নোভার্টিসের ২৩০ কোটি টাকার শেয়ার রেডিয়েন্টকে হস্তান্তর স্থগিতের রিট অন্য বেঞ্চে উপস্থাপন হবে

সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ শেয়ার (৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬ শেয়ার) ২৩০ কোটি টাকায় রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে করা রিট হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন রিটকারী।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. খায়রুল আলম এবং বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েশের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রিটের ওপর শুনানির পর, আদালত রিট মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার (আউট অব লিস্ট) আদেশ দিলে এই সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইকতান্দার হোসেন হাওলাদার।
তিনি বলেন, "রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কর্তৃক নোভার্টিসের শেয়ার অধিগ্রহণে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে রিটে। বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি শেয়ার হস্তান্তরের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।"
এর আগে, গত ২৬ জানুয়ারি বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রিটের ওপর শুনানিকালে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কাছে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে বলে আদালতকে জানায় দুদক। এরপর আদালত রিট আবেদনের ওপর শুনানি এক মাসের জন্য মুলতবি রাখেন।
অ্যাডভোকেট ইকতান্দার হোসেন হাওলাদার টিবিএসকে বলেন, "হাইকোর্টের মুলতবি আদেশের পরেও রিট মামলটি এই বেঞ্চে চলতে পারে না বলে আবেদন জানান রেডিয়েন্টের পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বি এম ইলিয়াস কচি, ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দার ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আরো কয়েকজন আইনজীবী। এরপর আদালত মামলটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন।"
"পরে সোমবার রিটটি শুনানির জন্য মো. খায়রুল আলম এবং বিচারপতি কেএম ইমরুল কায়েশের বেঞ্চে উপস্থাপন করা হলে, সেখানে রেডিয়েন্টের পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বি এম ইলিয়াস কচি, ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দার ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আরও কয়েকজন আইনজীবী এই রিট না চলার পক্ষে উপস্থাপন করলে এই বেঞ্চ শুনানি করে।"
"আদালতে উল্লেখ করে শুনানির জন্য পর্যাপ্ত সময়ের আবেদন করা হলে, সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করায়, রিট পক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি আউট লিস্ট করেন আদালত— যা পরবর্তীতে অন্য কোনো হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারিত হবে," যোগ করেন অ্যাডভোকেট ইকতান্দার হোসেন হাওলাদার।
এর আগে, নোভার্টিসের ২৩০ কোটি টাকার শেয়ার হস্তান্তর প্রতিরোধে ৮ জানুয়ারি সংশ্লিষ্টদের বরবার লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোভার্টিস বাংলাদেশ লিমিটেডের ২৩০ কোটি টাকার প্রায় ১০ লাখ শেয়ার রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর স্থগিত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ সংশ্লিষ্টদের ওই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। এই শেয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বৈদেশিক বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট।
নোটিশে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ শেয়ার অর্থাৎ, ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬ শেয়ার বিক্রির চেষ্টা চলছে। শেয়ারগুলো ২৩০ কোটি টাকায় রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে বিক্রয়ের প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। ইতোপূর্বে ক্রয় বিক্রয় প্রক্রিয়াটি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কর্নধার শেখ হাসিনা সরকারের বৈদেশিক বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পরিবর্তিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারে স্বার্থসংশ্লিষ্ট, কিন্তু অপেক্ষাকৃতভাবে কম পরিচিত রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, শেয়ারের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজার মূল্য বিবেচনায় না নিয়ে গোপন চুক্তির ভিত্তিতে অতিরিক্ত বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এ অবস্থায় প্রকৃত বাজার মূল্য ব্যতিরেকে অনাবাসী শেয়ার ধারকদের অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে— যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অধীনে অপরাধ।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এবং আলোচ্য অনাবাসী শেয়ার ধারকের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে শেয়ারের অতিরিক্ত মূল্য প্রদর্শন করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করার চেষ্টা করছেন বলে উল্লেখ করা হয় নোটিশে।
আরও বলা হয়, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি পতিত স্বৈরাচার সরকারের সর্বশেষ একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে শেখ হাসিনার নির্দেশে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, আলোচ্য শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় শেয়ারের প্রকৃত বাজার মূল্য অপেক্ষা, অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।