বন্যা ও পূজায় বন্ধের অজুহাতে যশোরের বাজারে ১০০ টাকার কাঁচামরিচ ২৮০ টাকা

আমদানি স্বাভাবিক থাকার পরেও যশোরের বড় খুচরা বাজারে ২৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। কারণ, হিসেবে দেশে বন্যা ও গেল দুর্গাপূজায় টানা পাঁচ দিন ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। যদি গত এক সপ্তাহে ১ হাজার ৪২১ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। সে কারণে, দাম বাড়ায় বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আমদানি বাড়লেও আড়তে তেমন কমেনি কাঁচা মরিচের দাম। গেল দুর্গাপূজায় টানা পাঁচ দিন বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ এবং দেশে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যা পরিস্থিতিতে পুঁজি করে– পণ্য গুদামজাত করে দাম বাড়িয়েছেন আড়তদাররা।
আজ বৃহস্পতিবার শহরের বড় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্গাপূজার আগে এসব বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। পূজার ছুটির মধ্যে তা বিক্রি হয়েছে ৩৮০-৪০০ টাকা কেজি দরে। সেই ধারাবাহিকতায়, এখনও ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।
অথচ বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি কয়েকগুণ বেড়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার বলেন, চলতি মাসের ১৪ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ দিনে ১২২ ট্রাকে করে ১ হাজার ৪২১ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেনা থেকে শুরু করে শুল্ককর মিলিয়ে আমদানি করা এই মরিচের কেজিপ্রতি খরচ পড়েছে ৯৬-১০০ টাকা। অথচ যশোরের বিভিন্ন উপজেলার বাজারগুলোতে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আমদানি করা ভারতীয় কাঁচা মরিচ।
বেনাপোল চেকপোস্ট বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে আসা আফজালুর রহমান বলেন, 'চলতি মাসের শুরুতে কাঁচা মরিচ কিনেছিলাম ৯০ টাকা কেজি। আজ দেখছি ২৫০ থেকে টাকা কেজি। এভাবে চললে আমরা চলবো কী করে?'
আরেক ক্রেতা রফিকুল বারি বলেন, 'আমরা বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকার বাসিন্দা। শুনছি এবং দেখছি, এই বন্দরে প্রচুর কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে। সেই হিসেবে তো ১০০ টাকার নিচে দাম হওয়া দরকার। অথচ এখনও আমাদের প্রায় ৩০০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ কিনে খেতে হচ্ছে।'
যশোর শহরের বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শংকর কুমার বলেন, 'বেশি দামে মরিচ কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। সব সবজি এবং পেঁয়াজের দামও আকাশছোঁয়া। তবে পূজার কারণে বন্দর বন্ধ থাকায় বাজারের বড় ব্যবসায়ীরা বস্তা বস্তা কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ মজুত করেছিল দাম বেশি পাওয়ার আশায়। আমদানি স্বাভাবিক হলে আবার দাম কমে যাবে।'
বেনাপোল বন্দরের পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, 'পেঁয়াজে তেমন পড়তা না থাকায়— এখন কাঁচা মরিচ আমদানি করছি। বর্তমানে কাঁচা মরিচ আমদানি অনেক বেশি পরিমাণে হচ্ছে। বাজারে মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টা শিগগিরই কেটে যাবে। ৯ দিনে ১২২ গাড়ি কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে।'
যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শাহীন জানিয়েছেন, 'জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে তারা নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করছেন। ক্রয়-বিক্রয় রসিদ, মূল্যতালিকা, বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে কি না, সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মরিচের দামে কোনও কারসাজি হচ্ছে কি না, তা-ও যাচাই-বাছাই করা হবে।'