Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
June 03, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, JUNE 03, 2025
ভালো কাজের হোটেল: দেড় দশকের যাত্রায় যোগ হয়েছে স্কুলসহ আরও জনসেবার পরিসর

ফিচার

সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
25 February, 2024, 12:50 pm
Last modified: 25 February, 2024, 02:23 pm

Related News

  • ১০ সপ্তাহের অবরোধের পর গাজায় 'সামান্য' খাদ্য ঢুকতে দেবে ইসরায়েল
  • রতন, জামাই-বউ, মধুবন: বিভিন্ন জেলার চানাচুর খেতে যেমন
  • নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংকের
  • রোহিঙ্গাদের জন্য ১৭ হাজার টন খাদ্য পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র 
  • মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২৭০০ ছাড়াল, নিখোঁজ ৪২১

ভালো কাজের হোটেল: দেড় দশকের যাত্রায় যোগ হয়েছে স্কুলসহ আরও জনসেবার পরিসর

কমলাপুরে প্রতিদিন আয়োজন করা হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন মানুষের খাবার। সাতরাস্তায় ৩৫০ জনের খাবার, কারওয়ানবাজারে ১৫০ থেকে ২০০ মানুষের খাবার, কড়াইল বস্তিতে প্রায় ১৫০ জন থেকে ২০০ মানুষের খাবার এবং বাসাবোতে আয়োজন করা হয় ১৪০ জন থেকে ১৬০ জনের খাবার। প্রতিদিন চার থেকে ৫টি ব্যাচে খাবার পরিবেশন করা হয়। 
সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
25 February, 2024, 12:50 pm
Last modified: 25 February, 2024, 02:23 pm
ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত

'আমরা কি সবাই ভালো কাজ করি? কে কে করেন, বলেন তো? আমরা কিন্তু প্রতিদিন সবাই একটি করে ভালো কাজ করব' — মাইক্রোফোনে কথাগুলো বলছিলেন একজন স্বেচ্ছাসেবক। তার সামনের ফুটপাতের উপর সারি করে বসে আছেন একদল মানুষ। শীতের রাতে ধুলো গায়ে তারা জড়ো হয়েছেন বাসাবো ফ্লাইওভারের ধারে। তাদের বেশভূষা জানান দিচ্ছিল, তারা কেউই স্বচ্ছল কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যক্তি নন। পারম্পরিক চেনা-পরিচয়ও হয়তো তেমন একটা নেই। কিন্তু উপস্থিত সকলের মধ্যেই একটি মিল রয়েছে। সকলেই একটি করে ভালো কাজ করেছেন। আর সেই ভালো কাজের উপহার নিতে তারা হাজির হয়েছেন 'ভালো কাজের হোটেল'-এ। বিনামূল্যে একবেলা আহার তাদের প্রতিদিনের ভালো কাজের পুরস্কার।

ভালো কাজে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে তৈরি হয়েছে 'ভালো কাজের হোটেল'। এই হোটেল কিন্তু চিরাচরিত হোটেলের মতো নয়। এখানে নেই কোনো চেয়ার-টেবিলের আধিক্য। খোলা আকাশের নিচে গড়ে উঠেছে এ হোটেল। স্রেফ সফেদ দেয়ালের সামনে যেখানে প্রতিদিন পাত পড়ে ১২০০ থেকে ১৩০০ মানুষের।

হোটেলে আসা অতিথিরা কিন্তু নিজ নিজ স্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই কিছুটা দূরত্ব অনুসরণ করে ফুটপাতের উপরে বসে অপেক্ষা করছিলেন খাবারের জন্য। খানিক পরে এলেন একজন স্বেচ্ছাসেবক। সকলের কাছে জানতে চাইলেন তাদের ভালো কাজের সম্পর্কে। পালা করে উত্তর দিচ্ছিলেন হোটেলে আগত অতিথিরা আর সেগুলোকে সাদা কাগজে টুকে রাখছিলেন স্বেচ্ছাসেবক।

ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত

অতিথিদের কাছ থেকে পাওয়া গেল বিচিত্র ভালো কাজের উদাহরণ। কেউ হয়তো ব্যাগ বহন করে দিয়েছেন, আবার কেউ হয়তো রাস্তায় থাকা ময়লা কুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলেছেন। এমনকি রাস্তায় পড়ে যাওয়া হেলমেট ব্যবহারকারীর হাতে তুলে দেয়ার মতো ভালো কাজও অতিথিরা করেছেন।

শুধু কী তাই, কেউ হয়তো অসুস্থ ব্যক্তিকে রাস্তা পার করে দিয়েছেন, বৃদ্ধলোককে সাহায্য করেছেন, অচেনা ব্যক্তিকে পথ চিনিয়ে দিয়েছেন কিংবা গাড়ি ধাক্কা দিয়ে ঠেলে দিয়েছেন। আবার, সবজির দোকানে পানি পৌঁছে দেওয়া অথবা বিনা পয়সায় গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার মতো ভুরি ভুরি উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে ভালো কাজের হোটেলে এলে।

ঢাকার খিলগাঁওয়ের সজিবের কথাই ধরা যাক। ফুটপাতই তার বর্তমান আবাসস্থল। সন্ধ্যার পর ভালো কাজের হোটেলে এসেছে ভালো কাজের ফিরিস্তি নিয়ে। তার সেদিনকার ভালো কাজ – বিনে পয়সায় ব্যাগ বহন করে দেয়া। ব্যাগের মালিক অবশ্য কাজের বিনিময়ে পয়সা সেধেছেন, কিন্তু তা নেয়নি সজিব।

আপাতদৃষ্টিতে কাজগুলোকে সাধারণ মনে হতেই পারে। কিন্তু এই সাধারণ কাজগুলোকে অসাধারণতায় রূপ দিয়েছেন আরিফুর রহমান। তিনি 'ভালো কাজের হোটেল'-এর মূল উদ্যোক্তা।

ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত

আরিফুরের ভালো কাজের যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালে। তবে শুরুতে তিনি একা ছিলেন না। এই উদ্যোগে তাকে সঙ্গ দিয়েছেন আরো ৮-১০ জন বন্ধু। যাদের মধ্যে সিংহভাগ সদস্য এখনো যুক্ত আছেন ভালো কাজের সাথে।

প্রেরণার নাম হুমায়ূন আহমেদ

আরিফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলাম 'ভালো কাজের হোটেল'-এর শুরুর গল্প। উত্তরে উঠে এল হুমায়ূন আহমেদের নাম। তিনি বলতে শুরু করেন, "ছোটবেলায় আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের 'সবুজছায়া' নাটকটি দেখেছিলাম। যেখানে জাহিদ হাসান ভাইয়া অভিনয় করেছিলেন। নাটকে তিনি প্রতিদিন একটি করে ভাল কাজ করতেন এবং হাত নেড়ে মুখ দিয়ে ক্যা-কু-ক্যা-কু আওয়াজ করতেন। তখন সম্ভবত আমি ক্লাস ফোর কিংবা ফাইভে পড়ি। নাটক দেখে আমি চিন্তা করতাম, প্রতিদিন অন্তত একটি করে ভালো কাজ করব। আর আমি করতামও।"

আরিফুরের ভালো কাজ করার নেশা আরো পাকাপোক্ত হয় ২০০৯ সালে। সেসময় আরিফুর সবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নিজের পাশাপাশি বন্ধুদেরও উদ্বুদ্ধ করলেন ভালো কাজ করার জন্য। কিছু শিশুর জন্য চিকিৎসা এবং পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়ে শুরু করেন ভালো কাজের আনুষ্ঠানিকতা। ভালো কাজের হোটেল-এর বীজও সেদিনই বপন হয়ে গিয়েছিল।

ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত

কিন্তু কেবল ভালো কাজের কথা ভাবলেই তো হবে না। এর জন্য প্রয়োজন অর্থ। তাই নিজেরাই হয়ে ওঠেন অর্থের উৎস। ৮ থেকে ১০ জন মিলে প্রতিদিন ১০ টাকা করে স্বচ্ছ স্টিলের ব্যাংকে সংরক্ষণ শুরু করেন। প্রতিদিন ১০ টাকা সংরক্ষণ করে বলে সদস্যরা পরিচিত হন 'ডেইলি টেন মেম্বার' হিসেবে। মাস শেষে একেকজনের কাছে জমা হতো ৩০০ টাকা। সবার ৩০০ টাকা একত্রিত করে বিভিন্ন ভালো কাজ করতেন তখন।

সফরসঙ্গী যখন 'ডেইলি টেন মেম্বার'

'ডেইলি টেন মেম্বার'-এর ধারা ২০০৯ সাল থেকে এখনো চালু রয়েছে। বর্তমানে দলের সদস্যদের চাঁদা এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতাই 'ভালো কাজের হোটেল'-এর মূল চালিকাশক্তি। আরিফুর বলেন, 'আমাদের প্রত্যেকের কাছেই স্বচ্ছ স্টিলের একটি বক্স আছে। যাকে আমরা ব্যাংক বলি। সেই ব্যাংক লক করার সিস্টেমও আছে আবার চাবি দিয়েও খোলা যায়। আমরা সকল সদস্য প্রতিদিন ১০ টাকা করে জমা করি।'

'মাস শেষে যে যার জমানো টাকা বিকাশ কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। অনেকে সরাসরি এসেও দেয়। আমাদের এমন সদস্যও আছে, যারা বলে প্রতি মাসে ৫০০-১০০০ টাকা দেবে। আবার কোনো কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী বলেন, প্রতি মাসে ১০ হাজার বা ২০ হাজার টাকা দেবেন। বর্তমানে আমাদের সদস্যসংখ্যা ২৬০০ জনের বেশি।' 

ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত

ভালো কাজের হোটেলের খাবারের তালিকায় ডিম-খিচুড়ি, ভাত-সবজি-ডিম কিংবা মাছ থাকে। শুক্র এবং শনিবারে অতিথিদের পরিবেশন করা হয় মুরগির বিরিয়ানি।

আরিফুর বলেন, 'ডিম-খিচুড়ি খাওয়ালে আমাদের প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে। ভাত খাওয়ালে দেখা যায়, ৪২ হাজার থেকে ৪৩ হাজার টাকা খরচ হয়। যদি মুরগির বিরিয়ানি খাওয়াই তাহলে ৭৫ হাজার থেকে ৭৬ হাজার টাকা খরচ হয়। আমাদের গড় খরচ হিসেব করলে দেখা যায়, ১২০০ থেকে ১৩০০ মানুষের আয়োজনের জন্য প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫২ হাজার টাকা খরচ পড়ে।' 

ঢাকার পাঁচ জায়গায় ভালো কাজের হোটেল

ভালো কাজের ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালেই চালু হয় 'ভালো কাজের হোটেল'। প্রথমদিকে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে অসহায় মানুষকে এবং শিশুদের বছরে একাধিকবার খাওয়াতেন তারা। ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত এভাবেই চলছিলো সবকিছু। ২০১৯ সালে আরিফুর রহমান এবং তার দল সিদ্ধান্ত নেন, নিয়মিতভাবেই তারা অসহায় মানুষের কাছে খাবারদাবার পৌঁছে দেবেন। আরিফুর বলেন, 'প্রথমে শুরু করলাম সপ্তাহে ১ দিন। কমলাপুরে প্রতি বৃহস্পতিবার করে খাওয়াতাম।'

ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত

এরইমধ্যে ২০২০ সালে শুরু হয় করোনা মহামারি। সে বছরের ২৬শে মার্চ থেকে 'ভালো কাজের হোটেল' প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ কিংবা অসহায় মানুষদের খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। আরিফুর বলেন, 'আমরা প্রথমে কমলাপুরে শুরু করি। কমলাপুর স্টেশনে যেহেতু ভ্রাম্যমাণ মানুষ বেশি থাকে, তাই সেখান থেকে শুরু হয় সবটা। করোনার সময়ে আমাদের যাদের বাইক ছিল, সবার বাইকে ড্রাম বেঁধে বিভিন্ন জায়গায় খাবার পৌঁছাতাম।'

এরপর ধীরে ধীরে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় চালু হয় ভালো কাজের হোটেল-এর স্পট। কমলাপুরের পর ক্রমান্বয়ে মগবাজারের সাতরাস্তা, কারওয়ান বাজার, বনানীর কড়াইল বস্তি এবং বাসাবোতে গড়ে ওঠে ভালো কাজের হোটেল-এর নতুন ঠিকানা। ঢাকার পাশাপাশি বর্তমানে সপ্তাহে একদিন চট্টগ্রামে ভালো কাজের হোটেল-এর কার্যক্রম চালু রয়েছে।

প্রতিদিনই চলে এই আসর

ঢাকার পাঁচটি জায়গায় পাঁচটি ভালো কাজের হোটেল তৈরির উদ্দেশ্যও ভিন্ন ভিন্ন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং সাতরাস্তায় মূলত ভ্রাম্যমাণ মানুষ, মানসিক ভারসাম্যহীন এবং পথশিশুর দেখা পাওয়া যায়। আবার কারওয়ান বাজারে শ্রমিকেরা বেশি আসেন। বনানীর কড়াইল বস্তিতে বস্তির লোকজনের দেখা মেলে আর বাসাবোতে ভ্রাম্যমাণ মানুষই বেশি দেখা যায়।

ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত

প্রতিদিন কমলাপুর এবং বাসাবোতে সন্ধ্যা সাতটায় বসে ভালো কাজের হোটেল-এর আসর। চলে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত। বাকি তিনটি পয়েন্টে দুপুরবেলা খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কারওয়ানবাজারে খাবারের আয়োজন করা হয়। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলে সাতরাস্তার কর্মযজ্ঞ। সবশেষে দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খাবার পৌঁছে দেওয়া হয় বনানী কড়াইল বস্তিতে।

কমলাপুরে প্রতিদিন আয়োজন করা হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন মানুষের খাবার। সাতরাস্তায় ৩৫০ জনের খাবার, কারওয়ানবাজারে ১৫০ থেকে ২০০ মানুষের খাবার, কড়াইল বস্তিতে প্রায় ১৫০ জন থেকে ২০০ মানুষের খাবার এবং বাসাবোতে আয়োজন করা হয় ১৪০ জন থেকে ১৬০ জনের খাবার। প্রতিদিন চার থেকে ৫টি ব্যাচে খাবার পরিবেশন করা হয়। 

ভালো কাজের হোটেল-এ কাজ করেন ৩-৪ জন বাবুর্চি। পাশাপাশি খাবার বহন করে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আরো ৫-৬ জন কাজ করেন এখানে। প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবী শাওন বলেন, 'আমাদের রেজিস্টার্ড ভলান্টিয়ার প্রায় সাড়ে তিনহাজার থেকে ৪ হাজার জন। ঢাকার ভিতরে আমাদের চার-পাঁচশ জন ভলান্টিয়ার আছে। দেখা যায়, যে যার অবসর সময়ে আমাদের সাথে যোগ দেয়।'

মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন হানিফ সংকেত

ভালো কাজের ধারা নিয়ে গত ১৫ বছর ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন আরিফুর রহমান এবং তার দল। তবে এই কয়েক বছরে কি সমস্যার সম্মুখীন হননি আরিফুর? উত্তরে হেসে আরিফুর চলে যান ১৫ বছর আগের স্মৃতিতে। বলেন, "২০০৯ সালে বিষয়টা সহজ ছিলো না। প্রথম দিকে আমার শিক্ষকরাই আমাকে বলতেন, 'তুমি ওখানে কেন যাচ্ছো? এখন তো তোমার সময় না। তুমি এখন পড়ালেখা করবে। পড়ালেখা শেষে চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য করবে। যখন রিটায়ারমেন্টে যাবে, তখন তুমি মানুষের জন্য কিছু করবে।' আমার তখন মনে হতো, আমি যখন রিটায়ারমেন্টের যাবো তখন তো আমি নিজেই হাঁটতে পারবো না। তখন অন্য মানুষদের নিয়ে কী ভাবে হাঁটবো? আমার হাঁটার সময় এখনই, তাহলে আমি অনেককে নিয়ে হাঁটতে পারবো।"

ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত

তবে সেই সংকুল পথে খানিকটা স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন হানিফ সংকেত। ২০১০ সালে তাদের ভালো কাজের মানবিক কার্যক্রম নিয়ে 'ইত্যাদি'তে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিলো। সেই প্রতিবেদনের পর পরিবার এবং সমাজ থেকে যেসব বাধা এসেছিলো, সেগুলো কিছুটা হলেও কমতে থাকে। 

'অনেকেই বলে যে, তোমরা এটা করছো তোমাদের লাভ কোথায়? লাভ বলতে সবাই শুধু টাকাপয়সার হিসেব খোঁজে। কিন্তু সব সুবিধা আপনি টাকা পয়সা দিয়ে বিবেচনা করতে পারবেন না। কিছু লাভ আছে, যেটা আসলে অন্তর থেকেই অনুভব করা যায়। সেটা টাকাপয়সা দিয়ে কখনোই বিচার করা যায় না,'।বলেন আরিফুর।

খাবার খাইয়ে স্বনির্ভরতা!

বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ভালো কাজের হোটেলের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে কিছুটা অন্তরায়। আরিফুরের ভাষ্যে, যে পরিমাণ খাবার আনা হয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পর সেই খাবার পর্যাপ্ত নয়। প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৩০০ মানুষের জন্য আয়োজন করা হলেও অনেকে খাবার না পেয়ে ফেরত চলে যান।

শুভাকাঙ্ক্ষীর সংখ্যা বাড়লে এই সমস্যাও কেটে যাবে বলে আশাবাদী আরিফুর। তার মতে, ভালো কাজের হোটেলের প্রধান উদ্দেশ্য মানুষকে ভালো কাজে ধাবিত করা। আর ভালো কাজের বিনিময়েই 'ভালো কাজের হোটেল' অতিথিরা আহারের জন্য আসে।

ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত

'অনেকে বলে, আপনারা খাবার খাইয়ে মানুষকে স্বনির্ভর করতে পারবেন না। ভালো কাজের হোটেল কিন্তু খাবার খাইয়ে মানুষকে স্বনির্ভর করতে পেরেছে', বলেন আরিফুর। কথা প্রসঙ্গে স্বনির্ভরতার কথা বলতে গিয়ে আরিফুল উল্লেখ করেন একজন রিক্সাচালকের কথা। যাকে অর্থসঞ্চয়ের এক নতুন মাত্রা খুঁজে দিয়েছে ভালো কাজের হোটেল।

আরিফুর বলেন, 'সাতরাস্তায় একজন রিক্সাচালক রিক্সাতেই সবকিছু করেন। সেই রিক্সাচালক রিক্সাতেই ঘুমান, সেখানেই থাকেন। তিনি এখন দুপুরে আমাদের এখানে খাওয়াদাওয়া করেন। বাইরে যদি তিনি ডিম দিয়ে খেতে চান, তাহলে তার ৭০ থেকে ৮০ টাকা খরচ হয়। পেট ভরে খেতে গেলে আরো বেশি লাগে। তিনি আগে প্রতিসপ্তাহে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজারের মতো টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারতেন। এখন আমাদের এখানে খাচ্ছেন আর বাড়িতে তিন-সাড়ে তিনহাজার টাকা বেশি পাঠাতে পারছেন। আমি তো এভাবে একজন মানুষকে স্বনির্ভর করতে পেরেছি।'

শুধু রিক্সাচালকই নন, ভালো কাজের হোটেল-এ যারা আসেন, তারা ভালো কাজ করার সবক নিয়ে যান। রাস্তায় উদ্দেশ্যহীনভাবে কাটানো অনেক মানুষ জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছেন এখানে এসে। ছন্নছাড়া অনেক মানুষ ভালো কাজের বিনিময়ে কাজ পেয়েছেন।

এমনই একজন মানুষের গল্প বলতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবক শাওন বলেন, 'আমাদের এখানে একজন আসতেন, যিনি আসলে রাস্তায় থাকতেন। একদিন তিনি হেঁটে যাওয়ার সময় দেখলেন, রডের দোকানের সামনের রাস্তায় রড পড়ে আছে এবং দোকানের মালিক সেগুলো গাড়িতে উঠাতে পারছে না। সেই লোকটি রডের দোকানের মালিককে গাড়িতে রড উঠাতে সাহায্য করে। পরবর্তী সময়ে দোকান মালিক তার নাম পরিচয় জেনে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয় দোকানে। তিনি কিন্তু একসময় আমাদের ডেইলি টেন মেম্বারও হয়েছিলেন।'

ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত

তাছাড়া যারা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ধারে ভিক্ষা করেন তাদের জন্যও কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করেছে 'ভালো কাজের হোটেল'। তারা যাতে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে, সেজন্য তাদের অনুপ্রাণিত করা হয়।

'ভালো কাজের হোটেল' ছাড়াও ভালো কাজ

'এখনো আমরা আমাদের ডেইলি টেন মেম্বারদের চাঁদায় তিনটা ভালো কাজ করি। অসহায় মানুষের খাওয়াদাওয়া, বাচ্চাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। আমাদের মোট চারটি স্কুল আছে যেখানে ৯১০ জন সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চা বিনামূল্যে পড়াশোনা করছে। এই স্কুলগুলো বাড্ডা, বাসাবো, নন্দীপাড়া এবং মাদারীপুরে অবস্থিত। এটার পাশাপাশি গরীব ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু বা হার্টের রোগে আক্রান্ত শিশুদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থা করি আমরা। এখন পর্যন্ত ৩০০-এর অধিক শিশুকে আমরা চিকিৎসার আওতায় আনতে পেরেছি', বলেন আরিফুর রহমান।

২০২৩ সালে ভালো কাজের হোটেল অর্জন করেছেন 'জয়-বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড'। তাছাড়া বিটিআই-ডেইলিস্টার সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ক্যাটাগরিতেও পুরস্কৃত হয়েছেন তারা।

কার্যক্রমের আওতা আরো বাড়াতে চান আরিফুর। যে মানুষগুলো বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে খাবার খাচ্ছে, তারা যেন ভালো একটা জায়গায় বসে খাবার খেতে পারেন, এমন স্বপ্নই দেখেন আরিফুর।

'কেউ যখন ভালো কাজ করে অন্ততপক্ষে তার দ্বারা কিন্তু দশটা খারাপ কাজ হয় না। আমরা লাখ লাখ মানুষকে খাওয়াবো এই স্বপ্ন দেখি না। আমরা স্বপ্ন দেখি, ছোট এই বাংলাদেশে অনেক ভালো কাজ হবে। পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে মানুষ বলবে, ঐ যে বাংলাদেশ, সেখানে অনেক ভালো কাজ হয়', স্বস্তির হাসি হেসে বলেন ভালো কাজের হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুর রহমান।

Related Topics

টপ নিউজ

ভালো কাজের হোটেল / সমাজ / সহায়তা / সামাজিক সুরক্ষা / খাবার / খাদ্য সহায়তা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা, পাবেন জুলাই থেকে
  • সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা অর্থ উপদেষ্টার
  • যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে, যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
  • নোবেল পুরস্কারসহ ৯ ধরনের পুরস্কারের আয়ে দিতে হবে না কর
  • ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় ৪০০ ইলেকট্রিক বাস যুক্ত করার ঘোষণা
  • এখন থেকে বছরে একবারের বেশি ব্যাগেজ রুলসের সুবিধায় স্বর্ণ আনা যাবে না

Related News

  • ১০ সপ্তাহের অবরোধের পর গাজায় 'সামান্য' খাদ্য ঢুকতে দেবে ইসরায়েল
  • রতন, জামাই-বউ, মধুবন: বিভিন্ন জেলার চানাচুর খেতে যেমন
  • নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংকের
  • রোহিঙ্গাদের জন্য ১৭ হাজার টন খাদ্য পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র 
  • মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২৭০০ ছাড়াল, নিখোঁজ ৪২১

Most Read

1
অর্থনীতি

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা, পাবেন জুলাই থেকে

2
অর্থনীতি

সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা অর্থ উপদেষ্টার

3
অর্থনীতি

যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে, যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

4
বাংলাদেশ

নোবেল পুরস্কারসহ ৯ ধরনের পুরস্কারের আয়ে দিতে হবে না কর

5
বাংলাদেশ

ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় ৪০০ ইলেকট্রিক বাস যুক্ত করার ঘোষণা

6
অর্থনীতি

এখন থেকে বছরে একবারের বেশি ব্যাগেজ রুলসের সুবিধায় স্বর্ণ আনা যাবে না

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net