২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি
 
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের জন্য রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
আজ বুধবার জুলাইয়ের শুল্ক-কর আদায়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে এনবিআর। এতে দেখা গেছে, জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১১০ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত জুলাইয়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাইতে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৫ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা।
এনবিআরের তথ্য বলছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে এ বছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ২৪.৩৩ শতাংশ।
এনবিআরের তথ্যমতে, এ বছরের জুলাইয়ে ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা।
এছাড়া কাস্টম খাতে ১০ লাখ ১৪৯ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৬০২ কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে ৯ হাজার ২১১ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।
এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত অর্থবছরের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় রাজস্ব আদায় কম হয়েছিল। অন্যদিকে গত জুনে এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে কিছু রাজস্ব আদায় হয়নি, যা জুলাইয়ে এসে আদায় হয়েছে। দুই কারণে গত চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় গত জুলাইয়ে রাজস্ব আদায় ও প্রবৃদ্ধি দুটিই বেশি দেখা গেছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গত বছর আন্দোলনের সময়ে রাজস্ব আদায় কম হয়েছিল। আবার গত জুন মাসে এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনের সময়ে কিছু রাজস্ব ডেফার্ড হয়েছিল, বিশেষ করে আমদানি পর্যায়ে। ওই রাজস্ব জুলাইয়ে আদায় হয়েছে। এই দুই কারণে জুলাইয়ে বেশি রাজস্ব দেখা গেছে এবং ইয়ার অন ইয়ার প্রবৃদ্ধিও বেশি দেখা গেছে।'
এত বেশি প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'যেই লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, তা এনবিআরের বর্তমান সক্ষমতায় আদায় করা কঠিন। ফলে এই ঘাটতি দেখা যাবে। শুধু তাই নয়, এভাবে চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হবে না।'
রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে নতুন নতুন খাত চিহ্নিত করে সেখান থেকে আদায় বাড়ানো ও ফাঁকি কমানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'পুরো রাজস্ব আদায় ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে এবং অটোমেশন করা ছাড়া এত বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।'
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৯৯ লাখ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের আদায়ের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। এনবিআরের ইতিহাসে কোনো অর্থবছরে এত বেশি হারে রাজস্ব আদায় বাড়েনি।
অবশ্য আজ এনবিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে সংস্থাটি 'কার্যকর উদ্যোগ' গ্রহণ করবে।

 
             
 
 
 
 
