রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সতর্কতা

তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি ও অতি ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।
মঙ্গলবার সংস্থাটির জারি করা সতর্কবার্তায় জানানো হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সতর্কসীমা ছুঁতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট জেলার নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া দেশের পশ্চিমাঞ্চলের মহানন্দা, করতোয়া, আপার আত্রাই, যমুনেশ্বরী, টাঙ্গন ও পুনর্ভবা নদীর পানি আগামী তিন দিন পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
এফএফডব্লিউসির নির্বাহী প্রকৌশলী সারদার উদয় রায়হান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ''সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলসহ সারাদেশেই ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আগামী দুইদিন পর্যন্ত বাড়তে পারে।''
তিনি আরও বলেন, ''এই নদী অববাহিকায় আগামী দুই দিন মাঝারি থেকে ভারি এবং পরবর্তী একদিন মাঝারি থেকে মাঝারি-ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তিস্তার পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে।''
তবে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেও দীর্ঘমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি। তার ভাষায়, ''নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও তা একদিনের বেশি স্থায়ী হতে পারে।''
এদিকে ফেনীর বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বেশিরভাগ গ্রামের পানি নেমে গেলেও কিছু কিছু এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে। তবে নতুন করে আর বন্যার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন সারদার উদয় রায়হান।
জানা গেছে, ফেনীর বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ সড়ক, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও মানুষের ঘরবাড়ি। তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তথ্যে বলা হয়েছে, জেলায় ১২৬টি গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৯০ কোটি টাকা। শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন হাজার ৪৭০ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রাণিসম্পদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। এছাড়া দুই হাজার ৩৩০টি পুকুর, দীঘি ও খামার ভেসে গেছে।
এদিকে ভারতের দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) মঙ্গলবার সকাল থেকে পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধারের ড্যাম খুলে পানি ছাড়তে শুরু করেছে। দামোদর নদী দিয়ে অতিরিক্ত পানি দুর্গাপুর ব্যারেজ হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে হাওড়া, হুগলি ও পূর্ব বর্ধমান জেলার দিকে। এর ফলে দামোদর তীরবর্তী এলাকায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের দশটি জেলার প্রশাসনকে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে ভারতের ড্যাম থেকে পানি ছাড়ার এ ঘটনায় বাংলাদেশে বন্যার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সারদার উদয় রায়হান। তিনি টিবিএসকে বলেন, ''ভারত থেকে কখন ড্যাম খোলা হয়, সে তথ্য সাধারণত আমাদের সঙ্গে শেয়ার করা হয় না। তবে বর্তমানে যে ড্যাম খোলার কথা শোনা যাচ্ছে, তার পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ পশ্চিমবঙ্গের ওই অংশের পানি সরাসরি বঙ্গোপসাগরে চলে যায়।''