দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: ‘৫০ টাকায় নাস্তা খেতাম এখন পান্তা ভাত’

জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে মানুষের স্বাভাবিক অভ্যাস পরিবর্তন হওয়া শুরু করেছে, ঋণগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছে অনেকে।
মোঃ আবদুস সালাম (২৫) পেশায় একজন ট্রাক ড্রাইভার। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার একটি ইটভাটা কোম্পানির অধীনে মাসিক ১৮ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। খুব ভোরে কাজে বের হওয়ায় বাড়ি থেকে কিছু খেয়ে আসার সুযোগ পান না তিনি। এক ট্রিপের পর প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে তিনি নাস্তা করতেন।
একজন সহকারিসহ ২ জনের ৪টি পরোটা, ২ প্লেট ভাজিতে ৫০ টাকা খরচ হতো। গত একমাস থেকে তিনি সকালে নাস্তা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ এখন সেই পরোটা ও ভাজিতে খরচ হয় ৯০ টাকা।
সালাম বলেন, "মনে হয় আর পরোটা খাওয়া হবে না। এখন সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় পান্তা ভাত নিয়ে বের হই। সকালে নাস্তা খাওয়া বাদ দিয়েছি। সারা দিনে আগে ৫-৬ কাপ চা পান করতাম এখন ১-২ কাপ পান করি।"
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বংশীধারী ভৌমিক। এমপিওভুক্ত এ শিক্ষক মাসে ২৫ হাজার টাকা বেতন পান। তার পরিবারের ৩ জন ছেলেমেয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে।
বংশীধারী ভৌমিক জানান গত এক বছর পর্যন্ত কোন রকমে টেনেটুনে সংসার চালাতেন। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় গত মাসে তার স্বাভাবিক ব্যয় ৫ হাজার টাকা বেড়ে গেছে।
তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুনের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রচুর আলোচনা হলেও সোমবার টিবিএসের পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন বাজারে নানা পণ্যের দাম জানতে চাইলে দাম বাড়েনি এমন কোনো পণ্য পাওয়া যায়নি।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার। এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী ওই ছাত্রী জানায়, আগে দিস্তা কাগজ কিনতেন ১৫ টাকা দরে। গতি মাস থেকে সেই কাগজ ২০ টাকা দিস্তা। তারা ৩ ভাই বোনের কাগজের জন্য এখন তার বাবার মাসে ২শ টাকার বেশি খরচ হয়।
কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী আনোয়ার আহমেদে জানান, কাটা কাপড়ের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। সাধারণ মানুষ এখন জামা-কাপড় কেনা কমিয়ে দিয়েছে।
একই বাজারের হার্ডওয়ার বিক্রেতা মোঃ সিরাজ জানায়, হার্ডওয়ার সামগ্রী দাম বেড়েছে প্রায় দেড় থেকে দুইগুন। এ রকম চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের পক্ষে হার্ডওয়ার সামগ্রী কেনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
গ্রামীণ জীবনে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কেমন প্রভাব পড়েছে সে সম্পর্কে জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোঃ আলা উদ্দিন জানান, অনেক গ্রাহক তাদের সঞ্চিত অর্থ আস্তে আস্তে ভাঙা শুরু করেছে এবং জমা রাখার প্রবাহ গত সপ্তাহের তুলনা মনে হয় কমে যাচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সভাপতি মোঃ আলী হোসেন জানান, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে নীতিহীন ব্যবসায়ীরা দায়ী। "তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও অস্বাভাবিক দাম ওঠা-নামা করছে।"
সব মিলে দাম বৃদ্ধির কারণে এখন গ্রামের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে বড় রকমের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে বলে জানা তিনি।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এখন অনেকেই খরচ করতে পারছেন না বলে মনে করেন তিনি।