হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অর্ধেকের বেশি ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

এ বছর ডেঙ্গুতে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা গেছেন। দেরিতে হাসপাতালে নেওয়ার কারণে এমনটা ঘটেছে বলে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. হালিমুর রশীদ বলেন, "এ পর্যন্ত আমরা ডেঙ্গুতে ১১৪টি মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনা করেছি। এর মধ্যে ৬৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ০–২৪ ঘণ্টার মধ্যে, ১৮ জন ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, ৫ জন ৪৮–৭২ ঘণ্টার মধ্যে এবং ২৫ জন ৭২ ঘণ্টা পর মারা গেছেন।"
তিনি আরও জানান, অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা নিতে দেরি করেছেন—সাধারণত তিন থেকে ছয় দিন জ্বর সহ্য করার পর হাসপাতালে গিয়েছেন। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাদের গড় অবস্থানকাল ছিল মাত্র আড়াই দিন।
ঢাকা ও বরগুনা জেলায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে হাসপাতালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ডিএমসি এইচ)।
চিকিৎসকদের মতে, তরুণরাই তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিতে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৃত্যু ঘটেছে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোমকে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর পরেই রয়েছে এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে—অনেক ডেঙ্গু রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছান, যার ফলে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের মৃত্যু হচ্ছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, চিকিৎসা নিতে দেরি করলে মৃত্যুর ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এবং প্রয়োজন হলে দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
ডা. আবু জাফর জোর দিয়ে বলেন, জনসচেতনতাই ডেঙ্গু মৃত্যুহার কমানোর মূল উপায়।
বাংলাদেশে এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর। ওই দিন মশাবাহিত এ রোগে ১২ জনের প্রাণহানি ঘটে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্যমতে, এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু আগের দিন হলেও হিসাব যোগ হয়েছে ওইদিনের সঙ্গে।
একই সময়ে ৭৪০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন—যা চলতি বছরের এক দিনে সর্বোচ্চ। ফলে দেশে এ পর্যন্ত নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৮৩১ জনে।
গতকাল সকাল পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৬৮৭ জন রোগী।
এ নিয়ে জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮১ জনে। এর মধ্যে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুনে ৮ জন, জুলাইয়ে ১৪ জন, আগস্টে ৩০ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জুনে ৭৯৮ জন, জুলাইয়ে ২ হাজার ৬৬৯ জন, আগস্টে ৬ হাজার ৫২১ জন এবং সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৮৯৭ জন। তথ্যগুলো বলছে, সর্বাধিক আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে সেপ্টেম্বরে।
ডিজিএইচএস মহাপরিচালক বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো শেয়ার করার উদ্দেশ্য হলো জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা। যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হোক না কেন, জনগণ সতর্ক ও সক্রিয় না হলে ডেঙ্গুর মতো সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হবে।"