সীমানা নির্ধারণী শুনানিতে সিইসির সামনেই দুই পক্ষের হট্টগোল-মারামারি

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের শুনানির প্রথম দিনেই হট্টগোল ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এবং অন্যান্য কমিশনারদের সামনেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের সীমানা নির্ধারণের শুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা এই কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের খসড়া সীমানা প্রকাশের পর এর পক্ষে ও বিপক্ষে একাধিক আবেদন জমা পড়েছিল। শুনানিতে ইসির প্রকাশিত খসড়া সীমানার পক্ষে অবস্থান নেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অন্যদিকে তার বিরোধী পক্ষ বিজয়নগর উপজেলাকে অখণ্ড রাখার দাবিতে খসড়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
শুনানির একপর্যায়ে খসড়া প্রস্তাবের পক্ষ ও বিপক্ষের সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং তাদের মধ্যে প্রথমে বাগবিতণ্ডা ও পরে হাতাহাতি-মারামারি শুরু হয়।
ঘটনার আকস্মিকতায় শুনানিকক্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে উপস্থিত পুলিশ সদস্য ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর ইসি সচিব ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের শুনানি সমাপ্ত ঘোষণা করেন এবং সংশ্লিষ্টদের শুনানিকক্ষ ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ জানান।
ঘটনার পর বিএনপির নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা অভিযোগ করে বলেছেন, তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৩ আসনের প্রার্থী গুণ্ডা নিয়ে এসেছেন। ১৫ বছরে যা হয়নি তা আজ হয়েছে। যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জন্য ১৫ বছর লড়াই করেছি, তারাই আমার গায়ে হাত তুললো। নির্বাচনের আগে সীমানা নিয়ে নিজের দলে এমন পরিস্থিতি হলে নির্বাচনে কি হবে তা অনুমেয়।'
শারীরিক হেনস্তার অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, 'আজকে অলমোস্ট আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তো ঠিক আছে, ধাক্কার বদলে তো ধাক্কা আসবেই। আমাকে মারা হয়েছে, জবাবে আমার লোক তো বসে থাকবে না।'
অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের পক্ষ থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আয়াতউল্লাহ সাংবাদিদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, 'আমরা বিজয়নগরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন অখণ্ড রাখার দাবিতে বক্তব্য দিতে গেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের বিএনপি নেতা রুমিন ফারহানার সমর্থকরা আমার ওপর হামলা চালিয়েছে।'
এ বিষয় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে রুমিন ফারহানা বলেন, 'প্রথমে তারা আমাদেরকে ধাক্কা দেয়। এটা দেখে আমার অনুসারীরা বসে থাকেনি। তাদের ধাক্কার প্রতিবাদে আমার লোকজন ধাক্কা দিয়েছে।'
'এনসিপির প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনে গুণ্ডা-পাণ্ডা নিয়ে এসে ঝামেলা করেছে। আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যা করতে সাহস পায়নি, আজ এনসিপি তা দেখিয়েছে। আমি এ বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যায়বিচার চাই', বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের খসড়া অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন—বুধস্তি, চান্দুরা ও হরষপুর—যুক্ত করে গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সঙ্গে বিজয়নগর উপজেলার বাকি সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
খসড়ার বিপক্ষীয় নেতাদের দাবি, তারা বিজয়নগর উপজেলাকে অখণ্ড রাখতে চান এবং কোনো ইউনিয়ন অন্য আসনের সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষে নন। এই দাবি-আপত্তিকে কেন্দ্র করেই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়, যা পরে হাতাহাতিতে গড়ায়।