চট্টগ্রামে আবৃত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু’, মাঝপথে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত একটি আবৃত্তি অনুষ্ঠান মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল পৌনে ১১টার দিকে নগরীর কোতোয়ালী থানার পুলিশ প্লাজার বিপরীতে এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, প্রায় ২০ বছর ধরে চট্টগ্রাম আবৃত্তি সম্মিলনের ব্যানারে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন হয়ে আসছে, যেখানে চট্টগ্রামের প্রায় ২০টি সংগঠন অংশ নেয়। এ বছরও সকাল সাড়ে ৯টায় কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এক পর্যায়ে এক আবৃত্তিকার কবি রবিউল হুসাইন রচিত 'এক সেকেন্ডে মাত্র চার ফুট' কবিতা পাঠ করছিলেন। কবিতার মাঝে 'বঙ্গবন্ধু' শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার পর একটি পক্ষ আপত্তি তোলে। এরপর আয়োজকদের ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় এবং অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
কবিতায় 'ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুকে ভুলতে বসেছি/ জয় বাংলা নামক দীপ্র বজ্রনির্ঘোষ ভুলতে বসেছি/ সাতই মার্চের অতন্দ্র স্বাধীনতার ডাক ভুলতে বসেছি/ ভাসানীর আস্সালামুআলাইকুম ভুলতে বসেছি….' এই লাইনগুলো পাঠের পরই আপত্তি তোলা হয়। আবৃত্তিকারীকে হেনস্তা করা হয় এবং তাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নগর আহ্বায়ক এম এ মুসা বাবলু ও সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ।
আয়োজকদের অন্যতম নরেন আবৃত্তি একাডেমির মিশফাক রাসেল টিবিএসকে বলেন, 'মঞ্চে যে শিল্পী আবৃত্তি করছিলেন, তিনি যে এই কবিতা পাঠ করবেন, তা আমরা জানতাম না। আবার কবিতা পাঠের কারণে কেউ এসে প্রতিবাদ করবে, সেটাও অনুমান করতে পারিনি।'
তিনি দাবি করেন, 'আমার মনে হয়েছে, ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে অনুষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ওই কবিতার পর আরও দুটি গান পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।'
এ বিষয়ে জাসাস চট্টগ্রাম নগর শাখার সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ টিবিএসকে বলেন, 'কবিতায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে "রাজাকার" ও "পুরনো শকুন" বলা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে জননী বলা হয়েছে। আকাশ কালো মেঘাচ্ছন্ন বলা হয়েছে। এসব কারণে স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।'
'আমরা তখন শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাচ্ছিলাম। আমাদের ব্যানার দেখে মানুষজন ডেকেছেন, আর আমরা তাদের জনরোষ থেকে রক্ষা করেছি। তারা মূলত আওয়ামী লীগের দোসর,' তিনি দাবি করেন।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম বলেন, 'একটি আবৃত্তি অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারণের পর সমস্যা হয়েছিল বলে শুনেছি। আমাদের মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে ছিল, তবে তারা যাওয়ার আগেই অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এতে কোনো সহিংসতার তথ্য আমরা পাইনি।'