চট্টগ্রাম-ঢাকা ২৫০ কি.মি. পাইপলাইন চালু হচ্ছে শনিবার, জ্বালানি পরিবহনে নতুন যুগের সূচনা

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে আগামীকাল শনিবার (১৬ আগস্ট) থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হচ্ছে। এদিন চট্টগ্রামের গুপ্তাখালে পদ্মা অয়েল টার্মিনালে এই সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের এই কার্যক্রম দেশের জ্বালানি খাতের ইতিহাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে তেল চুরি ও অপচয় ঠেকানোর পাশাপাশি এটি জ্বালানি সরবরাহের সময় কমাবে, সড়কপথে যানজট হ্রাস করবে ও পরিবহন ব্যয় কমিয়ে আনবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি চালু হওয়ার পর জ্বালানি সরবরাহের সময় ৪৮ ঘণ্টা থেকে কমে ১২ ঘণ্টায় নেমে আসবে এবং প্রতি বছর জ্বালানি পরিবহন ব্যয়ে প্রায় ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
এর আগে প্রকল্প পরিচালক আমিনুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছিলেন, 'চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত ডিজেল সরবরাহের একাধিক সফল ট্রায়াল হয়েছে। পাইপলাইন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আগামী ১৬ আগস্ট এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।'
৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।
এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কয়েক দফায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। গত দেড় মাসে পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় প্রায় পাঁচ কোটি লিটার ডিজেল পাঠানো হয়েছে পাইপলাইনে।
বহু ধরে চট্টগ্রামের ডিপো থেকে ট্যাংকার জাহাজে করে নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য গন্তব্যে জ্বালানি সরবরাহ করা হতো। এই প্রক্রিয়া ছিল ধীর ও ব্যয়বহুল। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, এ কার্যক্রম পরিচালনায় মাসে ১১০টিরও বেশি জাহাজের প্রয়োজন হতো, যার বার্ষিক খরচ ছিল প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা। এখন সেই খরচ কমে হবে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। ফলে প্রতি বছর অন্তত ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন
২০১৫ সালে জ্বালানি পরিবহনের খরচ কমানো ও চুরি ঠেকানোর লক্ষ্যে এই পাইপলাইনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। সেবার বিপিসি একটি সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) সম্পন্ন করে এবং ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরে নীতিগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়া হয়।
২০১৮ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) 'চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা জ্বালানি তেল পরিবহনের পাইপলাইন নির্মাণ' প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এ প্রকল্পের প্রাথমিক বাজেট ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা।
প্রকল্পটির নকশায় বছরে ২৭-৩০ লাখ টন জ্বালানি পরিবহনের সক্ষমতা রাখা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ৫০ লাখ টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
প্রযুক্তিগত রুট ও কাঠামো
এই পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য মোট ২৫০ কিলোমিটার। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ হয়ে ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২৪১.২৮ কিলোমিটার এই পাইপলাইন নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়া গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ৮.২৯ কিমি দীর্ঘ ১০ ইঞ্চি ব্যাসের আরেকটি সংযোগ পাইপলাইন রয়েছে।
এই রুটে পাইপলাইন ২২টি নদী ও খাল পার হয়েছে, যার মধ্যে ১০টি বড় নদীও রয়েছে। এসব জায়গায় নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বের জন্য বেশিরভাগ অংশ নদীর তলদেশ দিয়ে স্থাপন করা হয়েছে।