পরিবারের সদস্যদের ৩৫.৫৫ কোটি টাকার শেয়ার উপহার দেবেন ক্রাউন সিমেন্টের পরিচালকরা

দেশের অন্যতম শীর্ষ সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্রাউন সিমেন্টের দুইজন প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক তাদের পরিবারের সদস্যদের মোট ৭৪ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর মধ্যে, পরিচালক মো. আলমগীর কবির উপহার দিচ্ছেন ৫৯ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার। আর অন্য পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ১৫ লাখ শেয়ার উপহার দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ারের দর ছিল ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা। এই হিসাব অনুযায়ী, উপহার হিসেবে দেওয়া শেয়ারগুলোর মোট মূল্য প্রায় ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
এই শেয়ার হস্তান্তরের প্রক্রিয়া স্টক এক্সচেঞ্জের স্বাভাবিক লেনদেন পদ্ধতির বাইরে সম্পন্ন হবে এবং তা ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, মো. আলমগীর কবির তার ছেলে সোলায়মান কবিরের কাছে ২৯ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার, স্ত্রী কামরুন নাহারের কাছে ১৫ লাখ শেয়ার এবং মেয়ে রাইসা কবির, ছেলে রায়হানুল কবির ও মেয়ে নুসাইবা কবিরের কাছে ৫ লাখ করে শেয়ার হস্তান্তর করবেন। সকল প্রাপকই কোম্পানিটির সাধারণ শেয়ারধারী।
একইভাবে, ক্রাউন সিমেন্টের আরেক প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম তার ছেলে সালেহীন মুশফিক সাদাফের কাছে কোম্পানির ১৫ লাখ শেয়ার হস্তান্তরের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
এই শেয়ার হস্তান্তরও উপহার হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জের স্বাভাবিক লেনদেন পদ্ধতির বাইরে সম্পন্ন হবে এবং একই সময়ের মধ্যে শেষ হবে। সাদাফও কোম্পানির সাধারণ শেয়ারধারী।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই শেয়ার দেওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিবারের সদস্যদের ব্যবসায় যুক্ত করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে তারা কোম্পানির পরিচালনায় নেতৃত্ব দিতে পারে।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ক্রাউন সিমেন্ট ৮০৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নেট রাজস্ব আয় করেছে, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় ছিল ৭১১ কোটি টাকা।
এই সময়ে কোম্পানির নিট মুনাফা হয়েছে ১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ কম। আগের বছর একই সময়ে মুনাফা ছিল ৩৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
এই প্রান্তিকে প্রতি শেয়ারে আয় হয়েছে ১ টাকা ২৭ পয়সা, যেখানে আগের বছর ছিল ২ টাকা ৪৪ পয়সা।
ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে প্রতি শেয়ারে নিট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৬ টাকা ৪৩ পয়সা।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, নতুন উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর কারণে অতিরিক্ত অবচয়, দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সুদ, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং বাজার শেয়ার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজ্ঞাপন ও জনবল খাতে বেশি ব্যয় হওয়ায় প্রতি শেয়ারে আয় কমেছে।
তবে প্রতি শেয়ারে অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে, কারণ কোম্পানিটি আগের চেয়ে বেশি নগদ টাকা আদায় করেছে। এছাড়া, নতুন ষষ্ঠ ইউনিটের অবচয়সহ কিছু খরচ নগদে দিতে হয়নি। আর সরবরাহকারীরা বাকি পরিশোধের জন্য বেশি সময় দিয়েছে।
২০২৪ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ২১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারহোল্ডিং কাঠামো ছিল– প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক ৬৫.৩৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৮.৩৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারী ০.০৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারী ১৬.২৮ শতাংশ।