তুলা আমদানিতে ২% অগ্রিম আয়কর: চাপে এনবিআর, টেক্সটাইল খাতের জন্য বিকল্প সুবিধার চিন্তা

তুলা আমদানির ওপর সম্প্রতি আরোপ করা ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহারের জন্য টেক্সটাইল মিল মালিকদের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
তবে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ বলছে, কেবল তুলার ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল করা সম্ভব নয়, কারণ এই কর অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও শিল্পের কাঁচামালসহ ১৫০টিরও বেশি আমদানি পণ্যের ওপর প্রযোজ্য।
তাই এই করের প্রভাব কাটাতে টেক্সটাইল খাতকে বিকল্প কোনো সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে এনবিআর।
মাত্র দুদিন আগেই বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এক সংবাদ সম্মেলনে সপ্তাহখানেকের মধ্যে তুলা আমদানি থেকে এই অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানায়। গতকাল (৭ জুলাই) শিল্পের নেতারা তাদের দাবি আদায়ে চাপ বাড়াতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন।
বৈঠকের পর বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, সরকার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই কর প্রত্যাহার করতে পারে। তিনি বলেন, 'নতুন বাজেটে তুলা আমদানির ওপর ২ শতাংশ এআইটি আরোপের বিষয়ে আমরা আমাদের ক্ষোভ উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। এটা যে আমাদের শিল্পের জন্য বোঝা, তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন এবং নোট নিয়েছেন। আশা করছি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।'
টেক্সটাইল খাত নতুন বাজেটের দুটি বড় পরিবর্তনের সমালোচনা করেছে—একটি হলো স্পিনিংয়ের প্রধান কাঁচামাল তুলার ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, অপরটি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কেজিপ্রতি ৩ টাকা থেকে প্রায় ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ টাকা করা।
টিবিএসের সঙ্গে আলাপকালে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, 'যে পরিমাণ কর আরোপ করা হয়েছে, তাতে বছর শেষে আমাদের প্রযোজ্য করের তুলনায় দ্বিগুণ কর হচ্ছে। এতে আমাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল আটকে থাকবে। বর্তমানে বিভিন্ন সংকটের কারণে এমনিতেই আমরা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঘাটতির মধ্যে আছি।'
তিনি আরও বলেন, 'এনবিআর বলছে এই কর বছর শেষে সমন্বয় করা যাবে। কিন্তু এ প্রক্রিয়া অনেক কঠিন। সরকার যেখানে সবকিছু সহজ করতে চাচ্ছে, সেখানে এটিকে কঠিন করার কোনো যুক্তি নেই।'
তিনি বলেন, রাসেল কর নীতির একটি অসংগতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, 'তুলা আমদানিতে কর আছে, কিন্তু ইয়ার্ন আমদানিতে কোনো কর নেই। এতে আমাদের তুলা আমদানিকারকদের খরচ বেড়ে যাবে।'
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে টেক্সটাইল শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম কমানোর সম্ভাবনাসহ বিকল্প নীতি সহায়তার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
'যা-ই হোক, আশা করছি মঙ্গলবারের মধ্যে এটি জানানো হবে,' বলেন তিনি।
রাসেল কর নীতির একটি অসংগতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, 'তুলা আমদানিতে কর আছে, কিন্তু ইয়ার্ন আমদানিতে কোনো কর নেই। এতে আমাদের তুলা আমদানিকারকদের খরচ বেড়ে যাবে।'
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে টেক্সটাইল শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম কমানোর সম্ভাবনাসহ বিকল্প নীতি সহায়তার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
'যা-ই হোক, আশা করছি মঙ্গলবারের মধ্যে এটি জানানো হবে,' বলেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই উভয়সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, 'বিটিএমএর প্রস্তাব অনুযায়ী তুলা আমদানির ওপর থেকে এআইটি প্রত্যাহার হলে অন্যান্য খাতের ব্যবসায়ীরাও একই ধরনের সুবিধা চাইবেন। তাই তুলা আমদানির ওপর থেকে এআইটি প্রত্যাহার না করে বিকল্প কোনো ধরনের পলিসি সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে টেক্সটাইল মিলারদের সুবিধা দেওয়ার বিষয় চিন্তা-ভাবনা করা হবে।'
তবে বিটিএমএ এই নতুন করের তীব্র বিরোধিতা অব্যাহত রেখেছে। গত ১ জুলাই এনবিআর চেয়ারম্যানকে লেখা এক চিঠিতে রাসেল এই পদক্ষেপকে 'আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত' বলে অভিহিত করেন।
এই খাতে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। শিল্পসংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, 'ইনপুট কস্ট' বাড়লে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকরা বিদেশি সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকতে পারেন, যা দেশের অনেক স্পিনিং ও উইভিং মিলকে ঝুঁকিতে ফেলবে।
রাসেল বলেন, 'এসব কর মিলগুলোকে অস্তিত্বের সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি, এর ফলে দেশের বৃহত্তম রপ্তানি খাতের মেরুদণ্ড ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে পারে।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন করের তাৎক্ষণিক প্রভাব হবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতার মূল্যবৃদ্ধি। এর ফলে পোশাক রপ্তানিকারকদের কাছে আমদানি করা সুতা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, যা দেশীয় বস্ত্র উৎপাদনকারীদের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করবে।