মৌলভীবাজারে ৩০০ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি প্রায় দেড় লাখ মানুষ

সিলেট বিভাগের অন্যান্য জেলার মতোই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে মৌলভীবাজারে। উজান থেকে নেমে আসা বানের পানি এবং গত দুইদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন ইউনিয়নের শতশত গ্রাম। জেলা প্রশাসনের হিসেবে যা তিনশোর বেশী।
জেলার বড়লেখা উপজেলায় অতি ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবং কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বড়লেখা পৌর এলাকা এবং ১০টি ইউনিয়নের ২০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১,৬০,০০০ জন। পাশাপাশি পাহাড় ধসে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাগ চা বাগানে ১ জন নিহত ও সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামে ১ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিদ্যুতের সাব স্টেশন ইতিমধ্যেই পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নদ-নদীসহ হাকালুকি হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৭টি (ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর, ও কুলাউড়া সদর) ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া কর্মধা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামের ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে মহিষমারা, বাবনিয়া, হাশিমপুর, ভাতাইয়া, পুরশাই গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় নিজ নিজ বাসভবনে অবস্থান করছে। গ্রামগুলোর সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

জুড়ী উপজেলায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এ উপজেলাধীন ২৮টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ সকল গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৪টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর ও সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গোয়ালবাড়ি পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে জুড়ী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাঁধ মেরামত কাজ চলছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে ৬টি ইউনিয়ন যথা: খলিলপুর, মনুমুখ,আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর, চাঁদনীঘাট ইউপি (আংশিক) প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত হাজার।
রাজনগর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এর কারণে ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার।

শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে ৫টি ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় চার হাজার।
কমলগঞ্জ উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পাড় ভেঙ্গে অত্র উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, 'বন্যা পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন কর্তৃক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।'