মাঝরাতে ওষুধ ও আইসিইউর জন্য হাহাকার

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ওষুধের দোকানগুলো প্রতিদিন রাত ১১টার পর একে একে বন্ধ হতে থাকে। সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে আহত রোগীদের যখন একে একে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন ছয়-সাতটি ফার্মেসি ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ ছিল।
ফলে সৃষ্টি হয় ওষুধ সংকট। বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়া রোগীদের স্বজনেরা দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে ওষুধ সংগ্রহে। দেড় থেকে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের মজুত শেষ হয়ে যায়। উপায় না পেয়ে ফার্মেসিগুলো থেকে বিকল্প ওষুধ নিতে বাধ্য হয় রোগীর স্বজনেরা। অনেকে ওষুধের দোকানদারকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ওষুধের বৃহৎ বাজার হাজারী গলিতে গিয়ে ওষুধ সংগ্রহ করে আনে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনে এপোলো ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী নুর নবী বেলাল বলেন, 'সাধারণত বার্ন ইউনিটে এত সংখ্যক রোগী একসাথে আসেনা। তাই এসব ওষুধ আমাদের স্টকেও ছিলোনা। অধিকাংশ দোকান যেহেতু বন্ধ ছিলো একই ধরনের ওষুধ সরবরাহ করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। ফলে পর্যাপ্ত ওষুধ আমরা সরবরাহ করতে পারেনি।'
ফার্মেসি মালিকরা জানায়, ইভেন্টি, অপটিমক্স, মনিজেন, মক্সিকুইন, মক্সিলোসিন, নিওট্রাসিন অয়েন্টমেন্ট, পলিট্রাসিন অয়েন্টমেন্ট, নিওবেট অয়েন্টমেন্ট, বার্না ক্রিম, সিলক্রিম, লুবটিন, ল্যাক্রিমা এল্ড, প্রোটিয়ার এপ্রোসিন অয়েন্টমেন্ট প্রভৃতি ওষুধগুলোর স্টক শেষ হয়ে যায়।
গাজী ফার্মেসির কর্মকর্তা রাজু বলেন, তাদের কাছে বার্নের যেসব ওষুধ ছিলো সেগুলো দিয়ে রাত ১টা পর্যন্ত চালানো সম্ভব হয়েছে। এরপর বিকল্প ওষুধ চালাতে হয়। একপর্যায়ে রাত ২টার পর প্রয়োজনীয় সব ওষুধ শেষ হয়ে যায়। হাসপাতালে একসঙ্গে এতজন অগ্নিদগ্ধ রোগী আসায় রাতে ওষুধের সংকট তৈরী হয়।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের রেজিস্টার ডা. লিটন পালিত বলেন, 'এরকম ঘটনার মুখোমুখি আমরা কখনো হইনি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এতগুলো রোগী একসাথে আসাতে আমাদের দুটি বিষয়ে সংকটে পড়তে হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আইসিইউ সংকট এবং অন্যটি ওষুধ সংকট। আইসিইউতে সিট সংকুলান না হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বেশ কয়েকজন রোগীকে আমরা সামরিক হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি।'
তিনি আরো বলেন, 'আমরা যে ওষুধগুলো রোগীর স্বজনদের লিখে দিয়েছি, রাতে তারা সে সব ওষুধের সবগুলো আনতে পারেনি। পরে তারা বিকল্প কোম্পানির ওষুধ নিয়ে আসে। একই মানের না হলেও ওষুধগুলো প্রয়োগ করতে হয়েছে। এক রোগীর জন্য আনা ওষুধ অন্য রোগীদের প্রয়োগ করতে হয়েছে। সকাল হলে ধীরে ধীরে ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।'
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, 'যাদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে তাদের জন্য সামনে আইসিইউ প্রয়োজন হবে। কিন্তু চমেকে আইসিইউ খালী নেই। সকালে পরিস্থিতির অবনতি এড়াতে এজন্য বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালকে আইসিইউ রেডি রাখার জন্য বলা হয়েছে।'
অন্যদিকে, বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের কারও হাত নেই, আবার কারও পা নেই। একজনতে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্যদের অভিভাবকদের যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ।