আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন এনবিআরের কর্মকর্তারা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং এনবিআর ভেঙে না দিয়ে, বরং এর কাঠামোগত সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, "আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। এবিষয়ে আলোচনার পথ খোলা আছে।"
ব্যবসায়ী নেতারা সরকার ও এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে চলমান বিরোধ নিস্পত্তিতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রেখেছেন। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদেরও পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আন্দোলনকারী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করবে এই কমিটি। জ্বালানী উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, 'যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা অধ্যাদেশটি সংশোধনে আমাদের ফ্যাসিলিটেট করবে বলে ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন। এজন্য আমরা শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি।'
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল শনিবার সকালেই দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে কনটেইনার ডেলিভারি আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়, যদিও তখনও পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন শুরুই হয়নি। বন্দর ব্যবহারকারীরা সতর্ক করে দিয়েছেন, যদি এই অচলাবস্থা চলতে থাকে, তবে বন্দরের ইয়ার্ডে আটকে থাকা ডেলিভারি না হওয়া কনটেইনারের সংখ্যা—কয়েক দিনের মধ্যেই ৪০ হাজার টিইইউ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনের দ্বিতীয় দিনে অচলাবস্থার মুখে পড়ে বেনাপোল স্থলবন্দর-ও। এতে করে, দুইদিনে ৫০ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
এই অবস্থায়, আজ রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানোনো হয়, 'অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সকল কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সকল শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস (Essential Services) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
এনবিআরের অত্যবশ্যকীয় সেবা ঘোষণার মেয়াদ হবে ৬ মাস
মূল আইনে উল্লেখ নেই, কিন্তু সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করেছে এমন সেবার অত্যাবশ্যকীয় মেয়াদ হবে ৬ মাস। তবে সরকার চাইলে প্রয়োজনে ওই মেয়াদ গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৬ মাস করে বাড়াতে পারবে।
এনবিআরের সেবা যেহেতু মূল আইনে উল্লেখ নেই, ফলে সরকার এই সংস্থার চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করলে তার মেয়াদ হবে ৬ মাস।
আইনে শাস্তি
অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কর্মীরা এ আইন অমান্য করলে অর্থাৎ ধর্মঘট করলে সর্বনিম্ন ৬ মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
পাশাপাশি বেআইনি ধর্মঘটের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ। আর বিভাগীয় ব্যবস্থায় চাকরি থেকে অপসারণেরও দণ্ড রয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধান
এদিকে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স ফাঁকিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
এই কর্মকর্তারা হলেন, এনবিআরের ছয় কর্মকর্তা হলেন আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম; নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার; ঢাকা-৮ কর অঞ্চলের অতিরিক্ত কমিশনার মির্জা আশিক রানা; ঢাকা কর অঞ্চল-১৬ অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা; ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কণ্ডু এবং বিএসএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান।
এই কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন এনবিআরের আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি। এই ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআরে আন্দোলন চলছে। মির্জা আশিক রানা ও শাহরীন সুস্মিতা ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি।
এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ২০-২৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকুরিকালে তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে নিজেরা লাভবান হয়েছেন এবং রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।