অপূর্ণ রইল রাজেশ খান্নার শেষ ইচ্ছা: মৃত্যুর পর তার বাসভবন থেকে উদ্ধার হয় ৬৪টি সুটকেস

ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক কিংবদন্তি রাজেশ খান্না, যাকে বলা হয় প্রথম 'সুপারস্টার'। যিনি একসময় লাখো ভক্তর ভালোবাসায় জীবন পার করেছেন, তিনিই জীবনের শেষ অধ্যায়ে কাটিয়েছেন চরম নিঃসঙ্গতায়। আলো ঝলমলে জনপ্রিয়তা, হিট ছবির সাফল্য সবকিছুর বাইরে ছিল এক ভিন্ন রাজেশ খান্না ।
তার জীবনের শেষ দিনগুলোয় ধরা পড়ে সেই অভ্যন্তরীণ বিষণ্নতা, যা পর্দার রোমান্টিক নায়ক কখনো প্রকাশ করেননি।
সুপারস্টারের নিঃসঙ্গ জীবন
গৌতম চিন্তামণির লেখা জীবনীগ্রন্থ 'ডার্ক স্টার: দ্য লোনলিনেস অব বিইং রাজেশ খান্না' থেকে জানা যায়, খ্যাতির আড়ালে রাজেশ খান্নার ব্যক্তিগত জীবন ছিল একান্ত নির্জন। ২০১২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার বাসভবন 'আশীর্বাদ' নামের বাংলো থেকে উদ্ধার হয় ৬৪টি সুটকেস, প্রত্যেকটিই ভর্তি ছিল বিদেশ থেকে আনা উপহারে, প্রিয়জনদের উদ্দেশ্যে এনেও যেগুলো তিনি কোনোদিন কাউকে দিতে পারেননি। এই নিঃশব্দ স্যুটকেসগুলো যেন সাক্ষ্য দেয় এক জীবনের অপ্রকাশিত ভালোবাসা, হারানো সম্পর্ক আর অপূর্ণ ইচ্ছার।

ভালোবাসা, দূরত্ব আর নীরব বোঝাপড়ার সম্পর্ক
১৯৭৩ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিনেত্রী ডিম্পল কাপাড়িয়ার সঙ্গে রাজেশ খান্নার বিয়ে হয়। কিন্তু খুব দ্রুতই সেই সম্পর্কে ফাটল ধরে। খ্যাতির চাপ, ব্যক্তিগত টানাপড়েন আর রাজেশ খান্নার আবেগপ্রবণতা, সব মিলিয়ে সম্পর্ক জটিল হয়ে পড়ে। ৮০'র দশকে তাঁরা আলাদা হয়ে যান, যদিও আইনি বিচ্ছেদ ঘটেনি। শেষ সময়ে, দীর্ঘ অসুস্থতার (যেটি সম্ভবত ক্যান্সার) সঙ্গে লড়াইয়ের সময় ডিম্পলই তাঁর পাশে ছিলেন।

'আশীর্বাদ' যাদুঘর হয়ে উঠল না আর
তাঁর সঙ্গিনী অনিতা আডভানির ভাষ্যমতে, রাজেশ খান্নার জীবনের এক বড় আফসোস ছিল, নিজের প্রিয় বাসভবন 'আশীর্বাদ'কে কখনোই যাদুঘরে রূপ দিতে পারেননি। এই বাড়ি ছিল তাঁর খুবই প্রিয়। ১৫০ কোটি টাকার প্রস্তাব এলেও তিনি সেটি বিক্রি করেননি। এই বাড়ি ছিল তাঁর সৃষ্টির, স্মৃতির আর জীবনের প্রতীক।
কিন্তু সেই স্বপ্নও তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে শেষ হয়ে যায়। 'আশীর্বাদ' পরবর্তীতে ভেঙে ফেলা হয়। পড়ে থাকে শুধু স্মৃতি, কিছু না হওয়া সম্ভাবনা, আর এক নীরব বিষণ্নতা।
অনুবাদ: নাফিসা ইসলাম মেঘা