Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
May 13, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, MAY 13, 2025
সাঁটলিপি-শর্টহ্যান্ড: সহজে চাকরি মেলে! কিন্তু কতদিন আর প্রযুক্তির ধাক্কা সইতে পারবে?

ফিচার

সালেহ শফিক
06 October, 2023, 11:10 am
Last modified: 06 October, 2023, 11:13 am

Related News

  • সরকারি চাকরির ১০-১২তম গ্রেডের নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা রাখা বাধ্যতামূলক হচ্ছে
  • মে মাসে ছুটির পর ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
  • অফিস সময়ে সভার জন্য সম্মানী না নিতে নির্দেশনা উপদেষ্টা ফাওজুলের
  • সরকারি চাকরিতে কোটার প্রয়োগ পর্যালোচনায় কমিটি গঠন
  • সরকারি চাকরিতে কোটার প্রয়োগ পরীক্ষায় কমিটি গঠন

সাঁটলিপি-শর্টহ্যান্ড: সহজে চাকরি মেলে! কিন্তু কতদিন আর প্রযুক্তির ধাক্কা সইতে পারবে?

ইংল্যান্ডে সাঁটলিপির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল ষোল শতকের শেষে। অ্যান আর্ট অব শর্ট, সুইফট অ্যান্ড সিক্রেট রাইটিং বাই ক্যারেক্টার বইয়ে ৫০০টি চিহ্নসহ একটি পদ্ধতি চালু করেছিলেন টিমোথি ব্রাইট। জনপ্রিয় হয়েছিল অবশ্য টমাস শেলটনের শর্টরাইটিং, ১৬২৬ সালে। বিজ্ঞানী আইজাক নিউটনও নিজের নোটবুকে শেলটন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। শেলটনের প্রায় একশ বছর পর ১৭২০ সালে জন বায়রম আধুনিক চেহারার জ্যামিতিক সাঁটলিপি প্রবর্তন করেন। আমাদের দেশে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা পরিদপ্তরে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে আবদেনকারীদের সাঁটলিপি জানা প্রয়োজন হয়। ১০ থেকে ১৬ গ্রেডে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ থাকে।
সালেহ শফিক
06 October, 2023, 11:10 am
Last modified: 06 October, 2023, 11:13 am
প্রতীকী ছবি- সংগৃহীত

যখন সুখবরটা দিতে গেলেন, বাবা তখন ঘরের দাওয়ায় বসে ছিলেন। সুমনদের বাড়ি ঝালকাঠি সদর থানায়। কাঁচা ভিটির টিনের ঘর। চার ভাই আর এক বোন তার। বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালান। সরকারি চাকরি বিষয়ে সুমনের খুব বেশি কিছু জানা ছিল না। এটুকু শুধু জানতেন, ঘুষ ছাড়া সরকারি চাকরি হয় না। আর ঘুষের পরিমাণটা এতই বেশি যে জোগাড় করতে গেলে ভিটে মাটি বন্ধক রাখতে হবে। সুমন তাই সে স্বপ্ন দেখার কথা মনেও আনেনি।

এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় এলেন সুমন চন্দ্র দাশ। ভর্তি হলেন তিতুমীর কলেজে। থাকছিলেন বাড্ডার এক মেসবাড়িতে। টিউশনি করে খরচ চালাতেন। বন্ধু-বান্ধবদের কাছে শুনলেন, সরকারি দপ্তরগুলোয় অনেক রকম চাকরি আছে, তার কোনো কোনোটি ঘুষ ছাড়াও পাওয়া যায়, একটি যেমন সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর। সম্পর্কীয় এক মামা সুমনকে আগারগাঁও তালতলার এক ট্রেনিং সেন্টারের খোঁজ দিলেন যেখানে সাঁটলিপি শেখা যায়।

২০১৬-১৭ সালের কথা বলছিলেন সুমন। তালতলায় গিয়ে দেখলেন সেন্টারের নাম জব ক্রিয়েটর। প্রথম দু চারদিন শখে শখেই গেলেন। জানলেন সাঁটলিপি বা শর্ট হ্যান্ড হলো সংকেত লিপি, এটি লেখার গতি বাড়ায়। তথ্য গোপন রাখতে চাইলেও এটি কাজে লাগানো যায়।

দু চারটি ফ্রি ক্লাস করে সুমন আনন্দ পেয়ে গেলেন। সাঁটলিপি ভাষা নয়, কিছু গুপ্ত প্রতীক। প্রতীকগুলো মূলত আঁচড়। একেকটি আঁচড় একেকটি অক্ষর বা শব্দকে প্রকাশ করে। প্রতীক রপ্ত করার আনন্দে মেতে উঠলেন সুমন। ভর্তি হয়ে গেলেন জব ক্রিয়েটরে। প্রতিদিন ক্লাসের পরেও বাসায় ফিরে আঁচড় চর্চা করতে থাকেন। তিনি নিশ্চিত হলেন, দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এ চাকরিতে ন্যায্যভাবেই নিয়োগ হয়। কলেজে থাকতে ফোর্থ সাবজেক্ট হিসাবে শর্ট হ্যান্ড, সাঁটলিপি বা সাচিবিক বিদ্যার কথা শুনেছিলেন তিনি কিন্তু বোঝার সুযোগ হয়নি, এ বিষয়ের শিক্ষকও ছিল না।  

সুমন ভাবলেন, যতদিন লাগে চর্চা চালিয়ে যাবেন আর একটির পর একটি পরীক্ষা দিয়ে যাবেন। মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা পরিদপ্তরে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে আবদেনকারীদের সাঁটলিপি জানা প্রয়োজন হয়। ১০ থেকে ১৬ গ্রেডে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ থাকে। ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে আবেদনের জন্য স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক সম্মান ডিগ্রি লাগে। অন্য পদগুলোর জন্য এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।

তবে যোগ্যতা থাকলে ও দক্ষতা দেখাতে পারলে পদোন্নতি পেয়ে সাঁটলিপিকারও ব্যক্তিগত বা প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদে উন্নীত হতে পারেন। এ পদগুলো কারিগরি শাখার অন্তর্ভুক্ত।

প্রতি শুক্রবারেই মিষ্টি

সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে পাশ করতে চারটি ধাপে পরীক্ষা দিতে হয়। এমসিকিউ (কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়), রিটেন (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান), সাঁটলিপি ও কম্পিউটার এবং মৌখিক পরীক্ষা। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষার সাঁটলিপিই জানা জরুরী। সাধারণত নিয়োগ বিজ্ঞপিগুলোতে গ্রেড ও গতির কথা লেখা থাকে। ২০২১ সালে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যেমন সাঁটলিপির গতি চাওয়া হয়েছে ইংরেজিতে ৭০ শব্দ এবং বাংলায় ২৫ শব্দ। কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরে গতি চাওয়া হয়েছে ইংরেজিতে ৩০ শব্দ এবং বাংলায় ২৫ শব্দ।   

১৯১৭ সালে লন্ডন রেলওয়ে স্টাফদের শর্টহ্যান্ড ক্লাস/ ছবি- বিবিসি

সুমন চর্চা চালিয়ে যেতে থাকলেন, সেসঙ্গে স্নাতক পর্বের পড়াশোনাও। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা, মোবাইলে সময় দেওয়া ছেড়ে দিলেন সুমন। সেন্টারে সাঁটলিপির পাশাপাশি কম্পিউটার এবং রিটেন পরীক্ষারও প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। স্নাতক পর্বের পড়াশোনা ও টিউশনির পর অবশ্য ক্লান্তি পেয়ে যায় কোনো কোনোদিন। কিন্তু সুমন নাছোড়বান্দা। ভালো কিছু পেতে হলে তো কিছু কষ্ট করতেই হবে।

সেন্টারে তিনি দেখতেন প্রতি শুক্রবারেই মিষ্টি খাওয়ানো হতো। অর্থাৎ কেউ না কেউ চাকরি পাচ্ছে। এসব পদে আবার প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এখানে প্রতিযোগীর সংখ্যাও কম। কারণ ভালো ছাত্ররা বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্যই উঠেপড়ে লেগে থাকে, বছর বছর চেষ্টা চালিয়ে যায়, অনেকে আবার এসব পদের কথা জানেও না। আর সাঁটলিপি শেখা খুবই ধৈর্য ও মনোযোগের ব্যাপার। এতে আঁচড় সংখ্যা ২৪টি। যেমন বাংলা দ, ধ, ড, ঢ এবং ইংরেজি ডি এর জন্য একটাই আঁচড় আবার ক এবং কে, কিউ, সি এর জন্যও একটাই আঁচড়। একইভাবে আমার, আমাদের, আমরা ইত্যাদিও এক আঁচড়ে প্রকাশ করা সম্ভব।

সাঁটলিপিতে তুখোড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক চর্চা। এক মিনিটে ১২ বার ২৪টি আঁচড়ের সবগুলো লিখতে পারলে তাকে তুখোড় ধরা যেতে পারে। তবে সব দপ্তরের পরীক্ষায় এতটা দক্ষতা চাওয়া হয় না। বিচার বিভাগের নিয়োগেই সবচেয়ে বেশি দক্ষতা চাওয়া হয়, মিনিটে ৭০-৭৫ শব্দ।

২০১৮'র শেষ থেকে পরীক্ষায় বসা শুরু করলেন সুমন। ১৬ গ্রেডের পরীক্ষায় যেমন বসেন, ১৪ গ্রেডের পরীক্ষাও দেন। কোনো কোনো সপ্তাহে একাধিক পরীক্ষার প্রবেশপত্রও পাচ্ছিলেন। এক বছরের মাথায় ৫০টি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) পর্যন্ত গিয়েছিলেন ১৫ বার। তিনটি চাকরি তার হয়েছিল। প্রথমটি তথ্য দপ্তরের এক প্রকল্পে। কিন্তু অস্থায়ী বলে বেশিদিন করেননি। পরেরটি মহিলা অধিদপ্তরে। তবে পোস্টিং ছিল লক্ষ্মীপুরে। সেখান থেকে ঝালকাঠি যাওয়া আসা খুব কষ্টের বলে আবার পরীক্ষায় বসেন। শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটরের কাজ পেয়ে গেলেন। আর এ সুখবরটিই তিনি জানিয়েছিলেন বাবাকে। বলেছিলেন, 'বাবা তুমি কি ঠিক আছো? মাথা ঘুরে পড়ে যাবে না তো?' বাবা ভাবছিলেন, কোনো দুঃসংবাদ বুঝিবা। শেষে আর চেপে রাখতে পারেননি সুমন, বলে ফেলেছিলেন, 'বাবা আমি সরকারি চাকরি পেয়ে গেছি!' দরিদ্র কৃষক বাবা হাউমাউ কান্না জুড়ে দিয়েছিলেন।

সুমন বলছিলেন, 'ঢাকায় চাকরি পাওয়ায় আমি ছোট ভাই ও বোনকে ঢাকায় নিয়ে আসতে পেরেছি। বোন ইংরেজিতে অনার্স করছে, ভাই সরকারি চাকরি পাওয়ার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাবার টেনশন দূর করতে পেরেছি। আর বেশি কিছু চাই না।'
 
সুমন এখন পরিচালক

কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন চাকরি প্রত্যাশীরা/ ছবি সৌজন্য- জব ক্রিয়েটর

সুমনের ছোট ভাইয়ের নাম সুজন। জব ক্রিয়েটরে সুজন সাঁটলিপি ও কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। মিনিটে তিনি আটবার ২৪টি আঁচড় লিখতে পারছেন এখন। এটা ১০টিতে ওঠানোর চেষ্টা আছে তাঁর। একবার বিচার বিভাগের পরীক্ষায়ও বসেছিলেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সত্তরটি শব্দ লেখার কথা বলা হয়েছিল, সুজন ৬৫টি লিখতে পেরে বাদ পড়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, 'সাঁটলিপি চর্চা করে যেতে হয় আর মনোযোগও লাগে। পরীক্ষার সময় মাইকে একজন বলে যান আর তা শুনে পরীক্ষার্থীদের আঁচড় কেটে যেতে হয়। একটু মনোযোগ হারালেই পরীক্ষায় পাশ করা যায় না।'

সুজনের চাচাতো ভাই সুবলও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তার সরকারি চাকরির বয়স আছে আর দেড় বছর। তিনি মার্কেটিংয়ে স্নাতকোত্তর হয়েছেন। কিছুকাল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেছেন। কিন্তু ছয় মাস হলো চাকরি বাদ দিয়ে সাঁটলিপির পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলছিলেন, 'পরীক্ষা ঢাকাতেই হয়, নিয়োগও বেশি ঢাকাতে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঢাকার বাইরে নেই বললেই চলে। অথচ এখানে থাকা-খাওয়া বাবদ মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। দুই বছর ধরে পরীক্ষা দিয়ে গেলে কেবল থাকা-খাওয়া বাবদ আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর পরীক্ষার ফি, যাতায়াতসহ আরো আনুষাঙ্গিক খরচ আছে। এরপরও যদি চাকরি না পাই তবে তো ভারী বিপদ।'

সুমন এখন জব ক্রিয়েটরের একজন পরিচালক। সাঁটলিপির ক্লাস সাধারণত নিজেই নিয়ে থাকেন। ইংরেজি, বাংলা, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষক আছেন। সুমন বলছিলেন, 'আমি মনে করি সব মানুষেরই সাঁটলিপি শেখার দরকার। কেবল চাকরির জন্য নয়, মনোযোগ বাড়ানোর জন্যও শিখতে পারেন।'

আরো বলেছিলেন, 'সাঁটলিপির ক্লাসে যত ছাত্র ভর্তি হয় তার ১০ ভাগের ১ ভাগ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে। প্রধান কারণ ধৈর্য রাখতে পারে না। অনেকের মনোযোগেরও ঘাটতি থাকে। আমাদের প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবসায়িক না বলে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বলা ভালো। আমরা মাসে মাত্র ৫০০ টাকা নিয়ে থাকি। এ টাকা দিয়েই শিক্ষার্থী সবগুলো ক্লাসে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। মডেল টেস্টেও অংশ নিতে পারে।'

পদ ছোট, সুখ বড়

একজনের কথা মনে আছে সুমনের। সে রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছিলেন শূন্য হাতে। সুমনের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তাকে একটি টিউশনির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, সেসঙ্গে বিনা বেতনে জব ক্রিয়েটরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগও করে দিয়েছিলেন। ছেলেটি যখন চাকরি পেল এবং নিজ জেলাতেই, তখন সুমনও কেঁদে ফেলেছিলেন। বলছিলেন, 'আমরা কম বেতনের ছোট পদে চাকরি করি কিন্তু এটাই আমাদের কাছে মহার্ঘ্য। আমরা যখন চাকরি পাই পৃথিবীতে আমাদের মতো সুখী আর কেউ হয় না।'

'আমার এক বন্ধুর কথা বলি। একসঙ্গেই থাকতাম আমরা। আমার তখনও চাকরি হয়নি আর বন্ধুটির সরকারি চাকরির বয়স পার হতে চলেছে। প্রায়ই টাকা থাকত না আমাদের কাছে। মেসের মেঝেতে চাদর পেতে ঘুমাতাম। বন্ধুটি একদিন রাতে ঘুমাতে পারছিল না, এপাশ ওপাশ করছিল। একসময় উঠে বসে আমাকে জাগিয়ে তোলে। বলে, আমার হবে না বন্ধু, আমি আর পারছি না। বাড়ি ফিরে যাওয়ারও সুযোগ নেই। কী করব সেখানে গিয়ে, কী জবাব দিব। হা-হুতাশ করেই আমাদের সে রাতটি কেটে গিয়েছিল। পরের দিনটাই কিন্তু সুসংবাদ বয়ে এনেছিল। দুপুর হওয়ার আগে বন্ধুর কাছে খবর পৌঁছেছিল যে তার চাকরি হয়েছে। খবর পেয়ে বন্ধুর তখন পাগল হওয়ার দশা। মেসের সবাইকে নিয়ে গিয়ে পেট ভরে খাইয়েছিল। এত সুখ, এত খুশি কোথায় রাখবে বুঝতে পারছিল না। এ চাকরির বড় কথা, লেগে থাকা। লেগে থাকলে সাঁটলিপিকারের চাকরি হয়।'

এ চাকরি পেয়ে আপনি কতটা উপকৃত হয়েছেন? জিজ্ঞেস করলে সুমন বললেন, 'আমার মাথার ওপর কোনো বোঝা নেই। আমি সুদে টাকা ধার করে, ঘুষ দিয়ে চাকরি নেইনি। সৎভাবে জীবিকা উপার্জনের পথ আমার খোলা। এটাকেই আমি বড় প্রাপ্তি বলে মনে করি।'                                  

আরো জানতে চেয়েছিলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সাঁটলিপির ব্যবহার কতটা আছে? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, 'মেয়র মহোদয়ের বক্তৃতার রেকর্ড রাখা বা প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আলাপ-আলোচনার রেকর্ড রাখার জন্য আমাদের ডাক পড়ে। আধুনিক রেকর্ডিং ডিভাইস থাকা সত্ত্বেও সাঁটলিপিকার রাখা হয়। কারণ বিদ্যুৎ চলে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণে ডিভাইসটি অকেজো হয়ে পড়তে পারে।'

এখন সাঁটলিপির চর্চা বাড়ছে

গণিত ক্লাসে শিক্ষার্থীরা/ ছবি সৌজন্য- জব ক্রিয়েটর

মো. আলমগীর চাকরি করেন বিচার বিভাগে। ১৩তম মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর ১৪তম বারে তার এ চাকরি হয়েছিল। সাধারণত যারা সাঁটলিপি জানেন তারা বারবার পরীক্ষায় অংশ নেন। কারণ কেউ অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে যেতে চান, কেউ চান আরেকটু ভালো গ্রেড, কেউ চান নিজের জেলায় পোস্টেড হতে। আবেদন করেন।

আলমগীর বললেন, 'ঢাকার মিরপুর, তালতলা, নীলক্ষেত, রামপুরায় এখন বেশ কয়েকটি সাঁটলিপি কাম কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। আগে বেশি লোক এ চাকরির কথা জানত না। এখন জেনেছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ভিড়ও বাড়ছে। আর ন্যায্য উপায়ে চাকরি পাওয়া যায় জানলে সবারই আগ্রহ বাড়ে। সরকারি প্রায় সব দপ্তরেই এ পদটি আছে, প্রয়োগ কিন্তু সেরকম নেই। স্টেনোগ্রাফারের পদ সৃষ্টি হয়েছে ব্রিটিশ আমলে, তারপর থেকে এটা বহাল আছে। যদিও কাজের ধরন বদলেছে, নতুন নতুন অনেক ডিভাইস এসেছে কিন্তু সাঁটলিপিকারের পদ বিলুপ্ত হয়নি।'

আলমগীরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আদালতে সাঁটলিপির প্রয়োগ কোথায় আছে, কতটা আছে? তিনি বলেছিলেন, 'মাননীয় বিচারপতি যখন রায় দেন তখন সাঁটলিপিকার দ্রুত তা তুলে নেন। পরে সেটিকে ভাষায় ট্রান্সলেট করেন। তারপর সেটি আবার মাননীয় বিচারপতিকে দেখিয়ে নেওয়া হয়, তিনি সংশোধনী দিলে তা পূর্ণ করে নথিবদ্ধ করা হয়। আদালতে অডিও কিংবা ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইস ব্যবহার করা হয় না।'

সুমন বলেছিলেন, 'কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ে গোপনীয়তা দরকার হলেও সাঁটলিপি ব্যবহার করা হয়। সাঁটলিপিতে অনেক ক্ষেত্রে ফাইলের নামও লিখে রাখা হয়।'

সুমনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সাঁটলিপির ব্যবহার কমছে, এটা কি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে? সুমন উত্তর দিলেন, 'যতদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে ততদিন সাঁটলিপির চর্চা থাকবে। এর প্রয়োগ যে একেবারে নেই তা কিন্তু নয়, আগের আলোচনা থেকেই আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।'  

ইতিহাস

রোমান বাগ্মী সিসেরোর বক্তব্য দ্রুত লিখে রাখার জন্যই প্রথম সাঁটলিপি ব্যবহার করা হয়/ ছবি- বিবিসি

রোমের মার্কাস তিরো (খ্রিস্টপূর্ব ১০৩-৪) ছিলেন ক্রিতদাস। পরে মার্কাস সিসেরো তাকে মুক্ত করেন। সিসেরোর বক্তৃতা লিখে রাখার জন্য তিরো একটি সংক্ষেপন পদ্ধতি আবিস্কার করেছিলেন। তাতে ল্যাটিন শব্দ সংক্ষেপ করার উপায় নির্দেশ করা হয়েছিল।

ইংল্যান্ডে সাঁটলিপির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল ষোল শতকের শেষে। অ্যান আর্ট অব শর্ট, সুইফট অ্যান্ড সিক্রেট রাইটিং বাই ক্যারেক্টার বইয়ে ৫০০টি চিহ্নসহ একটি পদ্ধতি চালু করেছিলেন টিমোথি ব্রাইট। জনপ্রিয় হয়েছিল অবশ্য টমাস শেলটনের শর্টরাইটিং, ১৬২৬ সালে। বিজ্ঞানী আইজাক নিউটনও নিজের নোটবুকে শেলটন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। শেলটনের প্রায় একশ বছর পর ১৭২০ সালে জন বায়রম আধুনিক চেহারার জ্যামিতিক সাঁটলিপি প্রবর্তন করেন।

তবে আগের সব পদ্ধতিকে ছাপিয়ে গিয়েছিল আইজ্যাক পিটম্যান'স শর্টহ্যান্ড, ১৮৩৭ সালে।  গোটা পৃথিবীর ইংরেজ ভাষাভাষী কর্তৃক পিটম্যান'স শর্টহ্যান্ড সাদরে গৃহীত হয়েছিল।

এই হাইব্রিড যুগেও কিন্তু যুক্তরাজ্যের দ্য ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর দ্য ট্রেইনিং অব জার্নালিস্টস শিক্ষানবীশ সাংবাদিকদের সাঁটলিপি শেখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা পাশ করতে প্রতি মিনিটে ১০০ শব্দ লেখার গতি তৈরি করতে হয়। ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অব ভার্বাটিম রিপোর্টার্সের সেক্রেটারি মেরি সোরেন বলছেন, অডিও রেকর্ড শুনে শুনে লেখার চেয়ে শর্টহ্যান্ড ট্রান্সলেশন তিনগুণ সময় বেশি বাঁচায়। আলমগীর বা সুমনেরও এই আশঙ্কা নেই যে দ্রুতই এ পেশার বিলুপ্তি ঘটবে।

 

Related Topics

টপ নিউজ

টাইপিস্ট / সাঁটলিপি / শর্ট হ্যান্ড রাইটিং / সরকারি চাকরি / টাইপরাইটার / টাইপোগ্রাফি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত: ভারত চেয়েছিল শক্তি দেখাতে, কিন্তু প্রকাশ পেল দুর্বলতা
  • লোকসান কাটিয়ে উঠতে ৯০০ কোটি টাকার সরকারি সহায়তা চাইছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল
  • লোডশেডিং কমাতে আরও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল করবে সরকার: জ্বালানি উপদেষ্টা
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ আ.লীগের বিরুদ্ধে সরকার যেসব ব্যবস্থা নিতে পারবে
  • হুন্ডির প্রভাব কমে যাওয়ায় ১০ মাসেই ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড
  • পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র থাকবে না, পুনর্গঠিত হচ্ছে র‌্যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

Related News

  • সরকারি চাকরির ১০-১২তম গ্রেডের নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা রাখা বাধ্যতামূলক হচ্ছে
  • মে মাসে ছুটির পর ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
  • অফিস সময়ে সভার জন্য সম্মানী না নিতে নির্দেশনা উপদেষ্টা ফাওজুলের
  • সরকারি চাকরিতে কোটার প্রয়োগ পর্যালোচনায় কমিটি গঠন
  • সরকারি চাকরিতে কোটার প্রয়োগ পরীক্ষায় কমিটি গঠন

Most Read

1
মতামত

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত: ভারত চেয়েছিল শক্তি দেখাতে, কিন্তু প্রকাশ পেল দুর্বলতা

2
বাংলাদেশ

লোকসান কাটিয়ে উঠতে ৯০০ কোটি টাকার সরকারি সহায়তা চাইছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল

3
বাংলাদেশ

লোডশেডিং কমাতে আরও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল করবে সরকার: জ্বালানি উপদেষ্টা

4
বাংলাদেশ

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ আ.লীগের বিরুদ্ধে সরকার যেসব ব্যবস্থা নিতে পারবে

5
অর্থনীতি

হুন্ডির প্রভাব কমে যাওয়ায় ১০ মাসেই ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড

6
বাংলাদেশ

পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র থাকবে না, পুনর্গঠিত হচ্ছে র‌্যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net