এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতিসহ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক

দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ রোববার দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স ফাঁকিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
এই কর্মকর্তারা হলেন, এনবিআরের ছয় কর্মকর্তা হলেন আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম; নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার; ঢাকা-৮ কর অঞ্চলের অতিরিক্ত কমিশনার মির্জা আশিক রানা; ঢাকা কর অঞ্চল-১৬ অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা; ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কণ্ডু এবং বিএসএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান।
এই কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন এনবিআরের আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি। এই ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআরে আন্দোলন চলছে। মির্জা আশিক রানা ও শাহরীন সুস্মিতা ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি।
এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ২০-২৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকুরিকালে তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে নিজেরা লাভবান হয়েছেন এবং রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
চলমান আন্দোলনের সাথে অনুসন্ধানের সম্পর্ক আছে কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে আক্তার হোসেন বলেন, আন্দোলনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে, এ কারণে যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছয়জনের বাইরেও যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে, সেটা দুদক পর্যালোচনা করবে।
আক্তার হোসেন বলেন, কতিপয় অসাধু সদস্য ও কর্মকর্তা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। এনবিআর কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা ঘুষ না পেয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালিককে হয়রানি করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, অনেক করদাতা আগাম কর দেন। আবার কেউ কেউ বেশি কর দেন। নিয়ম হচ্ছে এ কর হিসাব-নিকাশ করার পর বেশি দেওয়া হলে তা করদাতাকে ফেরত দিতে হয়। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, করের বাড়তি টাকা ফেরত পেতে আরো অন্তত অর্ধেক টাকা ঘুষ বা উপহারে খরচ হয়। অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তারা করের টাকা ফেরত দিতে নিজেরাও কামিয়ে নিচ্ছেন মোটা টাকা।