নৌ শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে স্থবির নৌ-বন্দর, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

নৌ শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে সারাদেশে নৌ-পরিবহন চলাচল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে শনিবার মধ্যরাতে এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেন তারা।
"এই দাবিগুলো নিয়ে এর আগেও ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ কোনো দাবি মানেনি, প্রতিবারই শুধু তারা সময় নিয়েছে। তাই এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি দেয়া হয়েছে। দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে", বলেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুল আলম।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস ছাড়া আন্দোলন ছেড়ে সরবো না।"
এদিকে লঞ্চ ধর্মঘটের কারণে জরুরি কাজে ঢাকাগামী ও ঢাকা থেকে দক্ষিণের জেলাগুলোর যাত্রীরা পড়েছেন মহা দুর্ভোগে।
নদীপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও।
ঢাকা থেকে বরিশালগামী সাইফুল ইসলাম নামের একজন যাত্রী বলেন, "স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সদরঘাট এসেছিলাম। কিন্তু এসে জানলাম লঞ্চ চলবে না। বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরতে হল। শীতের মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে রাতে বাসে চড়তে চাচ্ছিলাম না। সোমবার সকালে বাসে যাব।"
বরিশালের এক যাত্রী মুন্না বলেন, "আমার বাবা অসুস্থ। তাকে দেখানোর জন্য সোমবার ডাক্তারের শিডিউল নেয়া। কিন্তু লঞ্চঘাট এসে জানতে পারি ধর্মঘট চলছে। এখন অসুস্থ বাবাকে নিয়ে কীভাবে ঢাকা যাবো বুঝতে পারছি না। বাবার শারীরিক যে অবস্থা তাতে গাড়িতেও উঠতে পারবে না।"
লাইটার ভেসেল মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ডব্লিউটিসি সাধারণত দৈনিক ৭০-৮০টি লাইটার জাহাজকে বরাদ্দ দেয়। তবে শ্রমিকদের ধর্মঘট হওয়ায় রোববার কোনো জাহাজকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।"
শ্রমিকদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণের পাশাপাশি নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুকের ব্যবস্থা, খাদ্য ও ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কল্যাণ তহবিল গঠন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর জন্য ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান প্রভৃতি।
এদিকে মালিকরা কোন দাবি মানবেন না বলে সরাসরি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ প্যাসেঞ্জার্স ক্যারিয়ার এসোসিয়েশনের (বিআইডব্লিউপিসিএ) দপ্তর সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, "আমরা তাদের কোন দাবি মানতে পারব না। এই মূহুর্তে আমাদের ব্যবসার যে অবস্থা তাতে বেতন বাড়ানো সম্ভব না। এছাড়া তাদের ক্ষতিপূরণের দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।"
"আমরা তাদের অন্য কোন দাবিও মানতে পারব না। সরকার তাদের সাথে বসবে। যদি আমাদের কোন দাবি মানতে বলা হয়, আমরাও লঞ্চ চালানো বন্ধ করে দেব। আমরা কোন সমঝোতা করব না", বলেন তিনি।