নতুন শুল্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ৫০% ছাড়াতে পারে

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করায় এখন প্রশ্ন উঠছে- এই হারে আদৌ কি মোট শুল্ক কমছে, নাকি বেড়েই যাচ্ছে।
শিল্প সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগে থেকেই গড়ে ১৫ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপিত ছিল। এর সঙ্গে নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে মোট শুল্কের হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
অর্থাৎ, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা প্রতিটি ১০ ডলারের পোশাকের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের এখন ৫ ডলারের বেশি শুল্ক দিতে হবে, যা গত এপ্রিলের আগ পর্যন্ত ছিল ১.৫ ডলার।
তবে এই নতুন শুল্ক কাঠামো কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়—ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে চালু হওয়া নীতির আওতায় অন্যান্য দেশও একই হারে শুল্কের মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও সরাসরি এই শুল্ক রপ্তানিকারকদের দিতে হয় না, বরং তা পড়ে মার্কিন আমদানিকারকদের ওপর। তবে অতিরিক্ত খরচের কারণে ক্রেতারা বিকল্প, কম শুল্কযুক্ত উৎসের দিকে ঝুঁকতে পারেন। এতে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, 'বাংলাদেশকে গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বহন করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'এটা চরম বিপর্যয়ের চেয়েও খারাপ হবে।'
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, 'মার্কিন বাণিজ্য আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক বিদ্যমান শুল্কের ওপর যোগ হবে। শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, যেসব দেশ একই বাণিজ্য বিধিনিষেধের আওতায় আছে, সবার জন্যই।'
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলও এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী দেশ যেমন ভিয়েতনাম ও ভারতও আগে একই রকম শুল্ক হারেই রপ্তানি করত।'
তিনি আরও বলেন, 'এমনকি প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা ট্রাম্পের চিঠিতেও এই ইঙ্গিত ছিল।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময়) সকালে পোস্ট করা এক চিঠিতে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেন, যা তিন মাস আগে প্রস্তাবিত ৩৭ শতাংশ হারের চেয়ে ২ শতাংশ কম।
তবে এটি এখনো ভিয়েতনামের সংশোধিত ২০ শতাংশ শুল্ক হারের চেয়ে অনেক বেশি, যা একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তির আওতায় নির্ধারিত হয়েছে। ওই চুক্তিতে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যে আমদানি শুল্ক তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ট্রাম্পের চিঠিগুলো ১ আগস্ট থেকে কার্যকর নতুন শুল্ক হার উল্লেখ করে ১৪টি দেশের নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে, মিয়ানমার ও লাওসের ওপর ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক।
চিঠিগুলোতে ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট নেতাদের সতর্ক করে বলেছেন, তারা যেন পাল্টা শুল্ক আরোপ না করেন। নইলে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি শুল্ক আরোপ করবে।