাপটা ছিল, সেটাও কমে এসেছে,' বলেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার কাতারের দোহায় বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে বাংলাদেশের শুধু বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বকেয়া, এলএনজি ও তেলের পাওনা (বকেয়া) ছিল ৩.২ বিলিয়ন ডলার। গত আট মাসে সেটিকে কমিয়ে ৬০০ মিলিয়ন ডলারে নিয়ে আসা হয়েছে।'
মূল্যস্ফীতি কমতে পারে
ডলারের দাম কমলে তা মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়ক হতে পারে উল্লেখ করে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'ডলারের দাম কমলে আমদানি ব্যয় কমে যায়। ফলে আমদানি করা দ্রব্যের দাম কমার সুযোগ থাকে। এছাড়া আমদানিতে খুব বেশি প্রবৃদ্ধি নেই। প্রতি মাসে আমাদের সাধারণত যে আমদানিটা হয়, সেটাই হচ্ছে। বেসরকারি খাতেও আমদনি প্রবৃদ্ধি তেমন নেই।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ রেমিট্যান্স পেয়েছে ২৩.৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮.৬ শতাংশ বেশি।
ডলারের দাম কমার পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে মুদ্রাটির দাম ১২৩ টাকার নিচে রাখার নির্দেশনার প্রভাবও কিছুটা কাজ করছে উল্লেখ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি নমনীয় হয়ে এসেছে। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ফোন করে ব্যাংকগুলোকে ডলারের রেট কমানোর জন্য বলা হলেও এখন অবস্থা অনেক নমনীয়।
'এখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত। তারা আমাদের বলেছে, খুব প্রয়োজন না হলে ১২৩ টাকার বেশি রেটে রেমিট্যান্স না কিনতে। আমরাও সেভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারণ, ডলারের রেট কম বা বেশি যা-ই হোক না কেন, ব্যাংকগুলোর মুনাফা নির্দিষ্ট। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১ টাকা মুনাফা করছি।'
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও ডলারের দাম মূলত সরবরাহ বাড়ার কারণে কমছে বলে মন্তব্য করেন আরেকটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, 'ডলারের বাজার সবসময়ই চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে ডলারের সরবরাহ গত দুই বছরের মধ্যে অন্যতম ভালো অবস্থানে আছে।
'অন্যদিকে, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ বিনিয়োগ খাতে আমদানি অনেক কমে গেছে। ফলে ডলারের চাহিদা কম। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর হাতে ডলারও আগের তুলনায় বেড়েছে এবং রেট কমার ধারায় চলে এসেছে।'
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফও বলেন, চাহিদা কমে যাওয়ায় ডলারের দরপতন হয়েছে।
তিনি বলেন, 'ব্যবসায় নতুন বিনিয়োগ তেমন হচ্ছে না। ফলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি সেভাবে নেই। রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানির যে চাপটা থাকে, সেটি এখন নেই।
'সবমিলিয়ে ডলারের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে—যার কারণে ডলারের রেটও কমছে।'