রমজানে দলের সাংগঠনিক কাঠামো দৃঢ় করবে এনসিপি, নেবে নিবন্ধনের প্রস্তুতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত হয়েছে দেশের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই রমজানে দলটি তাদের গঠনতন্ত্র, আদর্শ, প্রতীক ও অন্যান্য মৌলিক বিষয় চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেবে।
শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এনসিপির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এরপর দলটির বড় কোনো কার্যক্রম বা আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি।
তবে এনসিপির নেতারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, তারা রমজান মাসে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক কার্যক্রমের পরিকল্পনা নেবেন, যার মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে দলকে দেশব্যাপী শক্তিশালী করা হবে।
দলীয় নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা চলছে। চলতি সপ্তাহেই বৈঠক করে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে কমিটি। পাশাপাশি পুরো রমজানজুড়ে ইফতারকেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনের পাশাপাশি সাংগঠনিক কাঠামোকে চূড়ান্ত করার কাজ চলবে।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী টিবিএসকে জানান, এখনও দলের গঠনতন্ত্র, সুনির্দিষ্ট আদর্শ, প্রতীক বা অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
'খুব শিগগিরই একটি বৈঠক হবে। সেখানে দলীয় কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হবে সেখানে,' তিনি বলেন।
যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, রমজান মাসে দলের একটি ইফতার পার্টি হবে এবং ২৬ মার্চ উদযাপন করা হবে।
'এর বাইরে দলের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের শর্তাবলি পূরণে কার্যক্রম বাস্তবায়নে মনোযোগ দেওয়া হবে,' বলেন তিনি।
দেশব্যাপী জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা কীভাবে নতুন দলে আসবেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তুষার বলেন, 'আমাদের একটি সাংগঠনিক টিম মাইগ্রেশন পলিসি ঠিক করবে। তবে এটা বলা যায় যে নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ পার্টিতেই চলে আসবেন।
'এর মধ্যে যারা রাজনীতি করতে চান না, তারাই শুধু নাগরিক কমিটিতে থাকবেন।'
এদিকে একজন যুগ্ম সদস্যসচিব টিবিএসকে বলেন, জনস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট বিষয়কে প্রধান্য দিয়ে দলটির আগামীর কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেতে গঠনতন্ত্র তৈরির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের অগ্রাধিকারে থাকবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনীয় সেবার মানোন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
'দলের গঠনতন্ত্রে সার্বজনীন অবৈতনিক শিক্ষা ও সহজে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ওপর জোর দেওয়া হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নতুন কর্মসংস্থান তৈরীর উপরও গুরুত্ব দেওয়া হবে,' বলেন তিনি।
দলটির আত্মপ্রকাশের পর শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, এনসিপি বাংলাদেশের ছাত্রজনতার দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে চায়, তাদের মহাকাব্যিক সংগ্রামের বীরত্বগাথা এবং তাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার গল্পগুলো শুনতে চায়।
তিনি আরও বলেন, 'কামার, কুমোর, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সকল স্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ব।' হাসনাত এখন চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের আংশিক অঞ্চলের (ঢাকা দক্ষিণ সিটি, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ) দায়িত্বে রয়েছেন।
উত্তরাঞ্চলের সংগঠক মো. সারজিস আলমও একই সুরে ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেখানে তিনি শ্রমিক, ছাত্র ও নারীদের সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের কণ্ঠ শোনার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, 'পরম সৌভাগ্যে পাওয়া আমানতস্বরূপ এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাই। জীবনের বিনিময়ে হলেও মানুষ আর দেশের জন্য কিছু করে যেতে চাই।'
সারজিসের আওতাধীন অঞ্চল হচ্ছে রংপুর বিভাগ, রাজশাহী বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগ, সিলেট বিভাগ ও ঢাকা বিভাগ (আংশিক) (ঢাকা মহানগর উত্তর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ)
দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, 'সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা ও তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে রাজনীতির অগ্রাধিকার।'