রাজস্বের কর্তৃত্ব এনবিআর কর্মকর্তাদের হাতেই থাকা উচিত: অর্থ উপদেষ্টাকে ব্যবসায়ীরা

ব্যবসায়ী নেতারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে পৃথক করার সংস্কার উদ্যোগকে স্পষ্ট সমর্থন জানিয়েছেন। তবে তারা জোর দিয়ে বলেছেন, উভয় বিভাগের নেতৃত্ব প্রশাসন বা অন্য কোনো সার্ভিস থেকে নয়, বরং কাস্টমস ও ট্যাক্স ক্যাডার থেকেই আসতে হবে।
রোববার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে এক বৈঠকে তারা এই অবস্থান তুলে ধরেন। বৈঠকে উপস্থিত দুজন ব্যবসায়ী নেতা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ চেম্বার অভ ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ টিবিএসকে বলেন, 'আমরা এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানের অপসারনের দাবির সঙ্গে একমত নই। কিন্তু এনবিআরের বিষয়গুলো যেহেতু টেকনিক্যাল বিষয়, এজন্য এখানে (নেতৃত্ব বা অফিস-প্রধান) টেকনিক্যাল জ্ঞানসম্পন্ন লোক দরকার।
'এনবিআরের নেতৃত্বে প্রশাসন ক্যাডারের কেউ আসা উচিত নয়, এটা আমরা উপদেষ্টাকে জানিয়েছি।'
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসানও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'এনবিআরের মতো টেকনিক্যাল বিষয়গুলো টেকনিক্যাল জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই পরিচালিত হওয়া উচিত। আমি এই বিষয়টি তুলে ধরেছি।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, নতুন সংস্কার কাঠামোতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করার কারণেই এই সমস্যার উদ্ভব হয়েছে।
এর আগে সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদের নেতৃত্বে এনবিআর সংস্কার কমিটি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। সেখানে নীতি ও বাস্তবায়নকে আলাদা করার পাশাপাশি উভয় বিভাগের নেতৃত্ব এনবিআরের নিজস্ব ক্যাডার থেকে আসার সুপারিশ করা হয়েছিল।
এহসান আরও বলেন, 'যে রিপোর্ট এনবিআর সংস্কার কমিটি দিয়েছে, আমরা সেটি দেখব এবং সেটিকে যথাযথ গুরুত্ব দেব।'
ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, সংস্কার অধ্যাদেশের আগে ও পরে অর্থ উপদেষ্টা এবং এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে, তার মূল কারণ ভুল বোঝাবুঝি।
পারভেজ বলেন, 'এখানে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জড়িত ছিল।'
এহসান বলেন, 'আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বঝতে পেরেছি, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার প্রচুর মিসকমিউনিকেশন ছিল। উপদেষ্টার উচিত ছিল তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা।'
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এনবিআর সংস্কারে আগে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের আন্দোলনকারী—এই দুটি পক্ষ ছিল। সেখানে এখন ব্যবসায়ী নেতারা তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ফলে তাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট যে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে কার্যপরিধির মধ্যে অধ্যাদেশ সংশোধনের বিষয়টি আসেনি বলে জানা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত ওই গেজেটে বিষয়টি না আসায় আন্দোলনকারী এনবিআরের কর্মকর্তারা বিষয়টি ব্যবসায়ী নেতাদের জানিয়েছেন।
পারভেজ বলেন, 'বিষয়বস্তু যা-ই থাকুক, সমস্যার সমাধান হতে হবে।'
অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়েছে এনবিআর
এদিকে গত শনিবার ও রোববার কর্মকর্তাদের কমপ্লিট শাটডাউনের দিনে যেসব কর্মকর্তা কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, তাদের নামের তালিকা চেয়ে অফিসগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে এনবিআর।
একটি কাস্টমস হাউসের কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তবে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা আশঙ্কা করছেন, সব পক্ষ যখন পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছে, তখন এই পদক্ষেপ নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
এহসান প্রশ্ন তুলে বলেন, 'এই চিঠি কি আজকেই দেওয়ার দরকার ছিল?'
অবশ্য একই দিনে এনবিআর চেয়ারম্যান মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে সব ভুলে নিজ নিজ দায়িত্বে মনযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।