নতুন সংবিধান তৈরি ও র্যাব বিলুপ্তি, এনসিপির ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশের ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।এই ইশতেহারের মূল ভিত্তি হলো ন্যায়বিচার, সমতা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার। রোববার (৩ আগস্ট) তিনি এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে না পারার ব্যর্থতা মেনে নিয়ে নতুন বাংলাদেশের এই ইশতেহার ঘোষণা।' ইশতেহারে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্ত করা, একটি গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এর আগে বিকেল ৫টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে 'নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার' শীর্ষক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে উপস্থিত হন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা।
দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, 'এনসিপি বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোতে মৌলিক সংস্কারের কথা বলেছে। এদেশের রাষ্ট্র কাঠামোতে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা জনগণের কাছে জবাবদিহি করে নাই। আমরা এমন এক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চাই, যেখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে মেম্বার পর্যন্ত প্রতিটি জনপ্রতিনিধিকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে কোনো দলের কর্তৃত্বের মধ্যে যেতে দিব না। সচিবালয়ে যে নীতি-নির্ধারন হবে সেই নীতি যেন জনস্বার্থের পক্ষে হয় তা স্বচ্ছতার সাথে জনগণের কাছে উপস্থাপন করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। আমরা হয়তো অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে গিয়েছি। মৌলিক সংস্কারের যতটুকু প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে— জুলাই সনদের প্রতিটা দফা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে হবে।'
জুলাই সনদ নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, 'আমরা জুলাই সনদকে কোনো কাগুজে বাঘে পরিণত করতে দেব না। একে সাংবিধানিক ও আইনী স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। 'লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক' অর্ডার করে জুলাই সনদকে কার্যকর করতে হবে।'
সনদের বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'অন্তর্বতী সরকারকেই জুলাই সনদের সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ যেন বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হয়, তা প্রত্যেকটা জনগণকে পাহারাদারের ভূমিকায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।'
এর আগে, দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য-সচিব তাসনিম জারা বলেন যে, এনসিপি এমন একটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে যেখানে অর্থের অভাবে কেউ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন না।
তিনি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হল এমন একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যেখানে প্রতিটি নাগরিকের চিকিৎসার তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষিত থাকবে।' তিনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, 'অর্থনীতি হবে জনকল্যাণমুখী, যা সবার জন্য সম্মানজনক কাজ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করবে। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান দূর করতে আমরা কর কাঠামোর সংস্কার করব।'
আজ দুপুরেই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে আসেন নেতা–কর্মীরা।

পিরোজপুর, খাগড়াছড়ি, শেরপুরসহ কয়েকটি জেলার কর্মী-সমর্থকেরা দলীয় পতাকা ও ব্যানার-ফেস্টুনসহ উপস্থিত হন। এসময় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম-আহ্বায়ক অনিক রায়, যুগ্ম-সদস্যসচিব লুৎফর রহমানকে মঞ্চে দেখা গেছে।
ঢাকার দয়াগঞ্জ থেকে এসেছেন এনসিপি সমর্থক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী আবু জাফর। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আমি একাই এসেছি, দলে কোনো পদবী নেই। নাহিদ ইসলামের বক্তব্য শুনতে এসেছি। এনসিপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসুক এটাই চাই।'

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে গত বছরের ৩ আগস্ট রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাবেশে সরকার পতন ও ফ্যাসিবাদ বিলোপের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছিল। সে দিনটির বর্ষপূর্তিতে আজ রোববার (৩ আগস্ট) একই জায়গায় সমাবেশ করছে এনসিপি।
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিকেল ৪ টায় সমাবেশটি শুরু হবে। সমাবেশ থেকে 'নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার' ঘোষণা করা হবে।
বেলা আড়াইটায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, শহীদ মিনারে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি। ইতিমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে মঞ্চ। মঞ্চের চারপাশে লাগানো ডিজিটাল পর্দায় জুলাইয়ের উপর বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হচ্ছে।
সমাবেশস্থলে এরই মধ্যে কিছু নেতাকর্মীর উপস্থিত হয়েছে। তবে সময়ের সাথে সাথে উপস্থিতি বাড়ছে। এখন পর্যন্ত দলের শীর্ষ কোনো নেতাকে সমাবেশস্থলে দেখা যায় নি।
এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর অঞ্চলের তত্ত্ববধায়ক ও সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) মোস্তাক আহমেদ শিশির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'জুলাইয়ের অসম্পূর্ণ কাজের উপর আমাদের নেতারা কথা বলবেন। সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে বলে আমরা আশা করছি। ঢাকা মহানগর উত্তর থেকে আমাদের ১০ থেকে ১৫ হাজার নেতাকর্মী আসবে।'
সমাবেশ ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
এদিকে, সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সমাবেশস্থল ঘিরে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, সিটিটিসি, কে-নাইন (ডগ স্কোয়াড), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যদেরও দেখা গেছে।

শহীদ মিনার সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন মাঠে ডিএমপি ও র্যাবের পক্ষ থেকে 'কন্ট্রোল রুম' স্থাপন করা হয়েছে।
পুলিশ কন্ট্রোল রুমে দ্বায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা জানান, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপি পুরো এলাকা ড্রোন এবং ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছে।