Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
May 19, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, MAY 19, 2025
ভাঙারির মুজিবর মহাজন: লোহা-লক্কর থেকে পাথর হয়ে প্লাস্টিকে

ফিচার

সালেহ শফিক
22 August, 2022, 01:00 pm
Last modified: 22 August, 2022, 01:25 pm

Related News

  • বাংলাদেশের বাজারে দীর্ঘমেয়াদে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করল হোলসিম গ্রুপ
  • পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা, গলবে সমুদ্রের পানিতে
  • ‘পরিবেশবান্ধব’ প্লাস্টিক আবিষ্কার, মিশে যাবে সমুদ্রের পানিতে, অবশিষ্ট রাখবে না কোনো মাইক্রোপ্লাস্টিক
  • চট্টগ্রামে প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার; ১ কেজি প্লাস্টিকে ৬ ডিম, ৪ কেজিতে সয়াবিন তেল
  • বাংলাদেশি ক্রেতারা কি প্লাস্টিক ব্যাগ ছাড়াই কেনাকাটার জন্য প্রস্তুত?

ভাঙারির মুজিবর মহাজন: লোহা-লক্কর থেকে পাথর হয়ে প্লাস্টিকে

নব্বই সালকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন মুজিবর রহমান পঞ্চায়েত। ওই সময়েই দেশে নতুন ধারার অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন হয়। পুরোনো অনেক প্রতিষ্ঠানও নতুন করে বিনিয়োগে আসে। আগে যেসব জিনিস বিদেশ থেকে আসত, সেসব ভোগ্যপণ্যের দেশি কারখানা হলো যেমন ফলের রসের (জুসের)। ফলে ২০০০ সালে এসে দেখেন রাস্তার এমাথা-ওমাথায়, অলিগলিতেও প্রচুর জিনিসপত্র (ভাঙারি) গড়াগড়ি যাচ্ছে।
সালেহ শফিক
22 August, 2022, 01:00 pm
Last modified: 22 August, 2022, 01:25 pm
মুজিবর মহাজন। ছবি: রাজীব ধর

'মাটি ছাড়া আর সবই কিনি'- উত্তর শুনে থমকে গেলাম। মিরপুর ৬ নম্বর বাজারে যাওয়ার পথে শাজাহান মিয়ার ভাঙারির গাড়িটি দেখতে পেয়েছিলাম। সেখান থেকে একটা রেকর্ড করা কণ্ঠ তারস্বরে বিরতিহীন চেঁচিয়ে যাচ্ছিল- পুরান লোহা-লক্কর, খাট-পালঙ্ক, বোতল-হাড়ি, কাগজ-খাতা, দড়ি-চুড়ি থাকলে বিক্রি করতে পারেন। পুরান মনিটর, এলইডি টিভি, মোবাইল ফোনও কেনেন শাজাহান মিয়া। এক্ষণে তার ওই উত্তরের যৌক্তিকতা খুজে পেলাম, আর সে বিস্তারিত বললোও, 'একটা ঘর-সংসারে যা কিছু থাকে যেমন কাপড় ঝোলানোর লোহার তার, মগ রাখা আংটা, পা ভাঙ্গা চেয়ার, পানির বোতল, তেলের বোতল, ওষুধের বোতল, পুরান তালা, চাবির গোছা, মশলার প্যাকেট, টিউবলাইটের হোল্ডার, বালতি, জগ, চিরুনি, পাউডার-শ্যাম্পুর টিউব, দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন, সাইকেলের টায়ার-হ্যান্ডেল, মোমদানি-ফুলদানি-সুরমাদানি-সাবানদানি, আয়নার ফ্রেম, পাখির খাঁচা, খেলনা, পানির পাইপ, বাসন রাখার আলমারি, দোলনা-ঝুলনা, রড-বাটখারা ইত্যাদি সব কিনি। কোনো কিছুই আমাগো কাছে ফেলনা নয়। যা দিবেন সব নিমু।'

শাজাহান মিয়া ২০১৩ সাল থেকে ভাঙারির ফেরিওয়ালা। বয়স তেত্রিশ-চৌত্রিশ। সকাল নয়টায় বের হন ভ্যান নিয়ে, মহাজন তাকে চালান দিয়ে দেয়। চালান হলো মাল কেনার টাকা। দুপুর ৩টা বাজলে শাজাহান সংগৃহীত মালপত্র নিয়ে মহাজনের দোকানে গিয়ে ওজন দেয়। চালান ফেরত দিয়ে লাভটা পকেটে ভরে। তিনি কাগজ কেনেন ১৫ টাকা কেজিতে। রডের মতো সলিড লোহা কেনেন ৪০-৪২ টাকা কেজিতে। টিভি-মনিটর কেনেন ঠিকায় (চুক্তিতে)। ইলেকট্রনিক জিনিস  মানে মোবাইল-টিভি দিয়ে আসেন মেকারের দোকানে। আর বাকি সব রকম ভাঙারি মহাজনকে দেন। জিনিস বুঝে কেজি প্রতি ৩-৫ টাকা লাভ পান মহাজনের কাছ থেকে। তাতে করে দিনশেষে ৪০০-৫০০ টাকা থাকে পকেটে। শাজাহান মিয়া বললেন, 'সপ্তাহের সাতদিনই কাজ থাকে আমাগো। আমি ছয় নম্বরের বাইরে বেশি যাই না। এলাকার লোকজন আমাকে ভালোই চেনে। কেউ কেউ তো ফোনেও খবর দেয়। মাসের শেষ চার-পাঁচদিন এই কাজের ভালো মৌসুম। তখন লোকে বাসা বদল করে। অনেক কিছুই বিক্রি করে দিয়ে যায়।'

ছবি: রাজীব ধর

শাজাহান মিয়ার মহাজনের নাম সুজন বেপারী। মিরপুরের শিয়ালবাড়ি মোড়ে তার দোকান। সেখানে গিয়ে দেখি দোকানের সামনেই ওজন মাপার একটা ডিজিটাল যন্ত্র। অ্যানালগ আমলের পাল্লা-বাটখারাও আছে। ছোট্ট দোকানটায় জিনিসপত্র এত বেশি স্তুপ করা যে সুজন মিয়াকে দেখাই যাচ্ছিল না। তিনি তখন ভাত খাচ্ছিলেন। সারাদিনে সময় কমই পান। বারো জন ফেরিওয়ালা তাঁর। মালপত্র গোছাতেই বেশি সময় যায়, এরপর আছে ওজন করা, দর ঠিক করা, টাকা বুঝায়া দেওয়া, খাতায় মাল-পত্রের হিসাব রাখা ইত্যাদি। সুজন মিয়া বললেন, কত আইটেম যে আছে দেশে আমাগো এখানে আসলে দেখতে পাইবেন। এক পানির বোতলই যে কত রকম হয়, ওষুধের বোতলও দেখবেন শত রকমের, তারপর আছে তেলাপোকা-মশা-মাছি মারার ওষুধের বোতল, ভাইরাস (করোনা) আসার পর তো হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতলও অনেক, এরপর আরো দেখেন কোক-পেপসির কত কত বোতল, শুধু বোতলের ব্যবসা করলেও চইলা যাবে। তবে ব্যবসা আগের মতো নাই, কারণ দোকান বাড়ছে অনেক। আমার তো মনে হয় শুধু ঢাকাতেই ৫ হাজারের বেশি ভাঙারির দোকান আছে।

লেখক: সারা দেশে কতগুলো আছে?

শাজাহান:  তা বলতে পারব না। তবে ভাই এটা হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। আমার ফেরিওয়ালা ছিল এমন লোকও এখন ঢাকায় গাড়ি-বাড়ির মালিক। অবৈধ কাজও চলে এ ব্যবসায়। চাঁদাবাজিও আছে। তবে ভালো লোকও আছে।

লেখক: কত পরিমাণ লোক এ ব্যবসায় জড়িত আপনার মনে হয়?

শাজাহান: এক দেড় কোটি তো হবেই । আপনারে বলি ভাই, সারাদেশে এখন ১৭ কোটি মানুষ। অর্ধেক বাদ দেন, থাকল ৮ কোটি। জনপ্রতি যদি এক বোতল পানিও খায় তবে ৮ কোটি বোতল জমে। এই সংখ্যাটি ৭ দিয়ে গুণ করে দেখেন তবে এক সপ্তাহে কতগুলো জমে, ৫০ কোটির বেশি না? এবার ধরেন সব রাস্তায় পইড়া থাকল তাইলে হাঁটতে পারবেন? এ ব্যাবসারে অনেকে নিন্দায়, বলে কী সব হাবিজাবির কাম, কিন্তু আপনে ভাবেন ভাঙারি ওয়ালারা এক সপ্তাহ কাজ বন্ধ রাখলে আপনেরা শহরে কেউ হাঁটতে পারবেন না।

লেখক: তাহলে আপনি বলছেন এটা একটা ভালো কাজ?

শাজাহান: অবশ্যই ভালো কাজ। কল্যাণমূলক কাজ। আমি গ্রামের বাড়ি যাইতে পারি না, আত্মীয় স্বজনরা বলে কী সব ময়লা-সয়লার কাজ করো, লজ্জা পাই। কিন্তু ভিতরে ভিতরে জানি আমাদেরও দরকার আছে সমাজের। আমরা আছি বলেই শহর পরিস্কার থাকে, বৃষ্টিতে পানি আটকায় থাকে না। সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ডিপোতে গিয়ে দেখেন, আমাদের ভ্যানওয়ালারা সেখান থেকেও বোতল-টোতল সংগ্রহ করতেছে।

ছবি: রাজীব ধর

লেখক: এগুলো দিয়ে পরে আপনারা কি করেন?

শাজাহান: মিল-মালিকরা আমাদের থেকে এগুলো কিনে নিয়ে দানা বানায়। সেই দানা দিয়ে আবার নতুন নতুন জিনিসপত্র তৈরি হয়। এখন মানুষ যত জিনিস সংসারে ব্যবহার করে আমার তো মনে হয় তার ৭০ ভাগই প্লাস্টিকের তৈরি। এই যে আরএফএল, বেঙ্গল প্লাস্টিকের কত কত জিনিস আপনারা ব্যবহার করেন এগুলো তো এসবের দানা (রিসাইকেল) থেকেই হয়। শুনছি ভারত আর চীনে এই সব দানা রপ্তানিও হয়।

লেখক: আপনি কত বড় মহাজন মানে কী পরিমাণ ভাঙারির কাজ করেন দিনে?

শাজাহান: আমি দিনে দেড়-দুই টন মাল পাই। আমি আসলে সেরকম বড় কোনো মহাজন না। যদি সেরকম কাউরে চান তো সোজা ১২ নম্বর রোডে যান। মুজিবর মহাজনের দোকান জিগাইলে যে কেউ চিনায়া দিব। গেলেই দেখবেন এলাহী কাণ্ড!

বাড়ি ছেড়েছিলেন জেদ করে

৬৮ সালে মজিবরের বয়স ১২। পটুয়াখালি সদর থানায় তাদের বাড়ি। পঞ্চায়েত (মাতব্বর) বংশের ছেলে। একদিন বাবা তাকে হাটে পাঠায় ধান বিক্রি করতে। ১২ টাকা মণ বিক্রি করে বাসায় ফিরলে বাবা কেমন সন্দেহের চোখে তাকাল। কারণ ধানের দাম মণপ্রতি অন্যরা বিক্রি করেছে ১৪ টাকা। প্রশ্ন উঠল, বাকী টাকা কি মুজিবর  নিজের কাছে রেখে দিয়েছে? মুজিবর  খুব দুঃখ পেল ঘটনায়। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সোজা লঞ্চে চড়ে বসল। ঢাকায় নেমে তেজগাঁও মামার বাসায় গেল। মামা চাকরি করত তিব্বত কোম্পানীতে। ছয় মাস থাকলেন সেখানে কিন্তু বেকার বসে থাকতে ভালো লাগছিল না মজিবরের। মামা কোনো কাজ করতে দিতেও রাজি না। মুজিবর  তাই মহাখালিতে এলাকারই (পটুয়াখালি) আরেক লোকের বাসায় গিয়ে উঠল। ফেরি করে কিছু জিনিসপত্র বিক্রি করতে থাকল। বছরখানেক এভাবে যাওয়ার পর মামা একদিন এসে ধরে নিয়ে গেল নিজের বাসায়। সেখানে কিছুদিন থাকার পরই যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। মামা চলে গেলেন যুদ্ধে। মামি তারপর মুজিবর কে নিয়ে নিজের বাবার বাড়ি বিক্রমপুরের মাওয়ায় চলে গেল। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় মুজিবর থাকল মাওয়ায়। যুদ্ধ শেষ হলে মা এসে হাজির। বলল, চলো এবার বাড়ি। মুজিবর ফিরলেন পটুয়াখালিতে। কিন্তু ততদিনে তার নিজের মতো থাকার অভ্যাস হয়ে গেছে। এবার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে চলে গেলেন চট্টগ্রাম। সেখানে এক বোম্বাইয়ার ছিল রি-রোলিং মিল। তিনি (বোম্বাইয়া) বললেন, গুদাম পাহাড়া দিবা, মাসে শত টাকা পাবা। কাজে লেগে গেলেন মুজিবর। কয়েক মাস যাওয়ার পর মুজিবর বোম্বাইয়াকে বললেন, দাদা আমি যদি আপনারে লোহা যোগান দিই তো আপনি নিবেন? বোম্বাইয়া বললেন, কেন নিব না?

মুজিবর ঢাকা নয়াবাজার এসে মালের খোঁজ নিলেন। মাসে দুই ট্রাক লোহার ভাঙারি পাঠাতেন চট্টগ্রামে বোম্বাইয়া দাদার মিলে। এভাবে কিছুকাল যাওয়ার পরে দাদা বললেন, মুজিবর তোমাকে একটা ভালো ব্যবসা দিতে পারি, পাথরের ব্যবসা, করবা?

ছবি: রাজীব ধর

ঢেঁকি ঘর বসালেন মাজারের কাছে

মুজিবর জানতেন লোহা গলাতে ডলোমাইট পাথর লাগে। তাই রোলিং মিলগুলোতে ডলোমাইটের চাহিদা আছে। তিনি খোঁজ নিয়ে জানলেন এগুলো বেশি আসে ভারত থেকে। মুজিবর ব্যবসাটা ধরে ফেললেন, লোহার ভাঙারির কাজও চালিয়ে গেলেন। এরকম চলল ৭৮ সাল পর্যন্ত। তারপর মিরপুর ১০ নম্বরে নসরু মাদবরের কাছ থেকে একটা জায়গা ভাড়া নিলেন, ভাঙারির দোকান খুললেন। তখন প্লাস্টিকের থালা, বাটি, জগ, মগের প্রচলন ছিল। মুজিবর সেগুলোই ওজন দরে কিনতেন, আবার ওজন দরে বিক্রি করতেন। এর মধ্যে খবর পেলেন সিলেটে একরকমের সাদা পাথর পাওয়া যায় যেগুলো ডলোমাইটের কাজ দেয়। তিনি সেগুলো আনতে থাকলেন আর ভাঙানোর জন্য ঢেঁকিও বসালেন। মিরপুরে শাহ আলী মাজারের কাছে ১০টি ঢেঁকি বসানোর জায়গাও জোগাড় করে ফেললেন। ৩০ জন নারী-পুরুষ তার জন্য পাথর কোটার কাজ করত। মিরপুরে মুজিবরের আস্তানা গাড়ার অন্যতম কারণ, শ্রমিকের সহজলভ্যতা। মিরপুর তখনো পুরোদস্তুর শহর হয়ে ওঠেনি। ধনী মানুষ এখানে তখন গুটিকয়। বেশিরভাগ মানুষই বস্তিবাসী।  

গার্মেন্ট ব্যবসার রমরমা

পাথর, প্লাস্টিকের থালা-বাটি আর ভাঙারি লোহার কারবার করে আয়-রোজগার মন্দ হচ্ছিল না মজিবরের। নব্বই সাল পর্যন্ত তাঁর চলল এরকমই। ততদিনে গার্মেন্টস ব্যবসার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে বহুগুণে। এ ব্যবসায় লোক লাগল অনেক। শহরের নিম্নবিত্তের মানুষেরা তো বটেই গাঁয়ের গরীব মানুষেরও আদর বাড়ল। বিশেষ করে নারীদের। যারা সেলাই ফোঁড়াইয়ের প্রাথমিক কাজও জানত তারাও কাজ পেতে শুরু করল গার্মেন্টগুলোতে। ফলে আগের মতো শ্রমিক আর সহজলভ্য রইল না। মুজিবর ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন পাথর ব্যবসায়। ওই সময়ের অন্য দিকটিও নজর এড়াল না মুজিবরের, দিনে দিনে ওয়ান টাইম বোতল, গ্লাস, থালার ব্যবহার বাড়ছিল। গার্মেন্ট ব্যবসার ওপর নজর রেখে মুজিবর  দেখলেন, মাঝে মাঝে সেখানে বিদেশের ক্রেতারা আসে, তারা কলের পানির বদলে বোতলের পানি খায়, তাদের জন্য খাবার আনাতে হয় বড় বড় হোটেল থেকে। তারা যতদিন থাকে ততদিনে অনেক বোতল, প্যাকেট, বাসনের স্তুপ জমে যায়। সেগুলো গড়াগড়ি খায় রাস্তায়। গার্মেন্টের স্থানীয় মালিকরাও ক্রেতাদের দেখাদেখি নতুন নতুন আচার-ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে থাকল। বাড়তে থাকল ওয়ান টাইম বাসন কোসনের ব্যবহার আর ওয়ান টাইম মানেই প্লাস্টিক।

ওয়ান টাইমের আমল

নব্বই সালকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন মুজিবর রহমান পঞ্চায়েত। ওই সময়েই দেশে নতুন ধারার অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন হয়। পুরোনো অনেক প্রতিষ্ঠানও নতুন করে বিনিয়োগে আসে। আগে যেসব জিনিস বিদেশ থেকে আসত, সেসব ভোগ্যপণ্যের দেশি কারখানা হলো যেমন ফলের রসের (জুসের)। ফলে ২০০০ সালে এসে দেখেন রাস্তার এমাথা-ওমাথায়, অলিগলিতেও প্রচুর জিনিসপত্র (ভাঙারি) গড়াগড়ি যাচ্ছে। ধনীদের কাছে এগুলো ফেলনা, ঘরে রাখা মানে ভিড় বাড়ানো। ওদিকে জিনিসগুলো রাস্তায় পড়ে থেকে পরিবেশও নষ্ট করছে। মুজিবর লোক রাখলেন সেগুলো কুড়ানোর জন্য। তারা দিনভর প্লাস্টিক কুড়িয়ে এনে জমা দিত মুজিবরের নিকট। দিনশেষে তাদেরকে মজুরি দিতেন মুজিবর মহাজন।

ছবি: রাজীব ধর

আরো দশ বছরের মধ্যে দেখলেন ওয়ান টাইমের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। উচ্চবিত্ত ছাড়িয়ে মধ্যবিত্তের যাপিত জীবনেরও অংশ হয়ে উঠল ওয়ান টাইম। সফট ড্রিংকসের বোতল আগে হতো কাঁচের। প্লাস্টিকের বোতল আসার পর মানুষ সেগুলো কোথায় ফেলছে খেয়াল রাখছে না। জুস, এনার্জি ড্রিংকস, মিনারেল ওয়াটারের বেলায়ও একইরকম, খাওয়া শেষ হলে মানুষ খেয়ালও রাখছে না কোথায় ফেলছে। একসময় দেখলেন খাওয়ার তেলও বোতলজাত হয়ে বাজারে আসছে, প্লাস্টিক বোতলে জীবাণুনাশক তরলও এলো বাজারে, প্লাস্টিকের কৌটাতে মাখন, দই বিক্রি হতে থাকল।  হরলিক্স, মালটোভার প্লাস্টিকের বোতলেও সাজল দোকানগুলো। তারপর পেলেন প্রসাধনী (ক্রিম, শ্যাম্পু, গায়ে মাখার তেল) দ্রব্যের কৌটা। এরমধ্যে ধনে, জিরা, হলুদ, মরিচের মতো মশলাও প্যাকেটজাত হয়ে বাজারে শোভা পেতে থাকল। তখন ঘর বাড়িতেও জমতে থাকল প্যাকেট, কৌটা, বোতলের স্তুপ। মুজিবর মহাজন ভ্যান কিনলেন কয়েকটা। ভ্যানওয়ালারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করত। কেজি প্রতি দামও ধরা হলো। ২০১০ সালের দিকে নিম্নবিত্তের লোকও ওয়ান টাইমের বাইরে থেকে আর জীবন যাপন করতে পারছিল না। তাই ব্যবসা খুব জমে উঠল মুজিবর মহাজনের। তবে একইসঙ্গে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও দিনে দিনে বেড়ে গেল।

লেখক: আপনাদের এই ব্যবসায় কোন এলাকার লোক বেশি?

মুজিবর: বিক্রমপুরের লোক বেশি।  পাকিস্তান আমল থেকেই  সিলভারের হাড়িপাতিলের ব্যবসায় তাদের পসার। আপনার মনে আছে কি না, এক সময় গাট্টা বা কটকটির বিনিময়ে ফেরিওয়ালারা বই-খাতা-কাগজ, লোহা-লক্কর কিনত, বিক্রমপুরে এসব ফেরিওয়ালা ছিল অনেক বেশি। এখন ইসলামবাগের বড় বড় ভাঙারি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই বিক্রমপুর মানে মুন্সিগঞ্জের।

লেখক: কয়টি ধাপে এ ব্যবসা পরিচালিত হয়?

মুজিবর: ফেরিওয়ালারা কিছু মাল নিয়ে আসে বাসাবাড়ি থেকে, কিছু মালকে আমরা বলি ময়লার মাল যেগুলো সংগ্রহ করা হয় সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গুদাম থেকে। মাল আনার পরে আমরা সেগুলো বাছাই করি। তারপর সেগুলো ফ্যাক্টরি মালিকদের এজেন্টরা এসে নিয়ে যায়। সব মাল কিন্তু সবাই নেয় না।

ছবি: রাজীব ধর

লেখক: মাল কি অনেক রকম হয়?  সবই কি ভাঙারি নয়?

মুজিবর: হ্যাঁ এক কথায় তো সবই ভাঙারি। তবে কোকের বোতল আর পানির বোতলে ফারাক আছে, আবার মশলার প্যাকেট আর গুড়া দুধের প্যাকেটে ফারাক আছে। এনার্জি ড্রিংক যেগুলো আছে দেখবেন সবগুলোই রঙিন হয়। রঙ ধরেও কিছু বোতল আলাদা করা হয়। সাইজ হিসাবেও আলাদা করি।

লেখক: কোন রকম মালের চাহিদা বেশি?

মুজিবর: মুলাম (মোলায়েম বা সফট) মালের চাহিদা বেশি।

লেখক : কোনগুলি মোলায়েম মাল?

মুজিবর: পানির বোতল, তেলের বোতল, কোক-ফান্টার বোতল হলো মুলাম মাল। এগুলো কাটতে ও গলাতে সুবিধা। এগুলোকে আমরা পানি (ওয়াটার) কালার মালও বলি। আবার দেখেন, হরলিক্স, স্যাভলন বা শ্যাম্পুর বোতল কিন্তু হার্ড মালের মধ্যে ধরি।

লেখক: বোতল বা কৌটাগুলি নিয়ে কি করে ফ্যাক্টরি মালিকেরা?

মুজিবর: ফ্যাক্টরিতে এগুলো নিয়ে প্রথম সাবান সোডা দিয়ে ধোঁয়। তারপর কেটে টুকরো টুকরো করে, তারপর গলায় আর শেষে প্লাস্টিকের দানা বানায়। এরপর এ দানা থেকে আপনি স্যান্ডেল, বালতি, মগ, জগ, টিফিন বক্স, নতুন বোতল, ফুলদানি, কলমদানি ইত্যাদি সবই বানাতে পারবেন।

মুজিবর মহাজনের এখন আর ফেরিওয়ালা নেই বরং বিভিন্ন এলাকায় শাখা দোকান আছে  কয়েকটি। মিরপুর ১০ নম্বরে তাঁর একটি বড়সড় গুদামও আছে। তাঁর এখন আর ভ্যান নেই কিন্তু ট্রাক আছে দুটি। তাঁর বেতন ভুক্তকর্মচারী আছে ১৯ জন। শুধু মালামাল বাছাইয়ের কাজই করে ১০ জন।

ছবি: রাজীব ধর

মাল বাছাই কার্যক্রম সরেজমিন     

রূপনগরের ১২ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় মুজিবর মহাজনের ভাঙারি মালের বিরাট বাছাই কার্যক্রম চলে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। মুলাম মাল, হার্ড মাল, টাইগার, পলি, পিপি নাম দিয়ে বিভিন্ন বস্তায় এগুলো ভাগ করা হয়। মুলাম মালের পরিচয় আগেই দেওয়া হয়েছে,  কিছুটা শক্ত প্লাস্টিকের ভাঙারি হলো হার্ড মাল , টাইগার হলো এনার্জি ড্রিংকের (স্পিড, গিয়ার, টাইগার ইত্যাদি) বোতল,  পিপি হলো পলিপ্রোপালিন (মজবুত প্লাস্টিক) যা দিয়ে বালতি, র‌্যাক, টুল ইত্যাদি তৈরি হয় আর পলি হলো পলিথিন জাতীয়। দুপুর বলে খাবার বিরতি চলছিল। বিরতির পর প্রথম ‍যিনি কাজে এলেন তিনি বৃদ্ধ প্রায়। মুজিবর মহাজন বললেন, মানুষটার সংসার বড়, উপার্জন করার মতো বেশি কেউ নেই। এই বয়সে অন্য কাজও করতে পারে না। তাকে নয় হাজার দিই মাসে।' তারপর আরো এক দুই জন করে আধা ডজন লোক এলো। ময়লার মাল (সিটি কর্পোরেশন ডিপো থেকে সংগ্রহ করা) বাছাই করতে লাগলো তারা। এ স্তুপে এতো বেশি রকমের ভাঙারি থাকে যে সারাদিন বাছাই চলতেই থাকে। ট্যাবলেটের ফয়েলের জন্যও আলাদা বস্তা করা হচ্ছে। এছাড়া টুকরা টাকরা লোহা বা লোহার তার রাখা হচ্ছে আরেকটি বস্তায়।

শেষ কথা

মুজিবর মহাজন রাত ১২টার আগে দোকান বন্ধ করার সুযোগ পান না একদিনও। সপ্তাহের সাতদিনই কাজ চলে, বৃষ্টি বাদলার দিনে অবশ্য আলাদা কথা। বলছিলেন, কাজের চাপে খাওয়ার কথাও ভুলে যাই অনেকদিন। তবু সুখে আছি ভাই। এই ব্যবসায় অসাধু হওয়ার সুযোগ আছে। আমি সে পথে কখনো যাই নাই। যা পাই তাতেই সন্তুষ্ট থাকি। দোয়া করবেন যেন এভাবেই জীবনটা পার করে যেতে পারি।'

Related Topics

টপ নিউজ

ভাঙারি / প্লাস্টিক বোতল / প্লাস্টিক / লোহা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলায় বিমানবন্দরে আটক নায়িকা নুসরাত ফারিয়া
  • যেভাবে পাইলট ছাড়াই ২০০ যাত্রী নিয়ে জার্মানি থেকে স্পেনে গেল এক বিমান
  • শুধু অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী নন এনবিআর কর্মকর্তারা; আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
  • শক্তিশালী হতে ঠিক কতটা প্রোটিন লাগে?
  • ৬ বিমা কোম্পানির আত্মসাৎ ৩,৭৩৬ কোটি টাকা, গ্রাহক সুরক্ষায় নতুন আইনের পরিকল্পনা
  • ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে লোটো-র নতুন কারখানা উদ্বোধন, প্রায় তিনগুণ হবে উৎপাদনক্ষমতা

Related News

  • বাংলাদেশের বাজারে দীর্ঘমেয়াদে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করল হোলসিম গ্রুপ
  • পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা, গলবে সমুদ্রের পানিতে
  • ‘পরিবেশবান্ধব’ প্লাস্টিক আবিষ্কার, মিশে যাবে সমুদ্রের পানিতে, অবশিষ্ট রাখবে না কোনো মাইক্রোপ্লাস্টিক
  • চট্টগ্রামে প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার; ১ কেজি প্লাস্টিকে ৬ ডিম, ৪ কেজিতে সয়াবিন তেল
  • বাংলাদেশি ক্রেতারা কি প্লাস্টিক ব্যাগ ছাড়াই কেনাকাটার জন্য প্রস্তুত?

Most Read

1
বাংলাদেশ

‘হত্যাচেষ্টা’ মামলায় বিমানবন্দরে আটক নায়িকা নুসরাত ফারিয়া

2
আন্তর্জাতিক

যেভাবে পাইলট ছাড়াই ২০০ যাত্রী নিয়ে জার্মানি থেকে স্পেনে গেল এক বিমান

3
বাংলাদেশ

শুধু অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী নন এনবিআর কর্মকর্তারা; আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

4
আন্তর্জাতিক

শক্তিশালী হতে ঠিক কতটা প্রোটিন লাগে?

5
অর্থনীতি

৬ বিমা কোম্পানির আত্মসাৎ ৩,৭৩৬ কোটি টাকা, গ্রাহক সুরক্ষায় নতুন আইনের পরিকল্পনা

6
অর্থনীতি

১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে লোটো-র নতুন কারখানা উদ্বোধন, প্রায় তিনগুণ হবে উৎপাদনক্ষমতা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net