Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
June 03, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, JUNE 03, 2025
‌স্মৃতিময় পুরোনো বাড়ির কথা

ফিচার

অনুস্কা ব্যানার্জী
30 April, 2024, 04:25 pm
Last modified: 02 May, 2024, 02:33 pm

Related News

  • পাঠ্যবই বদলেই মুছে ফেলা যাবে না ভারতের জটিল ইতিহাস—মুখোমুখি হওয়াটাই প্রয়োজন
  • ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের মতো ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ নতুন কিছু নয়
  • ইউক্রেনকে নিজ দেশের শান্তি আলোচনায় ডাকা হয়নি, ইতিহাসে এমন উদাহরণ অসংখ্য!
  • সূচিকর্ম ভালোবাসতেন বলে বিদ্রুপ পিছু ছাড়ত না, এখন তার হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে নকশিকাঁথা
  • ‘খেলা ছাড়ার পরও বিপিএলের ইতিহাসে আমার নাম থাকবে’

‌স্মৃতিময় পুরোনো বাড়ির কথা

পুরোনো বাড়ির প্রতিটা দেওয়ালের আস্তরণে মিশে থাকে অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য। শুনশান চারিদিক। খুব বড় শব্দ পাওয়া যায় না। অথচ এ বাড়িই একসময় কত জমজমাট ছিল। বসবাস ছিল কোনো পরিবারের। বাড়ির আনাচে-কানাচে সবসময়ই গমগম করত মানুষ। বাড়ির গিন্নি আলতা পায়ে আঁচলে চাবির গোছা নিয়ে এঘর ওঘর করতেন। সামলাতেন হেঁশেল...
অনুস্কা ব্যানার্জী
30 April, 2024, 04:25 pm
Last modified: 02 May, 2024, 02:33 pm
পাল বাড়ি। ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

চিলেকোঠায় চড়ুই পাখির বাসা। সন্ধ্যে নামার মুখে পাখিরা ফেরে পুরোনো বাড়ির চিলেকোঠায়। কিচিরমিচির শব্দে ভরে যায় চারিদিক। পুরোনো বাড়িগুলোর ছাদে উঠলেই খোলা আকাশকে কাছের করে পাওয়া যায়, পকেটে পুরে নিতে ইচ্ছে করে এক মুঠো নীল। আর শীতকাল এলেই পাটি বিছিয়ে মিষ্টি রোদ্দুর পোহানোর পালা। তখন ছাদ জুড়ে পরিবারের সকলের আনাগোনা। যেসব কচিকাচারা বড়োদের বিধিনিষেধে ছাদের সিড়িতে পা ফেলতে ভয় পায়, তাদের জন্যে শীতকাল হয়ে ওঠে ছাড়পত্রের মতন। সেসব বাড়ি এখন মৃতপ্রায়। প্রাণের স্পন্দনটুকুও পাওয়া যায় না। 

পুরোনো বাড়ির প্রতিটা দেওয়ালের আস্তরণে মিশে থাকে অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য। শুনশান চারিদিক। খুব বড় শব্দ পাওয়া যায় না। অথচ এ বাড়িই একসময় কত জমজমাট ছিল। বসবাস ছিল কোনো পরিবারের। বাড়ির আনাচে-কানাচে সবসময়ই গমগম করত মানুষ। বাড়ির গিন্নি আলতা পায়ে আঁচলে চাবির গোছা নিয়ে এঘর ওঘর করতেন। সামলাতেন হেঁশেল। 

আমাদের শহরের পুরোনো বাড়িগুলো কয়েক দশকের পুরোনো ফটো অ্যালবামের মতন। অনেক অনেক দিন পরেও পুরোনো অ্যালবামটা খুলে বসলে যেমনি করে একটা শান্তি কাজ করে, ঠিক তেমনিভাবে পুরোনো বাড়িগুলোও একটা অদ্ভুতরকমের প্রশান্তি দেয়। পুরোনো বাড়িতে কত না গল্প ছড়িয়ে থাকে। সেসব গল্পের মূল চরিত্ররা কতকাল আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে… শুধু থেকে গেছে সেই শখের বাড়িটা। 

মেহেরপুর তখনও জেলা হয়নি, জন্ম নেয়নি বাংলাদেশ। পাকিস্তানেরই জন্ম হয়নি তখন।  সময়টা বিট্রিশ ঔপনিবেশিক শাসনের। মেহেরপুর ছিল নদীয়া জেলার অন্তর্গত একটি মহকুমা। এই নদীয়া জেলার প্রখ্যাত আইনজীবী নলীনাক্ষ ভট্টাচার্য। ১৯১০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে কলকাতা ল কলেজ থেকে আইন বিষয়ে পাশ করেছিলেন নলীনাক্ষ। ১৯১৪ সালে পড়াশুনো শেষ করে নলীনাক্ষ বাবু নিজ পিতৃভূমি নদীয়ার মেহেরপুরে ফিরে এসে আইন ব্যবসা শুরু করলেন। 

কনকপ্রভা। ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

বিদ্যে এবং বুদ্ধির জোরে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অভূতপূর্ব খ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেন এই আইনজীবী। খ্যাতির সাথে সাথে অর্থও আসতে শুরু করে নলীনাক্ষ বাবুর। শৌখিন গোছের মানুষ নলীনাক্ষ ভট্টাচার্য। উপার্জনের টাকা দিয়ে জমি কেনার পাশাপাশি শুরু করলেন শখের বাড়ি বানানোর কাজ। নলীনাক্ষ বাবু ছিলেন প্রচণ্ড রবীন্দ্রভক্ত। তাই রবি ঠাকুরের জোড়াসাঁকো বাড়ির আদলে গড়ে তোলেন তাঁর শখের বাসভবনটি। শুধু তাই নয়, নলীনাক্ষ বাবু তাঁর বাড়িটিতে ঠাকুর বাড়ির অনুকরণে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে তোলেন। সে বাড়ির খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-আশাক, গান বাজনায় স্পষ্ট ছিল ঠাকুর বাড়ির ছাপ। 

মেহেরপুর শহরে এখন পর্যন্ত আইনজীবী নলীনাক্ষ ভট্টাচার্যের তিনখানা বাড়ি সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে। তিনটি বাড়ির ক্ষেত্রেই গ্রিক স্থাপত্যশৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। নলীনাক্ষ বাবুর যে বাড়িটিকে কেউ কেউ পুরাতন পোস্ট অফিস হিসেবে চেনে, সে বাড়িটার বয়েস এখন ৯০ বছর। 

বোস বাড়ির বাগান। ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

নলীনাক্ষ বাবুর আরো দুখানা বাড়ির একটির নাম, 'ল গার্ডেন', অন্যটি 'কনকপ্রভা'। 'ল গার্ডেন' এর বয়েস ১০০ বছরের বেশি, আর ঘিয়ে রঙা 'কনকপ্রভা'র বয়েস ৯০ এর কাছাকাছি তো হবেই। এই বাড়ি দুটি পুরোনোর আদলটাকে ধরে রেখে কিছুটা আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

'ল গার্ডেন' নামের দোতলা বাড়িটির মেঝেতে বসানো হয়েছে টাইলস। ঝুল বারান্দাটির সামনের দিকটাতে কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে। সে সামান্য। নতুনত্বের ছোঁয়ায় সেই সাবেকিয়ানাটা মুছে যায় নি। 

তখন নলীনাক্ষ বাবু কলকাতা ল কলেজের ছাত্র। সেসময় বিপ্লবী সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকার দায়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেন। বিট্রিশ সরকার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর বাড়ির সমস্ত আসবাবপত্র নিলামে তুলেছিল। কলকাতা ল কলেজের ছাত্ররা সম্মিলিতভাবে ঠিক করলেন, বিপ্লবী সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সম্মানে যাবতীয় আসবাবপত্র তারা নিজেরাই কিনে নেবে। যেই কথা, সেই কাজ। নলীনাক্ষ ভট্টাচার্য কিনেছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সেক্রেটারি টেবিল। সে টেবিল এখনো রাখা আছে নলীনাক্ষ ভট্টাচার্যের ল গার্ডেনে। এমনটাই জানাচ্ছিলেন নলীনাক্ষ ভট্টাচার্যের উত্তরাধিকারী অনন্যা ভট্টাচার্য। 

রবি ঠাকুর যেমন শান্তিনিকেতনে একাধিক বাড়ি গড়ে তুলেছিলেন, তার দাদু নলীনাক্ষ ভট্টাচার্যও তেমন মেহেরপুরে ৭/৮ খানা দ্বিতল বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। তবে সবগুলো বাড়ি এখন আর নেই। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়টাতে তার দাদুর বসতবাড়িগুলো লুটপাট করে আগুন দিয়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তার বাবা ও জেঠুরা মিলে বসবাসের উপযুক্ত করে তুলতে পেরেছিলেন এই তিনটি বাড়ি। কিন্তু অর্থাভাবে এই বাড়িটার হৃত গৌরব আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। কথা বলছিলাম অনন্যা ভট্টাচার্যের সাথে। গল্পে গল্পে জানার চেষ্টা করলাম তাদের পুরোনো বাড়ির ইতিহাস। 

ভট্টাচার্য বাড়ির বারান্দায় বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি এক ধরনের ঝাঁপের দেখা পাওয়া গেল। অন্দরমহলের মা বউদের আব্রু রক্ষা করবার জন্যে বারান্দার রেলিং এ এই ধরনের ঝাঁপ ঝুলিয়ে রাখবার ব্যবস্থা। রোদ, বৃষ্টির সময়টাতেও এই ঝাঁপ অন্দরমহলকে সুরক্ষা দেয়। তাই বলে বারান্দায় আলোর কমতি নেই। আলোর কমতি হতে পারে এমন করে বানানো হতো না এসব বাড়ি। বাড়ির নকশা ফোঁটানোর ক্ষেত্রে আলো ঢোকাকে অগ্রাধিকার দিতেন তখনকার বাড়ির কারিগররা। কেননা তখনও পর্যন্ত বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয় নি। এ বাড়ির দুটো তলা মিলিয়ে চারখানা প্রকাণ্ড ঘর। তবে এই পুরোনো বাড়ির একেকটা ঘরের আয়তন এখনকার দিনের অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটের দু তিনটে ঘরের সমান। 

পুরোনো বাড়ির সন্ধানে মেহেরপুর শহরের বোস পাড়ায় গেলাম। সন্ধান মিললো মেহেরপুরের প্রাচীন জমিদারদের বাসভবন বোসবাড়ির। মেহেরপুরের বারাদী থেকে চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত পর্যন্ত ছিল সুরেন্দ্রনাথ বোসের জমিদারি। পাশাপাশি সুরেন্দ্রনাথ বাবু নিয়োজিত ছিলেন আইন পেশাতেও। বর্ধমানের মাহীনগরে ছিল এই জমিদারদের আদিবাড়ি। কোনো কারণে বর্ধমান ছেড়ে নদীয়ার মেহেরপুরে চলে এসেছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বোসের বাপ-ঠাকুরদা। বোস বাড়ি তৈরি করেছিলেন তৎকালীন নদীয়ার জমিদার সুরেন্দ্রনাথ বোস। আর এ বোস বাড়ি তৈরির কাজে সুরেন্দ্রনাথ বাবু তৎকালীন মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পাটনা  ও বিহার থেকে আনিয়েছিলেন মিস্ত্রি। এভাবেই মহাসমারোহে বাড়ি তৈরির আয়োজন শুরু হল। একদিন শেষও হল। এখন সে বোস বাড়ির বয়েস ১২৫ বছরের কিছুটা বেশি। 

বোস বাড়ি। ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

বোস বাড়ির ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর নাম। হ্যাঁ, তবে আর বলছি কী? তখন চলছে বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলন। সময়টা ১৯২৮ সালের ৫ জুন। সেদিন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু মেহেরপুর ইংলিশ হাই স্কুল মাঠে ভাষণ দেন। মেহেরপুরবাসীকে শহরের বড় বাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে বিদেশি পণ্য বর্জনের আহবান জানালেন সুভাষ। সুরেন বোসের ছেলেরা ছিলেন কংগ্রেসের সমর্থক। সেবারে মেহেরপুর এসে নেতাজি উঠলেন মেহেরপুরের জমিদার বোসদের বাড়িতে। এদিকে ঘটে গেল বিপত্তি। সুভাষ বোসের সন্ধান পেয়ে বিট্রিশ পুলিশ হানা দেয় বোস বাড়িতে। ততক্ষণে নেতাজি মেহেরপুর ত্যাগ করেছেন। সুরেন বোসের মেজ ছেলে জমিদার কিরণ কুমার বোস ছিলেন অনেকটা নেতাজির মতন দেখতে। পুলিশ কিরণ কুমার বোসকে সুভাষ বোস সন্দেহে গ্রেপ্তার করে বসে। পরে অবশ্য ভুল ভাঙে। বোস বাড়ির এমন সব দারুণ ইতিহাস জানতে পারলাম এ বাড়ির উত্তরাধিকারী অনিন্দিতা বোস অয়ন্তিকার কাছ থেকে।

বোসবাড়িতে পা রাখতেই মনে হলো, বিমল মিত্রের কোনো উপন্যাসের পটভূমিতে ঢুকে পড়েছি। চোখে পড়লো সিমেন্ট দিয়ে খোদাই করে ইংরেজি হরফে লেখা আছে, 'বসু ভিলা'। রঙের প্রলেপ খোদাই করা অক্ষরগুলোর ওপর। বাড়িটায় যে কয়েক বছরের মধ্যেই রঙ তুলির আঁচড় পড়েছে তা বোঝা যাবে নিমেষেই। তবু সাবেকি ভাবটা আছে। এ বাড়ির যে চেয়ার টেবিলে নেতাজি সুভাষ খেয়েছিলেন, সেটি এখনো যত্নে রাখা। বাড়ির ভেতরকার দোতলার বারান্দায় দাঁড়ালে  ফুলবাগানটা চোখে পড়বে। ফুল বাগানের স্নিগ্ধতা আর সবুজের সমারোহ দেখলে জুড়িয়ে আসে চোখ। কী অদ্ভুত সুন্দর! 

এই বাড়িটিতে একতলায় ৬ খানা ঘর, দোতলায় ৩ খানা আর তেতলায় একটা ঘর। ঘরগুলো মাঝখানে, দুপাশ জুড়ে বিশাল বারান্দা। এ বাড়ির চিলেকোঠা ঘরের ছাদটা গম্বুজ আকৃতির। বাড়িটির স্থাপত্য শৈলীতে নবাবী আমলের ছাপ স্পষ্ট। এদিক-সেদিক দিয়ে উড়তে দেখা গেল পায়রা। বোস বাড়ির ছাদে এ সমস্ত পায়রাদের আনাগোনা। কেউ পোষে না ওদের, আটকে রাখা হয় না খাঁচায়। এমন শান্তির নিবাস দেখে কবুতররা একলাই বাসা বাঁধে এ বাড়ির এদিক-সেদিক। বোসদের বাড়ির ঘরগুলোর ছাদের আড়াবর্গা এসমস্ত পাখিদের এক নিশ্চিন্ত আস্তানা৷ 

ল গার্ডেন। ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

বোসবাড়িতে গিয়ে খড়খড়ির দেখা ও মিললো। সেই পুরোনো আমলের কাঠের জানালা। এই ধরনের জানালাকে বলা হয়ে থাকে খড়খড়ি। একেবারেই আজকালকার জানালার মতন নয়। এ জানালাগুলো কাঠ দিয়ে ভাগ ভাগ করা থাকে, আর ভেতর দিকে থাকে কাঠের কব্জা।  সেটা ধরে টানলেই ভাগ ভাগ করা কাঠগুলো উঠে যায় ওপরের দিকে। ফাঁক হয়ে যায় ভাগ ভাগ করা কাঠগুলো। আর এই ফাঁক দিয়েই দেখা যায় বাইরের সমস্ত কিছু। অন্দরমহলের মেয়েরা এই খড়খড়ি দিয়েই দেখতেন বাইরের সবকিছু। কিন্তু খড়খড়ির বাইরে থেকে দেখা যেত না তাদেরকে। মেহেরপুর শহরে পুরোনো জমিদার পরিবারের বোসবাড়ি এখনো সেই জমিদারি আমলের স্মৃতি বহন করে চলেছে। বোসবাড়ির বদৌলতে এ বাড়ির আশেপাশের এলাকাকে এখনো স্থানীয় মানুষ বোসপাড়া বলেই চেনে। 

এদিকে মেহেরপুরের আরেকটি পুরোনো বাড়ির সন্ধান মিললো 'ল গার্ডেন' এর ঠিক পেছনের জায়গাটিতে। এই বাড়ির বয়েসও ১০০ বছরের বেশি বৈ কম হবে না। কথা বলে জানা গেল এমনটাই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ঠিকাদারি ব্যবসা করে পালবাড়ির নিচতলাটুকু গড়ে তুলেছিলেন মণীন্দ্রনাথ পাল। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাড়ির দোতলা ও তিনতলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। খুব চকচকে অবস্থা নয় এখন। বরং কিছুটা জীর্ণ। বার্ধক্যের ছাপটা স্পষ্ট। তবু পুরোনো এ বাড়িখানা টিকে আছে এখনো। মণীন্দ্রনাথ পালের পরবর্তী দু তিন প্রজন্মের জন্ম-মৃত্যুর এক নীরব সাক্ষী বয়ে চলেছে বাড়িটা। 

ভট্টাচার্য বাড়ি। ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

কীভাবে যাবেন? 

রাজধানী ঢাকা থেকে মেহেরপুর যাওয়ার বাস পেয়ে যাবেন গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে। নামবেন মেহেরপুরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ডে। বাস থেকে নেমে নিতে পারেন রিকশা কিংবা ইজিবাইক। নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ভট্টাচার্য বাড়ি, ল গার্ডেন,  কনকপ্রভা কিংবা পালবাড়ি যেতে চাইলে পুরাতন পোস্ট অফিস যেতে হবে। বর্তমানে ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা। পুরাতন পোস্ট অফিসে নেমে স্থানীয় মানুষজনকে টুকটাক জিজ্ঞাসা করলেই পেয়ে যাবেন এই বাড়িগুলো। আর বোসবাড়ি যেতে হলে নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা নিয়ে চলে যাবেন বোস পাড়া, অক্সফোর্ড স্কুলের সামনে। জিজ্ঞাসা করলে খুঁজে পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না৷ এক্ষেত্রেও ভাড়া প্রায় একই। 

এই পুরোনো বাড়িগুলোতে গিয়ে দেখা গেল, প্রত্যেক বাড়ির ক্ষেত্রেই দুই একজন করে উত্তরাধিকারী রয়েছেন। সংখ্যাটা খুব সীমিতই। আগের প্রজন্মের কেউ সেভাবে বেঁচে নেই। যারা আছেন, তারা বার্ধক্যের ভারে নুয়ে পড়েছেন।  নতুন প্রজন্মের উত্তরাধিকারীরা কেউ চাকরিসূত্রে, কেউ বা লেখাপড়ার প্রয়োজনে বিভিন্ন শহরে থাকেন। ভিটে-মাটির টানে বাড়ির আগলে পড়ে থাকে এক বা দুজন। বছরের উল্লেখযোগ্য ছুটি কিংবা দূর্গা পূজার সময় এইসমস্ত বাড়িতে কিছুটা কোলাহল জমে। আলোর রোশনাই দেখা যায় বাড়িজুড়ে। বাড়ির ছেলেমেয়েরা ফেরে পুরোনো বাড়িটিতে, সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলে সাবেকি উঠোনে। ছুটি ফুরোলেই আবার পুরোনো বাড়িটা ফাঁকা হতে শুরু করে। জমাট বাধে নিস্তব্ধতা।

বোস বাড়ি। ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

ছোট্ট শহর মেহেরপুর। এদিক-সেদিক ছড়িয়ে আছে অগণিত পুরোনো বাড়ি। বাড়িগুলোর রং বিবর্ণ হলেও স্মৃতি জীবন্ত, গল্পেরা রঙিন। শুধু খুঁজে নেবার পালা। শহরের মল্লিক পাড়ায় গেলাম পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের দাদামশাইয়ের বাড়ির খোঁজে। কিন্তু পাওয়া গেল না সেই আমলের কোনো বাড়িঘরের চিহ্ন। কেবল একখানা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়লো। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেল, রঞ্জিত মল্লিকের মাতামহ সতীনাথ মল্লিকের বসতবাড়ি ছিল এই মল্লিক পাড়াতে। কথিত আছে, অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের জন্মও মাতামহের বাড়িতেই। দেশভাগের সময় সতীনাথ মল্লিক এই বসতবাড়ি ফেলে রেখে ভারতে চলে যান। এরপর কালের বিবর্তনে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাড়িটা পোড়া বাড়িতে পরিণত হয়। মল্লিকদের নামানুসারে এই এলাকাকে এখনো বলা হয় মল্লিক পাড়া। মল্লিকরা না থাকলেও মল্লিকদের নামটুকু রয়ে গেছে।

দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে পুরোনো বাড়ি। পুরোনো বাড়ির বদলে তৈরি হচ্ছে আধুনিক অট্টালিকা। এসমস্ত অট্টালিকাতে আধুনিক সুযোগসুবিধা থাকা সত্ত্বেও এই তীব্র গরমে মনে পড়ে যায় সেসব পুরোনো বাড়িঘরের কথা। পুরোনো বাড়িগুলোতে আর যা সুবিধে-অসুবিধে থাকুক, পর্যাপ্ত আলো-হাওয়ার অভাব নেই। চারিদিকে বড় বড় জানালা, দরজা, প্রশস্ত বারান্দা, চারপাশে গাছপালা। লতাগাছগুলো পুরোনো বাড়িকে মায়ের মতন আঁকড়ে বেড়ে ওঠে। এসমস্ত গাছপালা বাড়িগুলোর শোভা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। শুধু শোভা বাড়িয়েই ক্ষ্যান্ত থাকে না, এই গাছগুলোর জন্যেই পুরোনো বাড়িগুলি গরমে থাকে সুশীতল। তাপের আঁচটা গায়ে লাগে না। 

পুরোনো বাড়ির আড়াবর্গা। ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

সাবেকি ধাঁচে তৈরি এসব বাড়িতে সিমেন্টের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হতো চুন সুড়কি। চুনসুড়কির ব্যবহারের কারণে এসমস্ত বাড়ি অতটা উত্তপ্ত হয় না, যতটা হয় এখনকার দিনের বাড়িগুলো।  পুরোনো বাড়িগুলোতে এখনো নিঃশ্বাস নিয়ে দুদণ্ড শান্তি পাওয়া যায়। 

গবেষকরা বলছেন, পুরোনো বাড়িতে আলো-হাওয়া ঢোকার দরুন রোগজীবাণুর সংক্রমণ ঘটে আধুনিক ফ্ল্যাটবাড়ির তুলনায় অনেকটাই কম। বর্তমান পৃথিবীতে যে জৈব ও রাসানয়িক যুদ্ধের মহড়া চলছে, সেসব থেকেও মানুষকে রক্ষা করতে পারবে হাওয়া-বাতাস সমৃদ্ধ এই পুরোনো বাড়িগুলো। বারান্দাসমৃদ্ধ খোলামেলা বাড়িতে হাওয়া বাতাসের কারণে ধোপে টিকতে পারে না অতি ক্ষুদ্র জীবাণুর সংক্রমণ । 

আমাদের দেশের বিভিন্ন শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন হাজারো পুরোনো বাড়ি। সেগুলোর ইতিহাস সমৃদ্ধ, স্থাপত্যশৈলী প্রাচীন। সেই অর্থে পুরোনো বাড়িগুলো আমাদের ঐতিহ্য বটে। বিশ্বের অনেক দেশেই এই সমস্ত পুরোনো বাড়িগুলোকে যথেষ্ট যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের উদ্যোগ সেভাবে দেখা যায় না। অনেক পুরোনো বাড়িই  নগরায়ন আর দখল রীতিতে পুরোপুরি অন্যের হাতে চলে যায়। দখলদারদের সেসব বাড়িতে দখল থাকলেও থাকে না বাড়ির প্রতি মায়া-মমতা। 

সবকিছু বিবেচনায় এনে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে না পারলে মল্লিক বাড়ির মতন করেই পুরোনো বাড়িগুলো হারিয়ে যেতে থাকবে। হারিয়ে যাবে অনেক গল্প, অনেক ইতিহাস।
 

Related Topics

টপ নিউজ

পুরনো বাড়ি / ঐতিহ্য / ইতিহাস / বাড়িঘর

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা, পাবেন জুলাই থেকে
  • সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা অর্থ উপদেষ্টার
  • এখন থেকে বছরে একবারের বেশি ব্যাগেজ রুলসের সুবিধায় স্বর্ণ আনা যাবে না
  • নোবেল পুরস্কারসহ ৯ ধরনের পুরস্কারের আয়ে দিতে হবে না কর
  • যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি প্রস্তাবে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি!
  • যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে, যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

Related News

  • পাঠ্যবই বদলেই মুছে ফেলা যাবে না ভারতের জটিল ইতিহাস—মুখোমুখি হওয়াটাই প্রয়োজন
  • ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের মতো ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ নতুন কিছু নয়
  • ইউক্রেনকে নিজ দেশের শান্তি আলোচনায় ডাকা হয়নি, ইতিহাসে এমন উদাহরণ অসংখ্য!
  • সূচিকর্ম ভালোবাসতেন বলে বিদ্রুপ পিছু ছাড়ত না, এখন তার হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে নকশিকাঁথা
  • ‘খেলা ছাড়ার পরও বিপিএলের ইতিহাসে আমার নাম থাকবে’

Most Read

1
অর্থনীতি

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা, পাবেন জুলাই থেকে

2
অর্থনীতি

সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা অর্থ উপদেষ্টার

3
অর্থনীতি

এখন থেকে বছরে একবারের বেশি ব্যাগেজ রুলসের সুবিধায় স্বর্ণ আনা যাবে না

4
বাংলাদেশ

নোবেল পুরস্কারসহ ৯ ধরনের পুরস্কারের আয়ে দিতে হবে না কর

5
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি প্রস্তাবে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি!

6
অর্থনীতি

যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে, যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net