শিশু হাসপাতালে ‘বিপজ্জনক চিহ্ন’ নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৭১ শতাংশ ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু: গবেষণা

শনিবার (১৪ অক্টোবর) প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণার ফল থেকে জানা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া শিশুদের ৭১ শতাংশের মধ্যেই 'বিপজ্জনক চিহ্ন' দেখা গেছে।
এ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পেটে ব্যথা, বমি (২৪ ঘণ্টায় অন্তত তিনবার), নাক বা মাড়ি থেকে রক্তপাত, বমি বা মলে রক্ত, এবং ক্লান্ত, অস্থির বা খিটখিটে বোধ করা।
হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে ফলাফল উপস্থাপনের সময় গবেষণাটির নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ ডেন-২ স্ট্রেনে এবং বাকি ১৩ শতাংশ ডেন-৩ স্ট্রেনে আক্রান্ত।
হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চলতি বছরের জুন থেকে আগস্টের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া এক হাজার ৩৯ শিশুর মধ্যে ৭২২ শিশুর ওপর গবেষণাটি করা হয়।
ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ ছিল কিন্তু এনএস১ ও আইজিএম পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ, ভর্তি হওয়া এমন ৫০ জন রোগীর কাছ থেকে রক্ত এবং নাসোফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াব সংগ্রহ করে এসব নমুনা আইসিডিডিআর,বি গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ৫০টি এনএস১ ও আইজিএম নেগেটিভ নমুনার মধ্যে ১৭টি তথা ৩৪ শতাংশ ফলস নেগেটিভ (ডেঙ্গু পরীক্ষার ভুল ফলাফল) ছিল বলে আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় ধরা পড়ে।
এছাড়া ডেঙ্গু নেগেটিভ ১৯ শতাংশ এবং ডেঙ্গু পজিটিভ ১২ শতাংশ রোগী ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাসের মতো বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত বলে গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল, অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, প্রতি বছরই মানুষ ডেঙ্গুর নতুন ধরনের আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের মধ্যে যাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, তারাও হয়তো দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।
'তাই শিশুদের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। শুধু ডেঙ্গু আক্রান্ত নয়, ডেঙ্গু উপসর্গ থাকলেও সেটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, শিশুরা ডেঙ্গুতে খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে,' তিনি আরও বলেন।
অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আমাদের আলাদাভাবে ভাবতে হবে। এবার ডেঙ্গুতে এত রোগী মারা গেছে। এর একটি কারণ হতে পারে ডেঙ্গুর দ্বিতীয় ধরন। এটি একটি বিপজ্জনক সেরোটাইপ।'
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর সংক্রমণ সাধারণত জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকে। তবে এটি বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বেশি হয়। এজন্য জানুয়ারিতে প্রস্তুতি নিতে হবে।
২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করেন এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য সরকারকে বিবেচনা করার জন্য ১৯টি সুপারিশের কথা উল্লেখ করেছিলেন।