২৩৭ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ পেট্রোবাংলার, ফের জালালাবাদ প্রকল্পের কাজ শুরু করছে শেভরন

চলতি বছরের শুরুতে পেট্রোবাংলা বকেয়া পাওনা সম্পূর্ণ পরিশোধ করায় মার্কিন জ্বালানি জায়ান্ট শেভরন সিলেটের বন্ধ থাকা জালালাবাদ কমপ্রেশন প্রকল্পে পুনরায় কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেছে।
গত ২২ জুন পাঠানো এক চিঠিতে শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার পেট্রোবাংলার পরিচালক এ কে এম মিজানুর রহমানকে জানান, পেমেন্ট-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা এই প্রকল্পের কাজ আবার শুরু করবে কোম্পানিটি।
এই বহুলপ্রতীক্ষিত প্রকল্পটি জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাসের উৎপাদন ৩ লাখ ৫২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) পর্যন্ত বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শেভরন এই প্রকল্পে প্রথমে ৬৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেও ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত বকেয়া পাওনা জমতে থাকায় তারা সহায়তা বন্ধ করে দেয়। ২০২৪ সালের আগস্ট নাগাদ শেভরনের কাছে পেট্রোবাংলার দেনার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৭.৫৫ মিলিয়ন ডলার। রাষ্ট্রায়ত্ত এই জ্বালানি কর্পোরেশন ২০২৫ সালের ২১ এপ্রিল সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করে।
বকেয়া পরিশোধের আগের দিন পেট্রোবাংলা আনুষ্ঠানিকভাবে শেভরনকে প্রকল্পে কাজ শুরু করার অনুরোধ জানায়। জবাবে ওয়াকার অর্থপ্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিনের এই আর্থিক বিরোধের সমাধান হওয়ায় শেভরন উৎসাহিত বোধ করছে।
চিঠিতে বলা হয়, এপ্রিলে পেট্রোবাংলার সমস্ত বকেয়া পাওনা পরিশোধের বিষয়টি বিবেচনা করে শেভরন বাংলাদেশ জালালাবাদ কমপ্রেশন প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এখনও বাকি ২৬ মিলিয়ন ডলার বিলম্ব জরিমানা
সমস্ত বকেয়া বিল পরিশোধ করা হলেও বিল প্রদানে বিলম্বজনিত জরিমানা বাবদ ২৬ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ এখনও বাকি রয়েছে। ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফারড রেট (লাইবর)-এর বিলুপ্তি ও এর পরিবর্তে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) চালুর কারণে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এই জরিমানা আগে পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
শেভরনের সঙ্গে করা মূল উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) অনুযায়ী, এ ধরনের জরিমানা লাইবরের ভিত্তিতে হিসাব করার কথা ছিল। কিন্তু লাইবর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং পিএসসিতে সোফরের কোনো উল্লেখ না থাকায় আইনগতভাবে পেট্রোবাংলার পক্ষে এই অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না।
পেট্রোবাংলার পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, 'বিলম্বজনিত জরিমানার বকেয়া অর্থ পরিশোধের পথ সুগম করতে আমরা গত ২২ জুন উৎপাদন-বণ্টন চুক্তি সংশোধন করেছি। এখন যেহেতু পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাই আমরা জুলাই মাসের মধ্যেই ২৬ মিলিয়ন ডলার জরিমানা পরিশোধ করে দেব।'
শেভরন স্পষ্ট করে দিয়েছে, জালালাবাদ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কেবল জরিমানার অর্থ পরিশোধের ওপরই নির্ভর করছে না, পেট্রোবাংলাকে ভবিষ্যৎ বিলও সময়মতো পরিশোধ করতে হবে।
চিঠিতে ওয়াকার লিখেছেন, 'দয়া করে মনে রাখবেন, জালালাবাদ প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখা নির্ভর করবে পেট্রোবাংলার মাসিক গ্যাস ও কনডেনসেটের বিল সময়মতো পরিশোধ এবং ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিলম্বজনিত জরিমানার সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধের ওপর।'
শেভরনের সঙ্গে ২০৩৮ সাল পর্যন্ত উৎপাদন বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের দৈনিক গড় উৎপাদন ছিল ১৬০.৮২ এমএমসিএফ।
নতুন এই কমপ্রেশন প্রকল্প উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে এবং দেশের চলমান গ্যাস সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পেট্রোবাংলার প্রাক্কলন অনুসারে, প্রকল্পটি শেষ করতে এখন প্রায় তিন বছর সময় লাগবে। শুরুতে এটি ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
মিজানুর রহমান বলেন, 'দেশের গ্যাস পরিস্থিতি বিবেচনায় যত দ্রুত সম্ভব কাজটি শেষ করতে জন্য আমরা শেভরনকে তাগাদা দিচ্ছি।'